• আহত / নিহত

    বরগুনায় ২ প্রেসক্লাবের দ্বন্দ্বে সাংবাদিক মাসউদের মৃত্যু!

      ডেস্ক রিপোর্টঃ ৬ মার্চ ২০২৪ , ৭:১৭:১৬ অনলাইন সংস্করণ

    বরগুনায় দু’টি প্রেসক্লাস। একটি বরগুনা প্রেসক্লাব, আরেকটি বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মাসউদকে মারধর করা হয়। তার জেরে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুই হয় তার।

    মারধরে আহত হওয়ার পর হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন মাসউদ। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না তিনি। সে অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক হলে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শনিবার সেখানেই মারা যান তিনি। মাসউদের স্ত্রী সাজেদা এই ঘটনায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

    ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বরগুনা প্রেসক্লাবে সদস্যপদ না পেয়ে ২০১৫ সালে বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন তালুকদার মাসউদ। সেই থেকে দুই প্রেসক্লাবের মধ্যে চলছিল ‌দ্বন্দ্ব।

    সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ ছিলেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা জেলা প্রতিনিধি। তিনি একটি আইপি টিভিতেও কাজ করতেন। পাশাপাশি বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি। দ্বিতীয়বারের মতো তিনি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন গোরাপদ্মা এলাকার আবদুল ওয়াহাব মাস্টারের ছেলে তালুকদার মাসউদ। তার স্ত্রী সাজেদা দক্ষিণ চরকগাছি বহুমুখি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। এছাড়া তার দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি বরগুনা পলিটেকনিক্যালের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী আর ছেলে তানহা তালুকদার বরগুনা জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।

    সেদিন যা ঘটেছিল
    ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বরগুনা জেলা প্রতিনিধি মুশফিক আরিফ। তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমিসহ তালুকদার মাসউদ ক্যারাম খেলছিলাম। এ সময় ক্লাবে আসেন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ (আ স ম হাফিজ আল আসাদ)। তিনি আমাদের দেখেই বলেন, মাসউদকে ক্লাবে কে এনেছে? আরিফ, আপনি এনেছেন? জবাবে আমি বললাম, আমি তো দেখলাম মাসউদ আপনার সাথে এসেছে। এ সময় তিনি মোবাইল বের করে ভিডিও শুরু করেন। এরপর সদস্য লাউঞ্জে চলে যান। কিছুক্ষণ পর আমার মনে হলো, হাফিজ কেন ভিডিও করল? তখন আমি সদস্য লাউঞ্জে গিয়ে মোবাইল বের করে ফাজলামির মতো করে তার দিকে মোবাইল ধরে বলি, এখন আপনি আমাকে ইন্টারভিউ দেন। বলেন, কেন ভিডিও করলেন? আমাদের এই আলাপচারিতার মধ্যে মাসউদও সেখানে হাজির হন। এক পর্যায়ে কোনো কথা ছাড়াই হাফিজ উত্তেজিত হয়ে মাসউদের কলার চেপে মারধর শুরু করে। তখনও আমি ভিডিও করছি। এক পর্যায়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তার সাথে থাকা ক্যামেরাপারসনসহ কয়েকজন মিলে মাসউদকে মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে হাফিজ তার লোকজনকে গেট বন্ধ করতে বলেন। আমি বারবার চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারিনি। এক পর্যায়ে একটা রুমে মাউদকে নিয়ে আমি সামনে দাঁড়াই। তখনও ওরা গালিগালাজ করছিল। আমি মাসউদকে নিয়ে যে রুমে ছিলাম, ওই রুমের লাইট আর ফ্যান তারা বন্ধ করে দেয়। এ সময় মাসউদ ঘামছিল, আর পানি চাচ্ছিল। কিন্তু হাফিজের নির্দেশে কেউ পানিও দেয়নি। এক পর্যায়ে মাসউদ আমার কোলের ওপর শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে। তখনও তাকে পানি দেয়নি ওরা। পরে পুলিশ আসার পর আমি পানির একটা বোতল কিনে তার মুখে পানি দেই। পুলিশ আসলেও ওরা গেট খুলছিল না।’

    ঘটনার পরপর সেখানে হাজির হন বরগুনা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান। তালা খোলার পর ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। সেদিনের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ভেতরে যাই, তখন ফ্লোরে শুয়ে ছিলেন মাসউদ। আমরা তাকে তুলে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করলে সোহেল হাফিজ তখনও অশ্লীল ভাষায় মাসউদকে গালিগালাজ করতে থাকে। তিনি বলছিলেন, তার (মাসউদ) কিছুই হয়নি, ভান ধরেছে, যেটা আমাদেরও ভালো লাগেনি। পরে আমরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’

