• আন্তর্জাতিক

    লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযানের প্রস্তুতি

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:৪০:০৩ অনলাইন সংস্করণ

    ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ট্যাংকসহ সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে, ছবি: এএফপি

    লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যার পরও দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

     

    আজ রোববার সংগঠনটির বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি হিসেবে সীমান্তে সামরিক উপস্থিতিও বাড়াচ্ছে ইসরায়েল।

    ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আজ জানানো হয়েছে, এদিন লেবাননের রাজধানী বৈরুত, বেকা উপত্যকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লাহর রকেট উৎক্ষেপণব্যবস্থা ও গোলাবারুদের সংরক্ষণাগার ধ্বংস করা। এতে নতুন করে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া হিজবুল্লাহর শীর্ষ পর্যায়ের আরেক নেতা নাবিল কাওউককে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল।

    হিজবুল্লাহও আজ ইসরায়েল লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর ভাষ্যমতে, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তিবেরিয়াস অঞ্চলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র উন্মুক্ত স্থানে পড়েছে। তবে হিজবুল্লাহ বলেছে, গতকাল তারা শুধু সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চৌকি লক্ষ্য করে ফাদি-১ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

    এর আগে গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বৈরুতসহ দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় হিজবুল্লাহ। গতকাল দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবন থেকে নাসরুল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েল দাবি করেছে, নাসরুল্লাহকে হত্যায় চালানো হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ পর্যায়ের আরও ২০ নেতা নিহত হয়েছেন।

    হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের শত্রুতা বেশ পুরোনো। ২০০৬ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছিল তারা। এরপর গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল হামলা চালালে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলের হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। পাল্টা হামলা চালাচ্ছিল ইসরায়েলও। তবে ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহর পেজার ও ওয়াকি–টকিতে হামলার পর থেকে লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

    স্থল অভিযানের প্রস্তুতি

    বিমান হামলার মধ্যে লেবাননে এবার ইসরায়েলের স্থল হামলা শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের উত্তরে লেবাননের সীমান্ত রয়েছে। সেখানে ইসরায়েল বাহিনীর বিপুল সেনা, ট্যাংক ও কামান মোতায়েন করতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, লেবাননে স্থল অভিযান হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে এ বিষয়ে হয়তো এখনো পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

    এ নিয়ে গতকাল শনিবার হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলি বাহিনীর মুখপাত্র পিটার লার্নার। বলেছিলেন, স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি এখনো বিবেচনাধীন। লেবাননে হামলা বাড়ানো নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট আলোচনা করছেন বলে জানিয়েছে তাঁর কার্যালয়। এর আগে বুধবার স্থল হামলার প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন দেশটির সেনাপ্রধান হেরজি হালেভিও।

    ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে লেবানন সীমান্তবর্তী ইসরায়েলের উত্তর সীমান্ত এলাকা ছেড়ে গিয়েছিল ৬০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। তাদের নিজ বাসায় ফেরানোর চেষ্টায় রয়েছে ইসরায়েল সরকার।

    লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের হামলার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়
    লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের হামলার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়ছবি: এএফপি

    ‘আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না’

    লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ জানিয়েছে, শনিবারের হামলায় ৩৩ জন নিহত হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় নারী, শিশুসহ ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ছয় হাজারের বেশি। তবে হতাহত মানুষের মধ্যে কতজন বেসামরিক আর কতজন হিজবুল্লাহর যোদ্ধা রয়েছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানায়নি লেবানন সরকার।

    এদিকে ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় অবনতি হচ্ছে বৈরুতের পরিস্থিতির। বোমার আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে বহু ভবন। ভয়ে অনেকে রাস্তায় অবস্থান করছে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে পালিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। দক্ষিণ লেবানন থেকে পালিয়ে আসা আয়মান নামের এমনই একজন বলছিলেন, ‘ইসরায়েল যা–ই করুক না কেন, আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না।’

    লেবাননের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির মানবিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিলিফের কর্মকর্তা জাদ আসাফ আল-জাজিরাকে বলেন, দেশের সব স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। তবে সেখানেও ভয়াবহ পরিস্থিতি। একেকটি কক্ষে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে শৌচাগারের সংকট।

    এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলার কারণে লেবানন থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সিরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। আর লেবানন সরকার জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে।

    ইরানের বিপ্লবী গার্ড নেতা নিহত

    বৈরুতে শুক্রবারের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) একজন নেতা নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নিলফোরোউশান। তিনি আইআরজিসির একজন ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। এক বিবৃতিতে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তেহরান।

    যদিও হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর গতকাল প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। নাসরুল্লাহর মৃত্যুতে দেশটিতে পাঁচ দিনের জাতীয় শোকও ঘোষণা করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ইরান–সমর্থিত প্রতিরোধ বাহিনী বা অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের একটি হলো হিজবুল্লাহ।

    ইসরায়েলের বোমার আঘাতে বাড়িগুলো এখন ধ্বংসস্তূপ। সেখানে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করছেন এক নারী। আজ লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে
    ইসরায়েলের বোমার আঘাতে বাড়িগুলো এখন ধ্বংসস্তূপ। সেখানে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করছেন এক নারী। আজ লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠেছবি: এএফপি

    ‘লেবাননের সঙ্গে খেলছে যুক্তরাষ্ট্র’

    ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ চলমান সংঘাতের শুরুতে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ। তবে ওই প্রস্তাব কানে তোলেনি নেতানিয়াহু সরকার। এখন লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি বলছেন, লেবানন সরকার যুদ্ধবিরতি চায়। এ নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। তবে বিষয়টি অতটাও সহজ নয়।

    লেবাননে যুদ্ধবিরতি নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের গবেষক ওমর রহমান আল-জাজিরাকে বলেন, লেবাননে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খেলছে। একদিকে তারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে, অপর দিকে ইসরায়েলি বাহিনীকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। গাজার ক্ষেত্রেও তারা একই কাজ করেছে।

    একই ভাষ্য ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের গবেষক ফিলিস বেনিসের। তাঁর মতে, যুদ্ধবিরতির কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলকে আরও অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজা ও লেবানন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মুখের কথা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না ইসরায়েলের নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেটিই তাঁদের কাছে মুখ্য বিষয়।

    আরও খবর

    Sponsered content