প্রতিনিধি ১৫ আগস্ট ২০২৪ , ১:০০:১৮ অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি ভারত নিশ্চিত করবে বলে আশা করছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি নয়াদিল্লিকে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে সংবিধান সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে আজ বুধবার অনলাইনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা সজীব ওয়াজেদ।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমাদের সরকারের কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও বিষয়টি আদালতের হাতে ছেড়ে না দিয়ে শুরুতেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল বলে মনে করি। কোটা কমানোর জন্য আমাদের সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল। আমি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে একটি অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার তা না করে বিষয়টি বিচার বিভাগের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল।’
বিক্ষোভ মোকাবিলায় সরকার ভুল করেছে স্বীকার করলেও সহিংসতার পেছনে বিদেশি একটি গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল বলে দাবি করেন জয়। তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘ বিশ্বাস, এর সঙ্গে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল। এর একটা বড় কারণ, ১৫ জুলাই থেকে অনেক বিক্ষোভকারীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে।
গত দেড় দশকে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সাফল্যের কারণে বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়াটা খুব কঠিন। দেশে যদি আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও সরবরাহ করার কারও সক্ষমতা থাকে, তাহলে সেটা একমাত্র বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা।’
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৫ আগস্ট দেশত্যাগের আগের ২৪ ঘণ্টার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, এক দিন আগেও তিনি ও তাঁর মা কেউই ভাবেননি যে পরিস্থিতি এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তিনি বলেন, ‘তাঁর (শেখ হাসিনা) দেশ ছেড়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগপত্র দিয়ে প্রকাশ্যে সেই ঘোষণা দিতে চেয়েছিলেন। নিজের ভাষণও রেকর্ড করতে যাচ্ছিলেন। ঠিক এমন সময় নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন বলেন, “ম্যাম, আর সময় নেই। আমাদের যেতে হবে।”’
শেখ হাসিনা দেশ না ছাড়ার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকলেও তিনিই তাঁর মাকে দেশত্যাগের ব্যাপারে রাজি করান বলে দাবি করেন সজীব ওয়াজেদ। তাঁর ভাষ্যমতে, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে (শেখ হাসিনা) একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে চান। তাঁর জন্য সেখানে আগে থেকে একটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল। কিন্ত তিনি যেতে চাচ্ছিলেন না। এ সময় আমার খালা (শেখ রেহানা) আমাকে ফোন করেন।’
সজীব বলেন, ‘আমি মাকে বুঝিয়ে বলি, নিজের নিরাপত্তার জন্য হলেও তোমাকে দেশ ছেড়ে যেতে হবে। লোকজন যদি তোমাকে পায়, তাহলে সেখানে গোলাগুলি হবে, অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হবে। এ জন্য হয় তোমাকে দোষারোপ করা হবে, নয়তো ওই সব মানুষ তোমাকেই মেরে ফেলবে। তাই তোমার জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়াই এখন ভালো হবে। তাঁকে দেশ ছাড়ার ব্যাপারে আমিই রাজি করিয়েছিলাম।’
দেশত্যাগের পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন। তাঁর মা ভারতেই থাকবেন নাকি কোথাও যাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তিনি (শেখ হাসিনা) সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন। সম্ভবত, আপাতত তিনি ভারতেই থাকবেন।
শেখ হাসিনার ভারতে যাওয়ার প্রসঙ্গে সজীব বলেন, হেলিকপ্টারে যাওয়া ছাড়া তাঁর উপায় ছিল না। এ কারণে তাঁর একমাত্র গন্তব্য ছিল ভারত।
এরপর ভারত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তাঁকে প্রাণে বাঁচানো ও একটি নিরাপদ জায়গায় রাখায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ধন্যবাদ।
এ ছাড়া (শেখ হাসিনার) অনেক দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, সবই গুজব। এসব একেবারে অসত্য। রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে তিনি কোনো দেশের সরকারের কাছে আবেদন করেননি।
ভারতের উদ্দেশে কী বার্তা দিতে চান? এমন প্রশ্নে সজীব বলেন, ‘এ বিষয়ে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে সংবিধান সমুন্নত রাখার বিষয়ে কাজ করতে নয়াদিল্লির প্রতি আহ্বান জানাব। কারণ, এটা ঘটছে ভারতের দুয়ারে।
আশা করব, বাংলাদেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে নয়াদিল্লি। একই সঙ্গে বিশৃঙ্খল জনতার (মব) শাসনের অবসান হবে। আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক প্রচার চালানো ও পুনর্গঠিত হতে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিশ্চিত করা হলে আমি এখনো আত্মবিশ্বাসী, আমরা নির্বাচনে জয়ী হব। আমরা এখনো (বাংলাদেশের) সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল।’