মোহাম্মদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চলাকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস মাসুদুর রহমান বিপ্লব ও কাউন্সিলর আসিফের গুলিতে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে মোহাম্মদপুরের আসাদগেট সংলগ্ন সড়কে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এর নেতৃত্বে গত ৩ আগস্ট (শনিবার) রাত থেকেই অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সাংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী এবং ৩২ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
পরদিন রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ বসিলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কের মোড় অতিক্রম করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের মিছিল ময়ুর ভিলার সামনে আসলে নানকের পিএস বিপ্লব ও স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ দুইদিক থেকে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও তাদের গুলি করে হত্যা এবং ভুক্তভোগীর অভিযোগের বেশ কয়েকটি ভিডিও সংরক্ষিত রয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা জুতা, কালো প্যান্ট ও কালো টিশার্ট এবং মাথায় হেলমেট পরা দুই ব্যক্তি বাসস্ট্যান্ডের সামনে ময়ূর ভিলা এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে। তার সঙ্গে আরও ১০-১৫ জন আগ্নেয়াস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়ে। এ সময় এক কিশোর ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ভিডিও দেখে কয়েকজন শনাক্ত করেছেন, কালো টিশার্ট ও প্যান্ট পরা ব্যক্তিটি জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস বিপ্লব। হামলার কিছুক্ষণ আগে তারা সবাই প্রায় একই পোশাকে মুখে কাপড় বেঁধে পুলিশের আশপাশে অবস্থান নেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার এ ঘটনায় নিহত দুই জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দলোনকে ঘিরে মোহাম্মদপুর এলাকায় আহত ও নিহতের সংখ্যার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে এই আন্দলোনের সহিংসতায় জীবন দিতে হয়েছে আল শাহরিয়ার হোসেন রোকন নামের ২৩ বছরের এক দিনমজুর এবং ওমর ফারুক নামে এক কিশোরকে। রোকনের বাবা মনির হোসেন বলেন, আমার ছেলে রোকন চকবাজার থেকে কম দামে বিভিন্নরকম পণ্য কিনে দোকানে দোকানে বিক্রি করতো।
নিহত রোকন ১৫৫ পশ্চিম কাটাসুর হেদু চৌধুরীর বাসায় বাবা-মায়ের সাথে ভাড়া থাকতেন। বাবা মনির হোসেন বলেন কাটাসুর ময়ুর ভিলার দিকে একটি দোকানে বিল কালেকশন করতে গেলে এই দুর্ঘটনার শিকার হন। গুলি লেগেছে এই খবর শুনতে পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখি আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাৎক্ষণিক একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তাররা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিতে বলেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর একজন হতভাগ্য হলেন মোহাম্মদপুর বোর্ডঘাট এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক নামে ১৬ বছরের এক কিশোর। বোর্ড ঘাট এলাকায় সরেজমিনে গেলে নিহতের ছোট ভাই বলেন, আমার ভাই ময়ূর ভিলার সামনে গিয়েছিল। সেখানে তার বুকে কয়েকটি গুলি লাগে। গুলি লাগার খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারিনি। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ ছিলো। পরবর্তীতে জানতে পারি আমার ভাইকে কয়েকজন মিলে শিকদার মেডিকেলে ভর্তি করেছে। শিকদার মেডিকেলে আমরা পৌঁছালে ডাক্তার জানান আমার ভাই আর বেঁচে নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারী শিক্ষাথীদের মিছিল ময়ুর ভিলার সামনে আসলে পেছন থেকে উত্তর সিটি করপোরেশন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদের নেতৃত্বে এবং সামনে থেকে ঢাকা ১৩ আসনের সদ্য সাবেক সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস মাসুদুর রহমান বিবের নেতৃত্বে পৃথকভাবে আক্রমণ চালানো হয়। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পিএস বিপ্লব এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।
উল্লেখ্য, এই পিএস বিপ্লবের ওপর আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মারিসা বার্নিকাটের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফের ভাতিজা।
সূত্রঃ ইত্তেফাক