প্রতিনিধি ৭ মার্চ ২০২০ , ১১:১১:৩৩ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি।। হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় সরকারের নির্ধারিত সময় সীমার ৮দিন অতিবাহিত হলেও এখনও শেষ হয়নি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ। ফলে শংঙ্কিত এই অঞ্চলের হাজারো কৃষক পরিবার। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজের পাউবো’র বেঁধে দেওয়া সময়সীমার আটদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অর্ধেক কাজও সম্পন্ন করতে পারেননি স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। এদিকে উপজেলা কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটি দাবি করছে, বাঁধ মেরামত কাজে পিআইসিরা এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছেন । কিন্তু বাস্তবে বাঁধের ৭০ ভাগ কাজও এখনো সম্পন্ন তকরতে পারেনি তারা। এ ছাড়াও পিআইসি’র কমিটি গঠনসহ বাঁধ মেরামত কাজেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠায় হাওর এলাকায় কৃষকদের বছরের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তোলা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন তারা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এবার চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ৮টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজে পাউবো’র অধীনে স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে ১৭৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়। এর বিপরীতে পাউবো থেকে ৩৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ওইসব প্রকল্পের কাজ শুরু করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে তা সম্পন্ন করার জন্য পিআইসি কমিটিকে সময়সীমা বেঁধে দেয় পাউবো। কিন্তু বাঁধ মেরামত কাজে পাউবো’র বেঁধে দেওয়া সময়সীমার ৮দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ৭০ ভাগ কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি পিআইসিরা। আর এ জন্য কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবো’র কর্মকর্তাদেরই দায়ী করে আসছেন স্থানীয় কৃষকরা। এছাড়াও পাউবো’র অধীনে গঠিত পিআইসি কমিটিগুলোতে স্থানীয় কৃষকদের অগ্রাধীকার ভিত্তিতে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম করার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরুদ্ধে। হাওরে জমি নেই এমন লোকদের দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠন করার ফলেই কাজে এমন গাফিলতি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সরেজমিনে, উপজেলার গুড়মার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজের , ৮০ নম্বর,৮০নম্বর ৮১ নম্বর, ৮৭ নম্বর , ৮৮, ৮৯.৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৫, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ১৯০, ১০৬. ১০৭, ও ৩৮ নম্বর প্রকল্প ও একই উপজেলার কাইলানী হাওর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ৩৭,, ৬৯, ৩৮, ৪৭ , ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫২, ৫৫ নম্বর প্রকল্প ও ঘুরাডোবা হাওর প্রকল্পের ৭০, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫,৭৬ নম্বর প্রকল্প ও সোনা মড়ল হাওর প্রকল্পের ২৮, ২৯, ৩০,৩১, ৩৩, ৩৪,৩৫ নম্বর প্রকল্প ও চন্দ্র সোনারথাল হাওর প্রকল্পের ১৩৩, ১৩৪ ও ১৩৫,১৩৬, নম্বর প্রকল্প এলাকা ছাড়াও জয়ধনা হার প্রকল্পের ৬৫ , ৬১, ৬৩ নম্বর প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব বাঁধ মেরামত কাজে এস্কেভেটর মেশিনেরবড্রাইভারকে ছাড়া পিআইসি’র কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি।
এক্সোভেটর (মাটি কাটার মেশিন) দিয়ে কোনো কোনো বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে বাঁধে ফেলা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো বাঁধে যেনতেনভাবে মাটি কেটে ফেলে রাখা হলেও সেখানে দুর্মূজ দিয়ে মাটি বসানোর কাজে কোনো শ্রমিককে পাওয়া যায়নি। এমনকি বাঁধ থেকে দূর্বা অপসারন না করেই বাঁধে মাটি ফেলতে দেখা গেছে। তবে প্রত্যেকটি প্রকল্প কাজেই দুই একজন করে শ্রমিককে কোদাল দিয়ে বাঁধের মাটি সমান করতে দেখা যায়। এছাড়াও দূর্মুজ দিয়ে শক্ত করে বাঁধের মাটি না বসানোয় গত দুই দিনের অল্প বৃষ্টিতেই অনেক বাঁধেরই মাটি দেবে গেছে এমনকি ছোট-ছোট ফাটলেরও সৃষ্টি হয়েছে।
এসময় উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই (৪০) ও একই প্রামের কৃষক আল-আমিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে দৈনিক অধিকারকে বলেন, এই বছর বাঁধ মেরামত কাজে যে ভাবে গাফিলতি করা হচ্ছে তা দেখে আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এখনো বাঁধের অর্ধেক কাজও সম্পর্ণ করা হয়নি। এছাড়াও বাঁধের খুঁটি ( গোড়া) কেটে যেনতেনভাবে বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। এবারও চৈত্র মাসের শুরুতেই পাহাড়ি ঢলে হাওরের যে কি অবস্থা হয় তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।
এ ব্যাপারে উপজেলার গুরমা হাওরের ৮৯ নম্বর প্রকল্পের প্রকল্প সভাপতি রুপন সরকার বলেন, আমার প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে । এখন শুধু মাটি বসানোর কাজসহ আনুসাঙ্গীক কিছু কাজ বাকি রয়েছে। তবে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সাকুল্য কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে আমি আশাবাদি।
এ ব্যাপারে বাঁধ মেরামত কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এবার হাওরে পানি দেরিতে নামার কারণে কাজেও দেরি হচ্ছে এবং আমরা সঠিক মতোই বাঁধ মেরামত কাজের তদারকি করে যাচ্ছি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে ২০টি প্রকল্প গঠনে বিলম্ব হওয়ায় সেগুলোর কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে এবং মাটি কাটার মেশিন (এস্কেভটর) নষ্ঠ হওয়ার কারণেও ৫-৬টি প্রকল্পের কাজ শেষ হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দ্রুতই সবক’টি প্রকল্পের কাজই সম্পন্ন করা হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, বাঁধ মেরামত কাজে অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে ইতোমধ্যে দুই জন পিআইসিকে তিন দিনের জেল দেওয়া হয়েচ্ছে এবং ৭ জন পিআইসির কাছ থেকে জেল ও জরিমানা আদায়সহ তাদের কাছ থেকে মুচলেকা রাখা হয়েছে। তবে দ্রুততই বাঁধের কাজ শেষ করার জন্য আমরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, বাঁধ মেরামত কাজে কোনো ধরনের গফিলতি করা হলে আমরা কাউকেই ছাড় দেবনা।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব মো. সবিবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় পানি দেরিতে নামার কারণে কাজেও দেরি হচ্ছে। গত শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে মাটি ভরাটের পাশাপাশি বাঁধের কম্পেকশন ও ঘাস লাগানোর কাজও চলছে। কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।