আল হেলাল, সুনামগঞ্জ: ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১২:১৩:৫২ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জে আলোচনা ও বাউল গান পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) এর ১২২ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে চলে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাছনরাজা মিলনায়তনের মহতি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো.শামছুল আবেদীন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাবসেক্টরের যুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার এডভোকেট আলী আমজাদ।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল এর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রওনক বখত,সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান পীর,সাবেক সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, সহ-সভাপতি মো.জসিম উদ্দিন,বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বাউল শাহজাহান সিরাজ,উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি মো.জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক ও সংস্কৃতি কর্মী কেজি মানব তালূকদার,সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজান,সাংবাদিক হোসাইন মাহমুদ শাহীন ও গীতিকার নির্মল কর জনি প্রমুখ।
এ সময় প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সেলিম আহমদ তালুকদার,রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী,সুরমা ইউপি সদস্যা তানজিনা বেগম ও গীতিকার হীরন খানসহ স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের উপর দেশাত্ববোধক গানসহ কামালগীতি পরিবেশন করেন সাধক কবি দূর্বিণ শাহের শিষ্য প্রবীণ বাউল তছকীর আলী,জেলা গীতিকার ফোরামের সভাপতি বাউল শাহজাহান,বাউল শফিকুন নূর,বাউল আমজাদ পাশা,বাউল যোবায়ের বখত সেবুল,সাংবাদিক বাউল আল হেলাল,সাংবাদিক বাউল রাজু আহমেদ রমজান, বাউল সেলিম আহমদ, বাউল শামীম আহমেদ ও ক্বারী আমিরুল ইসলামসহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন,বাংলাদেশের মরমী সংস্কৃতির উজ্জল নক্ষত্র ও সুনামগঞ্জের পঞ্চরতœ বাউলের মধ্যমণি বাউল কামাল পাশা,শুধু গান রচনাই নয় ঐতিহাসিক নানকার আন্দোলন,৪৭ এর গণভোট আন্দোলন,৫২ এর ভাষা আন্দোলন,৫৪‘র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন,৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও ৭০ এর নির্বাচন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অবদান রাখেন। ৭০ এর পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন উপলক্ষে হাওরাঞ্চলে গণ সংযোগে আগত আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভামঞ্চে নৌকার পক্ষে গণসঙ্গীত পরিবেশন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট ও সেলা সাবসেক্টরের বিভিন্ন মুক্তিফৌজ ক্যাম্পে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধাদের উৎসাহিত করে জাগরনী গান পরিবেশনের পাশাপাশি এই শিল্পী স্বাধীকার স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে নিরলস শ্রম সাধনা অব্যাহত রাখেন। বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদের সংগ্রহে এই প্রয়াত লোককবির প্রায় দেড় হাজারের বেশী গান রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন,গত ২৫ অক্টোবর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী কর্তৃক বাউল কামাল পাশা কে শিল্পকলা (সংগীত) ক্ষেত্রে মরণোত্তর একুশে পদক ২০২৪ মনোনয়নের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেন।
এর আগে ২০২০-২০১৮ইং সনে সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ,২০১৭ইং সালে সাবিরুল ইসলাম, ২০১৪ইং সনে শেখ রফিকুল ইসলাম এবং ২০১৩-২০১১ইং সালে মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী,বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) কে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করার জন্য পর পর ৯বার প্রস্তাবনা প্রেরণ করলেও এখন পর্যন্ত এই শিল্পীর ভাগ্যে জোটেনি মরণোত্তর স্বীকৃতি।
২০২০ইং সনে চিকিৎস্যাবিদ্যায় স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত অধ্যাপক ডাঃ উবায়দুল কবীর চৌধুরীর লিখিত প্রতিবেদনের উদ্বৃত্তি দিয়ে তারা বলেন,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সর্বপ্রথম গণসংগীত রচয়িতা হচ্ছেন ভাটি বাংলার বিখ্যাত বাউল শিল্পী কামাল পাশা। যিনি ৫২ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি দিরাই থানার রাজানগর কেপিসি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে,“শেখ মুজিব কারাগারে আন্দোলন কেউ নাহি ছাড়ে,সত্যাগ্রহে এক কাতারে সামনে আছেন সামাদ ভাই ঢাকার বুকে গুলি কেন ?
নুরুল আমিন জবাব চাই” শীর্ষক ভাষা আন্দোলন উপলক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক দেশাত্ববোধক গানে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নামটি স্বগর্বে স্বমহীমায় সর্বপ্রথম উচ্চারন করেছিলেন।
তারা বলেন,হুইল চেয়ারে চলাচলকারী দেশের সর্বশেষ বেঁচে থাকা ৩ জনের অন্যতম যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম সামছুল ইসলাম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছেন, বাউল কামাল পাশা রচিত ও পরিবেশিত ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে “তোমরা অস্ত্র ধরোরে বীর বাঙ্গালী ভাই পাঞ্জাবী আসিলো দেশে বাঁচার উপায় নাই” ও “মুজিব বাইয়া যাওরে তোমার ৬ দফারি নাও নিপীড়িত দেশের মধ্যে জনগনের নাও মুজিব বাইয়া যাওরে” ইত্যাদি গান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে মারাত্মকভাবে উৎসাহিত করতো। বাউল কামাল পাশাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানের দাবী জানানো হয় সভায়।
উল্লেখ্য ৬ ডিসেম্বর “দীন দুনিয়ার মালিক খোদা এত কষ্ঠ সয়না তোমার দিল্কি দয়া হয়না’ “চাইনা দুনিয়ার জমিদারী কঠিন বন্ধুরে”, “নৌকা আগে আগে চলেরে ঐ নৌকাটা শেখ মুজিবের”, “সাজিয়ে গুজিয়ে দে”,“কাঙ্কের কলসী জলে গিয়াছে ভাসি” ও প্রেমের মরা জলে ডুবেনা’ সহ হাজার হাজার গানের রচয়িতা গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশার (কামাল উদ্দিন) এর ১২২ তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০১ সালের এই দিনে তদানীন্তন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার দিরাই থানার ভাটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন এই মরমী সাধক। মৃত্যুবরন করেন ১৯৮৫ সালের ৩রা মে।