• করোনা ভাইরাস নিউজ

    করোনায়ঃঃ দেশে চলছে সিনেমা নাকি ছিঃনেমা শ্যাুটিং? ফারজানা মৃদুলা

      প্রতিনিধি ৩ মে ২০২০ , ১১:৩৩:৫৯ অনলাইন সংস্করণ

    ফারজানা মৃদুলাঃঃ চলছে করোনাভাইরাস এর কারণে জনজীবনে স্থবিরতা।জেলায় জেলায় লকডাউন করে চলছে মহামারী ঠেকানোর চেষ্টা।কিন্তু এতো চেষ্টা বৃথা হয়ে যায় যখন সাস্থ্যবিধি না মানে সকলে।বিভিন্ন মাধ্যমে জণস্বার্থে বারবার বলা হচ্ছে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন,বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা, ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন আরো অনেক কিছু।এই সব কিছুই বলা হচ্ছে আমাদের সকলের ভালোর জন্যে।যাতেকরে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কাটিয়ে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারি।

    প্রতিদিনই বেড়েই চলছে করোনার ভয়াবহতা।মৃত্যুর মিছিল যেনো থেমে নেই।

    এই পরিস্থিতিতে অসহায়দের মাঝে সহযোগিতার হাত প্রসারিত হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু ত্রাণ নিতে আসা গ্রহীতারা সামাজিক দূরত্ব মানলেও মানছেন না ত্রাণ বিতরণকারী সকল নেতারা। তারা গ্রহীতাদের জন্য তিনফুট দূরত্বে বৃত্ত একে একেবারে নিয়ম মেনে দিলেও নিজেরা উল্টো বিতরণ করছেন শরীর ঘেষাঘেষি করে।হয়ত তাদের ধারনা করোনা তাদের মাধ্যমে ছড়ানোর কোন কারনই নেই।হয়তো বা তারা নিজেদের করোনারা চেয়েও শক্তিশালী ভাবেন !

    রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো গ্রহীতাদের বৃত্তে আটকিয়ে রাখলেও তাদের নিজেদের আটকাতে পারছে না কোন নিয়মের বৃত্তে। তারাই আবার বড় বড় বুলি দিয়ে গ্রহীতাদের সচেতন করে বলছে শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখুন আরো কত নির্দেশনা।

    হায়রে নিয়ম! তুমি কি কেবল দরিদ্র কিংবা অসহায় মানুষদের জন্য তৈরী?
    এ প্রশ্নের উত্তর আজ আকাশের ঠিকানায় চিরকুট লিখে পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

    করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করুন। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যায়,যখন দাতারা একে অপরের শরীর ঘেষে ত্রাণ তুলে দেয়,
    যাতে ফটোসেশন কালে একটুও কাটা না পড়ে নিজেদের চেহারাখানা!

    নিয়ম শুধু গরীবের জন্য, বড় লোকের কোন নিয়ম নাই।এটা কোন ধরনের বিধান?
    তবে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মানবজাতি কবিতায় কেন বলেছিলেন জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে,
    সে জাতির নাম মানবজাতি;
    এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিল
    একই রবি শশী মোদের সাথী।

    কবে শেষ হবে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ?

    ব্যাথিত হই যখন দেখি মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা কেউ কেউ সামাজিক দূরত্ব বিধি মানছেন না।
    সামাজিক দূরত্ব না মেনে কিছু মন্ত্রী এমপি,রাজনৈতিক নেতা,জনপ্রতিনিধিরাও ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠছে। এমন কি কৃষকের কষ্টের বোনা ধানগুলো কাঁচা কেটে নিচ্ছেন ইচ্ছে স্বাধীন ভাবে।কেউ স্যাুট, টাই, সু, আবার দামী শাড়ীর পসরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। কে জানে হয়ত টাই স্যাুট বা বেনারসীর ধার ঘেষতে ভয় পায় করোনাভাইরাস।
    যেনো সম্মানীয় এই মানুষ গুলোর এই মূহুর্ত গুলো ক্যামেরাবন্দী না হলে জীবটাই বৃথা।

    মাননীয় সম্মানীয় রা আপনাদের ফটোসেশন অসহায় এই নিরীহ কৃষকদের উপকারের নামে উপহাস কি করা হয়ে যাচ্ছে না?
    একটু ভেবে দেখবেন দয়া করে। ইতিহাসে কেউ কি এমন দেখেছেন ধান কাটার দৃশ্য? নিঃসন্দেহে বলা যায় এটা নজিরবিহীন ঘটনা আপনারা বাহ্ বাহ্ পাওয়ার আশায় কি সিনেমার শ্যুটিং শুরু করে দিলেন?

    কৃষি নির্ভর আমাদের এই সোনার বাংলা দেশ। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বারবার কৃষির উন্নয়নে নানা নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।যাতে করে এই মহামারিতে আমাদের খাদ্য সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হয়। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাবের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, এ নিয়ে সকলের উদ্দ্যেশে সতর্কতা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু সূযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আহবান জানান কৃষদের ঘরে ফসল তুলতে সহযোগিতা করতে
    তখন ছাত্রলীগ কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ার জন্য বহু প্রশংসা ও পেয়েছেন ছাত্রলীগ।অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার দাবীদার তারা।এছাড়াও কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছেন দলমত নির্বিশেষে অনেকেই।তাদের সকলের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

    কিন্তু হঠাৎ সাইক্লোন হয়ে সমুদ্র বন্দরের বিপদ সংকেতের মত ৯ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত হয়ে অনেকেই নাটকীয়তায় লেগে গেছে। অবশ্য এ নাটকিয়তায় মোটেও পিছিয়ে নেই কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ও!

    করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাদেশে যখন শ্রমিক সংকট তখন ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারাকর্মীরা কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিষয়টি অনেক সুখবর প্রশংসনীয় বটে। তবে কিছু সংখ্যকরা কি আসলেই ধান কাটারা জন্য মাঠে নেমেছে না ফটোসেশনের জন্য এই উত্তর আমাদের জানা নেই।

    এমন লোকদেখানোর সেবা বন্ধ করে ঘরে কোয়ারান্টাইন পালন করুন আর শিক্ষনীয় কিছু বই পড়ে নিজেদের বিবেক টাকে জাগ্রত করুন।
    ইনশাআল্লাহ এই মহামারীর ভয়াবহতা কেটে যাবে আসবে সুদিন এই আশা আজ সারা পৃথিবীর মানুষের।
    লেখকঃ কলামিস্ট

    আরও খবর

    Sponsered content