• প্রবাস বাংলা

    টিউলিপ সিদ্দিকী হ্যাট্রিক জয়ের জন্য লড়ছেন ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে

      প্রতিনিধি ১৯ নভেম্বর ২০১৯ , ২:২৪:৪৪ অনলাইন সংস্করণ

    ভাটি বাংলা ডেস্কঃ-
    ব্রিটেনের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন আগামী ১২ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে ব্রিটেনজুড়ে যে পাঁচ-ছয়টি আসনের জয় পরাজয় নিয়ে ভোটার ও ব্রিটিশ গণমাধ্যমের উন্মুখ দৃষ্টি তার মধ্যে একটি হল লন্ডনের হ্যামষ্টেড ও কিলবার্ন আসন।
    লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের এ আসনের বর্তমান সাংসদ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। নব্বইয়ের দশক থেকে এ আসনটি ব্রিটেনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে।

    ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটি অব আর্টসের ফেলো টিউলিপ রেজোয়ানা সিদ্দিক ২০১৫ সালে এ আসন থেকে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন। লন্ডনে জন্ম নেয়া ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান টিউলিপ ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হয়ে যুক্ত হন ব্রিটিশ রাজনীতিতে। এমপি নির্বাচিত হবার আগে টিউলিপ ক্যামডেন কাউন্সিলের কাউন্সিলার নির্বাচিত হন। তিনি ক্যামডেন কাউন্সিলের প্রথম বাংলাদেশি বংশদ্ভূত নারী কাউন্সিলার।

    ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. শফিক সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে টিউলিপ দ্বিতীয়। তার মা বাবার,অর্থাৎ শফিক রেহানা দম্পতির বিয়েও হয়েছিল এই কিলবার্নেই। ২০১০ সালের নির্বাচনে এ আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে লেবার পার্টির গ্ল্যান্ডা জ্যাকসন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে মাত্র ৪২ ভোটে জয় পান। দুবার অস্কার পুরস্কার জয়ী এই বরেণ্য অভিনেত্রী দীর্ঘ ২৩ বছর সংসদে এ আসন থেকে ভোটের রাজনীতি ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। তার পর এ আসনে মনোনয়ন পান টিউলিপ।

    ২০১৫ সালে এ আসন থেকে প্রথমবার সাংসদ হন টিউলিপ। ঐ নির্বাচনে ২৩,৯৭৭ ভোট পান তিনি। ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি ৩৪৪৬৪ ভোট পেয়ে পুনঃনির্বাচিত হন। দু’দফায় এমপি নির্বাচিত হবার পর ব্রিটেনের নানা রাজনৈতিক ইস্যুতে সংসদের ভেতরে বাইরে রীতিমত ঝড় তুলতে সক্ষম হন টিউলিপ। দু’দফায় সাড়ে চার বছরের কম সময় এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন টিউলিপ। এই অল্প সময়েই তিনি শুধুমাত্র একজন সাংসদ হয়েই ব্রিটেনের রাজনীতি ও গণমাধ্যমে উঠে আসেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

    এ সময়কালে ব্রিটেনের কিছু গণমাধ্যমের একচোখা নীতির আক্রমণের শিকার হন টিউলিপ,এমন অভিযোগ টিউলিপের সমর্থকদের। আসন্ন নির্বাচনের তিন সপ্তাহ বাকী। টিউলিপ সিদ্দিক তার নির্বাচনী আসনে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে লিবারেল ডেমোক্রেট (লিবডেম) টিউলিপের আসনটি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। ব্রিটেনের যে আসনগুলোতে ভোটের জরিপে লিবডেম এগিয়ে আছে এ আসনটি তার অন্যতম। ব্রিটেনের গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে (কাউন্সিল) চমক দেখানো ফলাফল করে লিবডেম। টিউলিপের বিপরীতে এ আসনে লিবডেম প্রার্থী ম্যাথ স্যান্ডারর্স জনমত জরিপের পোলেও এগিয়ে আছেন।

    এ আসনে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভের নতুন প্রার্থী জনি লুক। গত নির্বাচনে কনজারভেটিভের মনোনীত প্রার্থী ক্লারে লিউস এ আসন থেকে নির্বাচন করে ১৮,৯০৪ ভোট পান,যা মোট ভোটের ৩২.৪ শতাংশ। আর টিউলিপ পান
    মোট ভোটের ৫৯ শতাংশ।