    তবে প্রেসক্লাবের সভাপতি, জনকণ্ঠ ও এটিএন বাংলার জেলা প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফা কাশেম বলেন, ‘ওই দিন সেখানে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতার এড়াতে মাসউদ অভিনয় করেছিল। পরে চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এই ঘটনার সাথে প্রেসক্লাবের ঘটনার কোনো যোগসূত্র নেই। প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য যারা সদস্য হতে পারে না, তারা অপপ্রচার করে। মাসউদের মৃত্যু যে হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে সেটা হাসপাতালের চিকিৎসক পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন।’

    বরগুনা প্রেসক্লাব সদস্যদের সাথে মাসউদের অতীত
    বরগুনা প্রেসক্লাবে সদস্য হওয়ার কিছু শর্ত আছে। পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের একটি কেউ সদস্য হতে হলে তাকে ডিগ্রি পাশ হতে হবে। কিন্তু শর্তপূরণ করলেও অনেককে সেখানে সদস্য করা হতো না। যারা এই ক্লাবের সিনিয়র, তাদের এক ধরনের ‘মনোপলি’ সেখান আছে। সোহেল হাফিজ সেখানে প্রভাবশালী সদস্য। আগে কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি ছিলেন সোহেল হাফিজ। সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়। সেখানে চাকরি হয় মিজানুর রহমানের। হাফিজের ধারণা, মিজানুর রহমানের কারণে তার চাকরি গেছে। এই কারণে তিনি প্রভাব খাটিয়ে মিজানুর রহমানের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল করেন। এছাড়া মাসউদও অনেক দিন চেষ্টা করে সদস্য হতে পারছিলেন না। পরে ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই মাসউদ বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। তার সাথে যোগ দেন যারা এত দিন প্রেসক্লাবের সদস্য হতে পারিনি তারা এবং বহিস্কৃতরা।

    মাসউদ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করে রেজিস্ট্রেশনও করিয়ে নেন। এই রেজিস্ট্রেশন বরগুনা প্রেসক্লাবের নীতিনির্ধারকদের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। প্রেসক্লাবের কর্মকর্তারা কয়েকবার মাসউদের সাথে এ নিয়ে বৈঠকও করেন। তাকে সদস্যপদ দেয়া হবে- এই শর্তে জেলা প্রেসক্লাব বিলুপ্ত করতে বলা হয়। এই আলোচনা চললেও শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়নি। তাই মাঝে মধ্যেই মাসউদ প্রেসক্লাবে গিয়ে চা চক্রে যোগ দিতেন, কথাবার্তা বলতেন।

    প্রেসক্লাবের ১০ জন সদস্য (কেউ কেউ পরিবার নিয়ে) ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা সফরে কলকাতা যান। এর মধ্যে প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তাফা, সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদারও ছিলেন। কলকাতায় তারা কলকাতা প্রেসক্লাব ও উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। উপকূলীয় এলাকার জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে অনেক সময় ভারতের সীমানায় চলে যান, সেখান থেকে তাদের ধরে কারাগারে রাখা হয়- এগুলো নিয়ে মূলত কলকাতার সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করেছিলেন বরগুনা প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি দল। তারা যাওয়ার পরদিন, অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবে এই ঘটনা ঘটে।

    ক্লাব সদস্যদের দাবি, মাসউদ প্রেসক্লাব দখল করার উদ্দেশে সেখানে গিয়েছিলেন। সোহেল হাফিজ তাদের প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়েছেন।

    প্রেসক্লাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আলোচনা করে সমাধানে যেতে বলেছিলেন। ২ মার্চ আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়। এর আগেই ২৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে মাসউদকে প্রধান আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলার আবেদন করেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাফর হাওলাদার। আদালত থানাকে মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ১ মার্চ মামলাটি থানায় রেকর্ড হয়। ২ মার্চ ক্লাবের সদস্যরা মাসউদের বিরুদ্ধে মানবন্ধন করে তার বিচার দাবি করেন।

    হত্যা মামলায় যা বলা হয়েছে
    মাসউদকে প্রেসক্লাবে আটকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মাসউদের স্ত্রী সাজেদা। মামলায় এনটিভির জেলা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ (৪৭), আরিফুল ইসলাম মুরাদ (২৮), মো: কাসেম হাওলাদার (৩০), যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন (৪০), মো: সাইফুল ইসলাম মিরাজ (৩০), মো: ছগির হোসেন টিটু (২৮), ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবদুল মালেক মিঠু (২৮), ওয়ালিউল্লাহ ইমরান (২৮), জাহিদুল ইসলাম মেহেদী (২৮), সোহাগ হাওলাদার (২৫), এ এস এম সিফাত (২৭), শহিদুল ইসলাম শহিদ (৪৫) এবং মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মো: জাফর হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন প্রেসক্লাবের সদস্য, চারজন বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিক এবং তিনজন বিভিন্ন টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন। বাকি একজন ইউপি সদস্য নির্বাচনে মাসউদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।

