ডেস্ক রিপোর্ট ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ , ২:৩০:৪৫ অনলাইন সংস্করণ
সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে গল্পে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। পাঠ্যপুস্তকে এমন বিষয় থাকার প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। পাঠ্যপুস্তকে এমন বিষয় অন্তর্ভূক্ত করায় এর প্রতিবাদে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেছেন এই শিক্ষক। এ ঘটনার পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে আর ক্লাস নিতে না যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে রোববার রাতে নিজের ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তিনিও আর ক্লাসে ফিরবেন না।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব লিখেছেন, আজকে (রোববার) আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে (রাত ১১টা) এইমাত্র ফোন করে জানানো হয়েছে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস না নিতে না যাই। আমি জানি না, হঠাৎ কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি।
গতকাল অপর একটি স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, আমার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ইমেইল ডিজএবল করে দেয়া হয়েছে। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
গত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ প্রতিবাদ জানান। এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষক
এদিকে, রোববার রাতে শিক্ষক আসিফ মাহতাবের সঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার ফোনালাপের একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কল রেকর্ডে শোনা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কর্মকর্তা শিক্ষক আসিফকে আগামীকাল (সোমবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়ার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তটি জানাচ্ছেন। তখন শিক্ষক আসিফ এ কলের সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিপরীত পাশে থাকা ব্যক্তির কাছে অফিসিয়াল বার্তার কথা জানতে চান। তিনি বলেন, আগামীকাল আমার ক্লাস আছে। সেক্ষেত্রে আমাকে এটার সত্যতা নিশ্চিত করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তখন বিপরীত দিক থেকে বলতে শোনা যায়, একচুয়ালি আমি এ সেকশনেই আছি। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমাকে আপনার এ তথ্য জানানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি আপনাকে সে তথ্যটাই জানিয়ে দিলাম। যদি অফিসিয়াল কোনো নোটিশ থাকে, পরে সেটি শেয়ার করব।
বিষয়টি নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, আসিফ মাহতাব উৎস ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তার সাথে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার কর্মী এবং তাদের চুক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ক্যাম্পাসে সবার মাঝে সহযোগিতামূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করে।
আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহাল না করলে ব্রাক সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কটের ডাক: এদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করার সংবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল। সোমবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কাউন্সিল সভাপতি বলেন, ড. আসিফ মাহতাব ১৯ জানুয়ারি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিউটে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সেমিনারে পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডার এর নামে ইসলাম নিষিদ্ধ সমকামিতাকে উৎসাহিত করার গল্পের উদ্ধৃতি দিয়ে সমকামিতা থেকে ৯২% মুসলমানদেরকে সতর্ক করতে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ বক্তব্যের কারণে লেকচারার আসিফ মাহতাবকে শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে সমকামিতাকে প্রতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, ৯২% মুসলমানদের দেশে ট্রান্সজেন্ডারের নামে সমকামিতা দেশের মানুষ যেমন মেনে নিবে না তেমনি লেকচারার আসিফ মাহতাব কে পাঠদান থেকে বিরত রাখা সহ্য করবে না।
তিনি বলেন, লেকচারার আসিফ মাহতাব কে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ যদি পুনরায় পাঠদানের ব্যাবস্থা না করে, তবে দেশের ৯২% মুসলমানরা শুধু ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় নয় ব্রাক সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কট করতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে আসিফ মাহতাব বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নিয়ম হলো- কয়েকটি ক্লাস করানোর পর চুক্তি করে। আমি এরই মধ্যে একটি ক্লাস করিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে তারা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল, সেটি সবার বোঝার কথা।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমি বাচ্চাদের পক্ষ নিয়ে কথাগুলো বলেছি যে, বাচ্চারা ভালো কিছু শিখছে না। কিন্তু ব্র্যাক এই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি অনৈতিক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আগ থেকেই ট্রান্সজেন্ডার নীতি প্রচারে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ ছিল। তাদের এমন সিদ্ধান্তে সেটি আবারো প্রমাণিত হলো।