    এ আসনে জয় পরাজয়ের অন্যতম নিয়ামক স্থানীয় জুইশ কমিউনিটি। এ আসনে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির ভোট পুর্ব লন্ডনের তুলনায় অনেক কম। যদিও বাংলাদেশি রাজনীতির সূত্র ধরে কেবল বিরোধিতার জন্য বিরোধিতার জের ধরে গত নির্বাচনগুলোতে এ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা লন্ডনের অন্যান্য স্থান থেকে সমবেত হয়ে গিয়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে ও কনজারভেটিভ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এসব প্রচারণা ও গণসংযোগে যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

    আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে তিন বড় দলের তিন প্রার্থীর মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিক পরিচিতি ও ব্যক্তি ইমেজে এগিয়ে রয়েছেন। লেবার পার্টির কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি টিউলিপের অনুরাগী সমর্থকরাও তার লিফলেট আর হ্যান্ডবিল নিয়ে ছুটছেন ঘরে ঘরে। সংসদে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তার আসনের ভোটার এবং ভোটার নন সবার প্রতিই টিউলিপের সংবেদনশীল ও বিনয়ী আচরণ তার বাড়তি প্লাস পয়েন্ট।

    ব্রিটেনের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ৩৭ বছর বয়সী টিউলিপ মাত্র সাড়ে চার বছর মেয়াদের মধ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনী বৈতরণীর মুখোমুখি। ভোটার ও সাধারণ মানুষের কাছে তার ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা রয়েছে এটা সত্য। কিন্তু, আসন্ন নির্বাচনে যেহেতু ব্রেক্সিট মুল উপজীব্য বিষয় সেক্ষেত্রে জাতীয় ইস্যুগুলোই সারা ব্রিটেনে আসনগুলোর জয় পরাজয়ের প্রধান নিয়ামক হবে।

    টিউলিপ সাংবাদিকদের বলেছেন, আমার বেড়ে উঠা এ সংসদীয় আসনে। আমি হ্যামষ্টেড ও কিলবার্ন আসনে সংসদের প্রতিনিধি নই। ব্রিটেনের সংসদে আমি হ্যামষ্টেড ও কিলবার্নের মানুষের কন্ঠস্বর বা প্রতিনিধিত্ব করি। তিনি আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তার অতীতের কাজগুলো বিচার বিশ্লেষণের ভার দায়িত্ব তার ভোটারদের কাছেই সপে দিয়েছেন।

    এ আসনের ভোটার ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাগরিক জুবেরা রহমান রোববার বলেন, আমরা এবারো টিউলিপকে ভোট দেব। আমাদের দরকারে,সুবিধা অসুবিধায় তাকে সব সময় পাশে পাওয়া যায়। ভোট না দেবার মতোন কিছু তো উনি করেন নি।

    ড. রেনু লুৎফা লেখক ও অধ্যাপক। চার দশক ধরে বসবাস করছেন লন্ডনে। আসন্ন নির্বাচনে টিউলিপ সিদ্দিকের জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,টিউলিপের এবারের ভোটে জয় হবার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকার ভোটারদের কাছে তার জনপ্রিয়তা প্রচুর। গতবার বিএনপি বনাম আওয়ামীলীগ যে নোংরামি করেছে তা বাংলাদেশি হিসেবে আমাকে লজ্জা দিয়েছে। টিউলিপ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্রিটেনে আমন্ত্রণ এর বিরোধিতা করে বৃটিশ পার্লামেন্টে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পার্লামেন্টের ইতিহাসে ভাস্কর হয়ে থাকবে। তা ছাড়া কিলবার্নে রয়েছেন প্রচুর মুসলিম ও ইষ্টার্ন ইউরোপীয় ভোটার। তারা তাকে ভোট দিবেন। এখানে বিএনপি বনাম আওয়ামীলীগ ইস্যু না টানলে আমরা খুশি হবো। সব মিলিয়ে টিউলিপ একজন পরিশ্রমী, জনপ্রিয় জন প্রতিনিধি।

    কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ক্যামডেন এর চেয়ারম্যান ও পার্টির মনোনীত কাউন্সিলার প্রার্থী শাহীন আহমেদ রোববার আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, যেহেতু টিউলিপ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং আমিও একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি সে কারণে আমি এবার এ আসনে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে ক্যাম্পেইনে না নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা আমার ব্যক্তিগত মত।

    আরও খবর

    Sponsered content