    মামলায় বলা হয়েছে, ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত থাকায় তালুকদার মাসউদ বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই ‘বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব’ নামে একটি সংগঠন করেন। এ কারণে বরগুনা প্রেসক্লাবের কিছু সদস্য তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে প্রেসক্লাবের সদস্য মুশফিক আরিফের সাথে বরগুনা প্রেসক্লাবে গিয়ে ক্যারাম খেলছিলেন তালুকদার মাসউদ। তাকে ক্যারাম খেলতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে সোহেল হাফিজ গালিগালাজ শুরু করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে সোহেলসহ অন্যরা প্রেসক্লাবের গেট বন্ধ করে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও গেট তালাবদ্ধ রাখা হয়।

    প্রায় এক ঘণ্টা পর ওসি মিজানুর রহমান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি বশিরুল আলম প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে তালুকদার মাসউদকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার ১১ দিন পর, ২ মার্চ রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তালুকদার মাসউদ মারা যান।

    মাসউদের স্ত্রী ও মেয়ের বক্তব্য
    মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বলেন, ‘জেলা প্রেসক্লাব গঠনের পর থেকে সাংবাদিক সোহেল হাফিজ ও তার অনুসারীরা আমার স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার তিনি আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছেন। ওই দিন সকালে ক্লাবে যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছেন। বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব নামে আমার স্বামীর কাছে সরকারের রেজিস্ট্রেশন ছিল। এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না তারা। এই কারণে তারা আমার স্বামীকে টার্গেট করেছিলেন। আমার একমাত্র মেয়ে পড়াশোনা করে, ছেলের বয়স মাত্র ১৩ বছর। স্বামীর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

    মাসউদের মৃত্যুর পর কেউ হুমকি দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওরা আমাকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছে। আমি না করে দিয়েছি। আর কেউ হুমকি দেয়নি। তবে আমার বোনকে ফোন করে হাফিজের এক আত্মীয় সাবধানে থাকতে বলেছেন।’

    মাসউদের মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি বলেন, ‘ওদের মারধরে বাবা ওই দিন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বরিশাল থেকে বাবাকে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছিল। সেখানে শরীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এনজিওগ্রাম না করতে বলেছিলেন চিকিৎসকরা। বাড়িতে রেখে চিকিৎসার কথা বলেছিলেন। এর মধ্যেই বাবা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বরিশাল নেয়া হলে ওই দিন রাতেই তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুতে আমরা এখন এতিম হয়ে গেলাম। আমার বাবাকে মারধর করে ফেলে রেখেছিল। আহতাবস্থায় একটু পানি খেতে চেয়েছিল। এতটাই নির্মম তারা, বাবাকে একটু পানি পর্যন্ত দেয়নি। কী এমন অপরাধ করেছিল আমার বাবা? আমার বাবা কেন প্রেসক্লাবে গিয়েছিল- এই অপরাধে তাকে মেরে ফেলতে হবে? বাবা হারানোর কী বেদনা, যাদের বাবা নেই, শুধু তারাই বুঝতে পারে। ঘটনার সময় বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, আমাকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। আমি ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু আমাকে প্রেসক্লাবে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরে পুলিশ আহতাবস্থায় বাবাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। আমার বাবাকে কারা, কিভাবে মেরেছে- সব ভিডিওতে বলেছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার চাই।’

    মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে বরগুনা শহরের পৌর সুপারমার্কেটের সামনের সড়কে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মনববন্ধনে নিহত সাংবাদিকের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী অংশ নেন। এতে নিহতের স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে বক্তব্য দেন।

    পুলিশের ভাষ্য
    বরগুনা সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘মামলার পর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে৷ কিন্তু তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। ফলে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। মামলাটির তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে ওই দিন প্রেসক্লাবে মাসউদকে মারধরের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। সেখানে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। এগুলো গুছিয়ে মামলার চার্জশিট দেয়া হবে।

    মঙ্গলবার মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। একজন আসামির স্বজন জানিয়েছেন, ‘তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। জামিন পেলে বরগুনা ফিরে যাবেন।’
    সূত্র : ডয়চে ভেলে

    আরও খবর

    Sponsered content