• জাতীয়

    ঢাবিতে যুবক হত্যা: গ্রেফতার ৬ জনের ৫ জনই ছাত্রলীগ

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৫:৪১:৪১ অনলাইন সংস্করণ

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলায় মোট ৮ অভিযুক্তের মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

    গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা এক মামলায় গ্রেফতার করা হয় তাদের।

     



    গ্রেফতার হওয়া ৬ জনের মধ্যে ৫জনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।

    এর মধ্যে ৩ জন ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ও ২ জন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।



    গ্রেফতারকৃ শিক্ষার্থীরা হলেন, ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনিস্টিউটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোত্তাকিন সাকিন শাহ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আহসান উল্লাহ ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ওয়াজিবুল আলম।
    এর মধ্যে মোত্তাকিন সাকিন শাহ ছাড়া বাকি সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। অন্যদিকে অভিযুক্তদের অন্যতম জালাল মিয়া ফজলুল হল শাখা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের রাজনীতি করতেন। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাঝপথে হঠাৎই তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে আন্দোলনে সক্রিয় হন। তবে অতীতের উগ্রতা ও রুক্ষ স্বভাব ছাড়তে পারেননি বলে জানান একাধিক সূত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিচিতজনরা তার ব্যাপারে নেতিবাচক অনেক গল্প বলতে দেখা যায়।

    আরেক অভিযুক্ত আল হোসাইন সাজ্জাদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক। জানা গেছে, সাজ্জাদও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সাথে রাজনীতি করতেন। আহসান উল্লাহ্ ছিলেন ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন উপসম্পাদক। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত ছিলেন।

     


    অন্যদিকে ফজলুল হক হলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে গ্রেফতার হওয়া আরো দুই শিক্ষার্থী সুমন মিয়া ও ওয়াজিবুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের একান্ত অনুগত ও সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঢাবি ক্যাম্পাসে সৈকত ছিলেন সহিংসতার মুর্ত প্রতীক।


     

    ক্যাম্পাসে মোট সহিংসতার অন্তত ৭০ শতাংশ ঘটনায় জড়িত ছিল তার অনুসারীরা। অন্যদিকে অভিযুক্তদের মধ্যে পলাতক রয়েছে দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী মো. ফিরোজ কবির ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবদস সামাদ।

     

    তাদের সবাইকে হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ শনিবারের মধ্যে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. সাইফুদ্দীন আহমেদ।
    ড. সাইফুদ্দীন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নিয়ে সর্বমোট ৮ জনের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই তারা তদন্ত শেষ করেন।

     


    অভিযুক্তদের মধ্যে ৬ জনকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এবং ইতোমধ্যে তাদেরকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। বাকি দুইজনকে আমরা ট্র্যাক করার চেষ্টা করছি।


     

    আশা করি খুব শীঘ্রই তারাও ধরা পড়বে। প্রক্টর আরো বলেন, অভিযুক্ত ৮ জনের আবাসিক সিট বাতিল হবে এবং শনিবারের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

    উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে একদল শিক্ষার্থী। ওই যুবকের নাম তোফাজ্জল। তিনি বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা। বছর দু›য়েক ধরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকেন তোফাজ্জল। বুধবার ওই হলের সামনে দিয়ে ঘুরতে দেখা গেলে চোর সন্দেহে তাকে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে দফায় দফায় মারধর করে হত্যা করেন শিক্ষার্থীরা

    সূত্রঃ ইনকিলাব

    আরও খবর

    Sponsered content