প্রতিনিধি ১০ জানুয়ারি ২০২৪ , ৩:৫৮:৪৬ অনলাইন সংস্করণ
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা হচ্ছে আগামীকাল। দ্বাদশ সংসদে নির্বাচিত সদস্যরা আজ সকাল ১০টায় শপথ নেবেন। আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় শপথ নেবেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এবারের মন্ত্রিসভায় কে কে আসছেন, পুরনোরা বাদ পড়ছেন কারা-এমন কৌতূহল রাজনীতিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের। যাঁরা এবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরাও প্রধানমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন তাঁদের নাম থাকছে কি না।
নতুন মন্ত্রিসভার শপথের দিন বৃহস্পতিবার, এটা গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে হবে শপথ গ্রহণ। অনুষ্ঠানের সবরকম প্রস্তুতি চলমান। তবে মন্ত্রিসভায় সদস্য হিসেবে কারা থাকবেন সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি তিনি।
সূত্র জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এবারের মন্ত্রিসভা হবে আরও স্মার্ট। এমন নেতারাই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাবেন, যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতো রাতদিন সারা দেশ চষে বেড়াতে পারবেন। দক্ষতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন নেতারাই মন্ত্রিসভায় আসবেন।
এ ছাড়া কর্মীরা চান, ঢাকাসহ সারা দেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার যোগ্যতা রাখেন এমন ব্যক্তিত্বদের মন্ত্রিসভাভুক্তি হোক। রাজনৈতিক মহল ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ ৫০ সদস্যের মন্ত্রিসভা হবে। মন্ত্রিসভার এক কর্মকর্তা বলেন, সর্বশেষ দুটি নির্বাচনোত্তর সরকার গঠন ৫০ সদ্যস্যের মধ্যেই ছিল। গত নির্বাচনে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা এবং এর আগেরবার দশম নির্বাচনে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। বুধবার সকালে সংসদ সদস্যদের শপথ ও সংসদ নেতা নির্বাচন হবে। পরদিন বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথ হবে সন্ধ্যা ৭টায়। এরপর মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নতুন সরকারের যাত্রা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের মতো এবার মন্ত্রিসভায়ও থাকছে চমক। আসতে পারে বেশকিছু নতুন মুখ।
এরই মধ্যে মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সচিব মাহবুব হোসেন এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
এবারের মন্ত্রী সভায় দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে অনেকের। অনেকে বাদ পড়বেন। এরই মধ্যে ছয়জনের বাদ পড়ার বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রমোশন হতে পারে বেশ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর।
মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন, এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা। একাধিক নেতা এ বিষয়ে বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। এ বিষয়ে কোনো কমেন্ট করতে চাই না। আবার কেউ কেউ বাদ পড়া, যুক্ত হওয়া নিয়ে কথা বললেও তারা নাম প্রকাশ করতে চান না।
দলীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বাছাই করে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিভিন্ন সেক্টরে তাদের বেশ কাজ রয়েছে। তাদের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসাদের সুনির্দিষ্ট সেক্টরে কাজে লাগাতে পারেন।
এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক আমলা ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাছিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, আইইবিরর প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও আইনের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেটরত্ন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
এর বাইরে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নও আলোচনায় আছেন। কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, রুমানা আলী, ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলসহ অনেকের কথা আলোচিত হচ্ছে।
এছাড়া, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও আসতে পারেন এবারের মন্ত্রিসভায়।
পুরোনোদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনসহ অনেকেই মন্ত্রী পরিষদে থাকছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে অনেকের দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে।
পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের।
তবে অনিশ্চিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, বন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের ভাগ্য।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়নেই বাদ পড়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়া, মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি- পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এই ছয়জন নতুন মন্ত্রিসভায় আসছেন না এমনটা মোটামুটি নিশ্চিত বলে আলোচনা চলছে।
তবে আরও কয়েকজন বাদ পড়তে পারেন এবারের মন্ত্রিসভা থেকে। এর মধ্যে বয়স ও শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নেও চমক দেখিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এনেছিল ৯২ নতুন মুখ। বাদ দিয়েছিল প্রায় ৬৯ এমপিকে। দীর্ঘমেয়াদি নেতৃত্বের বিবেচনায় তরুণ এবং কাজের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। নেত্রী বলতে পারবেন বিষয়টি। আমি কিছুই জানি না।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি একটা ভালো মন্ত্রিসভা হবে। তরুণ-প্রবীণের সমন্বয় হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কারিগররা থাকবেন এই মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রী পরিষদ সাইজেও হবে মাঝারি।
৭ জানুয়ারি রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২২২টিতে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পায়। আজ এমপিরা সংসদ ভবনে শপথবাক্য পাঠ করবেন। এরপর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক। সেখানে সংসদ নেতা, উপনেতা নির্বাচন করা হবে। সিদ্ধান্ত হতে পারে চিফ হুইপ ও হুইপের ব্যাপারেও।
এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন রাষ্ট্রপতি। আগে প্রধানমন্ত্রী পদধারীকে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি। এরপর শপথ নেবেন নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আওয়ামী লীগের এক সূত্র জানান, সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, মন্ত্রিসভা গঠনেও নির্বাচিত এমপিদের মধ্য থেকে সব শ্রেণি-পেশার সমন্বয় থাকবে।