• লিড

    সুদীপের নির্দেশ গুলিতে নিহত হন অনেক আন্দোলনকারী

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ , ৩:৩৪:৪২ অনলাইন সংস্করণ

     

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) যুগ্ম-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

     

    তখন তিনি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের দায়িত্বে থাকলেও ছাত্র-জনতা দমনে হাতে তুলে নেন চাইনিজ রাইফেল। র‌্যাব-সেনাদের নিষেধ সত্ত্বেও ছাত্র-জনতা হত্যায় মাতেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে পুলিশের যারা বেপরোয়া ছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

     

    যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া এলাকায় তার গুলিতে নিহত হন অনেক আন্দোলনকারী।

     

    গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের এই কর্মকর্তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

    তাকে ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিএমপি সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হলেও পলাতক রয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, সুদীপ কুমার পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গেছেন।

    তার স্ত্রী পুলিশ সুপার সুনন্দা রায়ও (সুপারনিউমারারি অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) দেশেই আছেন।

     

    তাকে গত ৮ অক্টোবর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রাজশাহী রেঞ্জে সংযুক্ত করা হলে ইতিমধ্যে রাজশাহীতে যোগ দিয়েছেন। অপরদিকে কর্মে যোগ না দেওয়া সুদীপ কুমারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

     

    একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহু আন্দোলনকারীকে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন সুদীপ। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা দমন-পীড়ন চালিয়ে সরকারের আস্থা অর্জন করেছিলেন।

     

    বগুড়ার পুলিশ সুপার থেকে গেল বছর পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি হন। পরে তাকে ডিএমপিতে পদায়ন করা হয়। এরপর তিনি ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের দায়িত্ব পান।

    গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৫ থেকে ১৯ জুলাই বাড্ডা-ভাটারায় ছাত্র আন্দোলন তীব্র আকার নিলে সুদীপ ডিএমপির অনুমতি ছাড়াই পার্শ্ববর্তী দেশের দূতাবাসের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। নিজে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালান আন্দোলনকারীদের ওপর।

     

    গত ২০ জুলাই রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আন্দোলনকারীদের দখলে ছিল। সড়ক দখলমুক্ত করতে সেনা, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ দল অভিযানে নামে। সুদীপ এখানে এসে হাজির হন। তবে এই অভিযানে চাইনিজ রাইফেল ফায়ার করার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়।

     

    উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সুদীপ কুমার চাইনিজ রাইফেল দিয়ে অসংখ্য গুলি করেন। শনির আখড়া ফ্লাইওভারের ওপর থেকে দুই পাশে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে অবস্থানরত আন্দোলনকারী জনতাকে লক্ষ্য করে অসংখ্য ‘লাইভ বুলেট’ ফায়ার করেন তিনি।

     

    এতে প্রায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়। লাইভ বুলেট ফায়ার না করার জন্য বলা হলেও সুদীপ কারও কথা না শুনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।

    সুদীপ কুমারের নির্দেশে প্রথমে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে বাম দিকে অবস্থানরত উৎসুক জনতাকে লক্ষ্য করে পুলিশ তিনটি চাইনিজ রাইফেল ফ্লাইওভারের প্যারাপেট দেয়ালের ওপর পাশাপাশি রেখে টানা ৩০ রাউন্ড গুলি করে। পুলিশের কাছে যেসব চাইনিজ রাইফেল আছে তাতে একবারে ১০ রাউন্ড গুলি লোড করা যায় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

    তাছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন গলিতে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে অসংখ্য গুলি করা হয়। এ সময় যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার যাদের দিয়ে গুলি করিয়েছেন তাদের উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়- ‘তোমাদের ১০০ রাউন্ড চাইনিজ গুলি দিয়ে কয়টি লাশ ফেলতে পেরেছ?’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন ওই এলাকায় র‌্যাব-সেনাবাহিনী একটিও লাইভ বুলেট ফায়ার করেনি। সুচতুর সুদীপ কুমার র‌্যাব ও সেনাবাহিনীকে সামনে রেখে রাতের অন্ধকারে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান।

     

    ২১ জুলাই শনির আখড়া থেকে সেনা, র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ টিম সাইনবোর্ড এলাকার উদ্দেশে রওনা করে। এ সময় পুলিশ ‘অগ্রগামী দল’ হিসেবে মাতুয়াইল পর্যন্ত ব্যারিকেড ও আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। সে সময় কোনো চাইনিজ রাইফেল ফায়ার করতে দেখা যায়নি। বেলা ১টার দিকে যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের দায়িত্ব নেন। এরপরই তিনি চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করা শুরু করেন। এভাবে বিনা কারণে গুলি করতে র‌্যাব-সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিষেধ করা সত্ত্বেও মাতুয়াইল এলাকায় সুদীপ গুলি চালাতে থাকেন। তার নির্দেশে দি ওয়ান রেস্টুরেন্ট-এর পাশের গলিতে তিনজন নিরস্ত্র আন্দোলনকারীকে টার্গেট কিলিং করা হয় চাইনিজ রাইফেল দিয়ে। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে সুদীপকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রতিটি গলিতে লাশ ফেলতে ফেলতে যাবে; যাতে কেউ সামনে আসতে সাহস না পায়। প্রতিবেদন বলছে, সুদীপ অন্তত ৫০ জন আন্দোলনকারী বা উৎসুক জনতাকে চাইনিজ রাইফেলের গুলিতে হত্যা করেন।

    এদিকে যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে ইমন হোসেন গাজী নিহতের ঘটনায় করা মামলার আসামি সুদীপ কুমার। এ ছাড়া আরও মামলায় নামীয় আসামি এই বহু হত্যাকাণ্ডের হোতা।
    পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, যারা কাজে যোগ দেননি তাদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আইজিপি স্যারের বার্তা স্পষ্ট। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ বলেন, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী কাজে ফেরেননি। তার বিরুদ্ধে প্রথা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রাজশাহীর অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) ফয়সল মাহমুদ জানান, সুদীপের স্ত্রী সুনন্দা রায় রাজশাহী রেঞ্জে যোগ দিয়েছেন। গতকাল বুধবারও তিনি অফিসে গিয়েছিলেন।

    0Shares

    আরও খবর

    Sponsered content