• করোনা ভাইরাস নিউজ

    করোনায়: এককাপ চায়ের গল্প—– ফারজানা মৃদুলা

      প্রতিনিধি ৪ জুলাই ২০২০ , ৪:৫১:৩৭ অনলাইন সংস্করণ

    কথা বললেই যে মুখে হাসি লেগে থাকে আর যে মানুষটি কঠিনসময়েও এগিয়ে আসে মানবিক কারনে যিনি নিজেকে মানবকল্যানে নিয়োজিত করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন একটু বুঝতে শেখার পর থেকে, আজ করোনাকালে তার স্বার্থহীন উদ্দোগের কারনে গর্বের সাথে বলা যায় সেই নামটি আসমাউল হাসনা খান সাহসী নারী। পেশায় তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা। সিলেট নগরে টেইলার্স ও ফেব্রিক্সের ব্যবসা রয়েছে তার। জীবনসঙ্গী ও একজন পোশাক ব্যবসায়ী। মহামারীর সংক্রমণ ঠেকাতে অঘোষিত লকডাউনের কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পর ঘরে বসে যেন মনটা কেমন উদাসীন থাকতো, প্রতিনিয়ত ভাবতেন এই সংকটময় মূহুর্তে মানুষের জন্য কিছু একটা করতেই হবে তারপর যেই ভাবনা তেমনি কাজ শুরু করে দিলেন।

    সিলেটে রাতে জরুরি সেবাদানকারীদের সেবায় এক চমৎকার ভিন্নধর্মী আয়োজন করেন তিনি।জরুরি সেবাদানকারীদের বিনামূল্যে চা-খাওয়ান পুলিশ, সংবাদকর্মী, নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী তাদের কথা ভেবে এই রাত্রী কালীল ফ্রি চা সেবা দেওয়া শুরু করলেন একেবারেই নিজ উদ্যোগে নিজ খরচে । পাছে লোকে বহু কটুক্তি করেছে এমন কি এই ফ্রি চা সেবা বন্ধ করাতেও নানা পদক্ষেপে গিয়েছিল অনেকেই কিন্তু দমাতে পারেনি এই সাহসী নারীকে।
    এই যাত্রা শুরু করেছিলেন ২৫শে মার্চ থেকে।
    শহরের প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকার সিলেট প্লাজা মার্কেটের সামনে প্রতি রাতে টুল নিয়ে বসে এই সেবা দিয়ে আসছেন নিরলসভাবে । প্রতিরাতে প্রায় ২ শতাধিক মানুষ হাছনা খানের কাছ থেকে ফ্রি চা-পানি পান করেন। এমন সাহসী ভূমিকার ঘটনা সবার দৃষ্টি কেড়েছে তার এই মানবিক উদ্যোগ। সবরকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এই সেবা দেন আসমা । এক জনের মাধ্যমে যাতে রোগ না ছড়ায় এজন্য তিনি ওয়ানটাইম গ্লাস দিয়ে চা-খাওয়ান।আর যদি কেউ মাক্স পরিধান না করেন তাকে এই ফ্রি চা সেবা দেন না। এবং তিনি নিজেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

    বাসায় চা তৈরি করে ফ্লাক্সে করে নিয়ে আসেন । এক ফ্লাক্স শেষ হলে বাসা থেকে আসে আরেক ফ্লাক্স ভর্তি চা। এ মহৎ কাজে তাকে সহায়তা করেন সন্তান,ছোট ভাই এবং যার কথা না বললেই নয় বরাবরের মত তার জীবনসঙ্গী যিনি কিনা তার কাজের প্রেরনা দিয়ে তাকে সাহস যোগান সবসময়।

    দুই সন্তানের সফল জননী হাছনা
    ২০১৭ সালে সিলেট বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে সিলেট জেলায় সেরা রাঁধুনির পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
    এই মানবিকতার নারী একটু থমকে গেলেই যেনো পথ চলতে নিজেকে অনুপ্রানিত করে আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের সেই গানের লাইন গুলো-

    ।জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা।
    জাগো স্বাহা সীমান্তে রক্ত-টিকা।।
    দিকে দিকে মেলি’ তব লেলিহান রসনা,
    আসমা উল হাসনার এক কাপ পুদিনা আর আদার ধোঁয়া উঠা চায়ের গল্পে তার আত্মতৃপ্তি ভরে আছে মনের পাতা জুড়ে।
    লেখক: কলামিস্ট

    আরও খবর

    Sponsered content