প্রতিনিধি ৫ মার্চ ২০২০ , ১০:০৭:৪৭ অনলাইন সংস্করণ
ভাটি বাংলা ডেস্ক: সিলেটে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী অপরাধীরা। শক্তিশালী হচ্ছে ‘নারী সিন্ডিকেট’। এই নারীদের সাথে অপরাধ জগতের কারা জড়িত রয়েছেন। মাস খানেক থেকে মিডিয়া আলোচনায় নারী অপরাধীদের তালিকা বাড়ছে। কোন নারী ইয়াবায়, কেউ প্রতারণায় ও ছিনতায়ে। বেশির ভাগই দেখা গেছে মাদক নিয়ে আটক হচ্ছেন নারীরা। বর্তমান মিডিয়ার আলোচনায় আলোচিত যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত শামীমা নূর পাপিয়া। ওই নারীকে নিয়ে মিডিয়া অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। পাপিয়া মতো না হলেও তার চেয়ে কম নয় সিলেটের নারী অপরাধীরা।
সিলেটের নারী অপরাধীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন, অপরাধ সাম্রাজ্যের রাণী কমলা। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী কমলা বেগম ফাতেমা। এয়ারপোর্ট থানাধীন এলাকা উমদারপাড়ায় কমলার পিত্রালয়। বর্তমানে সিলেট নগরীর কানিশাইলে তার নিজস্ব বাসায় বসবাস করে। কমালা দীর্ঘদিন থেকে সিলেট নগরীতে নারী ছিনতাইদের গডফাদার ও মাদকের ডিলার হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঈদে পূজায় নগরীর মার্কেটে নারী ছিনতাইকারীদের নিয়ে বেপোরোয়া উঠে।
আর এই সকল ছিনতাইকারীদের সেল্টারদাতা কমলা। কমলার এই শক্তিশালী ছিনতাই চক্র তারা সকল ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত। কমলার চক্রটি সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্র ও মাদক পাচার করে থাকে। এমনকি কমলার বাসায় প্রতিদিন বসে যৌন ও মাদকের আসর। সম্প্রতি কমলা বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ ঢাকার নিউ মার্কেট থানা পুলিশের হাতে আটক হয়। বর্তমানে কমলা জেল হাজতে বন্ধি রয়েছে। এই কমলার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক, ছিনতাই ও ডাকাতি সহ এশাধিক মামলা।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারী রোববার রাতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার আলেখারচর এলাকায় ৪০ হাজার পিস ইয়াবা সহ সিলেট বিশ্বনাথের উপজেলার দোলন মিয়ার স্ত্রী সুমী আক্তার (২৩), অপর নারী একই জেলার উসমানীনগর থানার পুরানসতপুর গ্রামের সুরুজ আলীর স্ত্রী লিপি বেগম (২৪)। বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করছেন , কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম( বার),পিপিএম।
গত ৭ ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা মূল্যের ৬১ হাজার পিছ ইয়াবা জব্দের ঘটনায় ইয়াবা জগতের রাণী মুখোশধারী ব্যবসায়ী বিশ্বনাথের মাদক সম্রাট তবারক আলীর স্ত্রী সাবিনা আক্তার (২৪)কে আটক করা হয়।
গত ২০ জুলাই সিলেটের দক্ষিণ সুরমাস্থ রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে থেকে র্যাব-৯, সদর কোম্পানী, (সিলেট ক্যাম্পের) এর একটি আভিযানিক দলের অভিযানে ৩৮০৫ পিস ইয়াবাসহ দুইজন পেশাদার মহিলা মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- সিলেটের জকিগঞ্জ থানার উত্তরকুলের (চৌধুরী পাড়া) আব্দুল জাব্বারের মেয়ে ও রিয়ান আহমেদের স্ত্রী নাজমিন বেগম তামান্না (২১) এবং একই থানার গণিপুরের আব্দুর রশিদের মেয়ে ও আলমগীরের স্ত্রী শহিনুর আক্তার(২৮)।
সিলেটের এক প্রবাসীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তার কাছ থেকে বিভিন্ন কিস্তিতে ছয় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। এই প্রতারক দলের সদস্যরা হলো এসএমপির জালালবাদ থানার কুমারগাঁওয়ে সাইফুল ইসলামের স্ত্রী আফিয়া বেগম ও অপরজন হলেন আমেরিকান কন্যা ফাতেমা বেগম। তাদের প্রতারণার শিকার প্রবাসী গত ২৭ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার জালালাবাদ ওই নারীদের আসামীকে একটি মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন।
সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়ার ছেলে প্রতারক জাকিরুল আলম ওরফে আরিয়ান ও তার স্ত্রী লাকি বেগমকে দিয়ে গত বছরের ১ অক্টোবর জৈন্তাপুর উপজেলার জমির ৩২ ধারার কাগজ ও দখলমুক্ত করে দেয়ার নাম করে ভূয়া কাগজ দেখিয়ে লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে ২৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই নারীর ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর শাহারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাজী কাসিম উল্লাহ’র ছেলে লন্ডন প্রবাসী হাসান আহমেদ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বীরগাও বাজারের বাসিন্দা তাজুল ইসলামের ছেলে সুজন মিয়া। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এই ভয়ংকর প্রতারক স্বামী-স্ত্রী। ওই প্রতারক নারী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে সিলেট আদালতে একটি মামলা রয়েছে।
সিলেট নগরীতে বিভিন্নভাবে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সর্বত্র প্রতারণার জাল বিস্তার করছে সিমা। মাসে বাসা বদল আর ৩শত টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে চেক দিয়ে টাকা নিয়ে প্রতারণা তার মূল পেশা। একটি প্রতারণা চক্র শুধু সিলেটে নয় পুরো বিভাগজুড়ে রয়েছে। সিমা তার স্বামী মোর্শেদের সাথে সিলেট নগরে আবার কখনো নগরের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসেন। কর্তমানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নাজিরবাজার এলাকার নরসিংপুর গ্রামের বাসিন্দা। সিমা দক্ষিণ সুরমার এক যুবকের কাছথেকে কিছু দিন পূর্বে নগরীর জিন্দবাজারের লতিফ সেন্টারের একটি দোকান বিক্রয় করার কথা বলে অগ্রীম কয়েক লক্ষদিক টাকা নেয় স্বামী মোর্শেদকে সাথে নিয়ে। যুবক জানান, শীঘ্রই মোর্শেদ ও তার স্ত্রী এবং তাদের সহযোগিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে মামলা দায়েল করবেন এবং মামলা দায়েরের পর সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যেদিয়ে এই প্রতারণা চক্রের মুখোশ সমগ্র সিলেটবাসীর কাছে উন্মোচন করার কথা।
এসকল ভয়ংকর অপরাধীদের তালিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই নারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসনের নিকট আশু হস্থক্ষেপ কামনা করছেন সিলেটের সচেতন মহল।
সূত্রঃ ক্রাইম সিলেট