আল হেলাল, সুনামগঞ্জ: ২২ নভেম্বর ২০২৩ , ১:৪৭:৩৯ অনলাইন সংস্করণ
২০০৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমার সম্পাদনায় গানের সম্রাট কামাল উদ্দিন” নামে একখানা গানের বই প্রকাশিত হয়। বইটিতে একটি প্যারা ছিল, “বিভিন্ন আন্দোলনে কামাল উদ্দিনের ভূমিকা।
এতে উল্লেখ করা হয়, “বৃটিশ আমলে বাঘ ও বন্যপশুর দখলমুক্ত করে জঙ্গল রকম ভূমি আবাদ করা স্বত্বেও নানকার শ্রেণীর কৃষকদেরকে বঞ্চিত করে সরকার জমিদারদের অনুকুলে ভূমি মালিকানা হস্থান্তর করে। তালুকদার ও মিরাশদার এর ন্যায় নানকাররাও যাতে ভূমি মালিক হিসেবে তাদের মানবিক দাবীকে প্রতিষ্টিত করতে পারে সে লক্ষ্যে ১৯৩৫ সালে কামাল উদ্দিন জমিদারদের আগ্রাসন এর বিরুদ্ধে নানকার বিদ্রোহ শুরু করেন।
নিজ গ্রাম ভাটিপাড়া,রফিনগর ইউনিয়ন,দিরাই শাল্লা নির্বাচনী এলাকা থেকে শুরু করে তার এ প্রজাবিদ্রোহ সমগ্র পূর্ববঙ্গে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন কংগ্রেস নেতা করুনাসিন্ধু রায় ও কৃষক নেতা লালা সরবিন্দু দে বুলি বাবু সহ অনেক নেতারা কামাল উদ্দিনের স্থানীয় এ আন্দোলনকে মডেল ধরে এটিকে জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করেন।
ফলশ্রতিতে ১৯৪১ সালে প্রজাতন্ত্র আইন পাশ হয়। সামন্তবাদের বিরুদ্ধে আজীবন বিদ্রোহী কামাল উদ্দিন স্বদেশ আন্দোলন, গণভোট ও ভাষা আন্দোলনেও অংশ নেন। ১৯৪৭ সালের গনভোট চলাকালে দিরাই শাল্লায় সর্বত্র ছিল নির্বাচনের আমেজ। দু উপজেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটাররা স্বতস্ফুর্তভাবে পাকিস্তানের পক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ফলশ্রুতিতে অক্ষয় কুমার দাস পাকিস্তানের সবকটি সরকারের আমলে একাধিকবার মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন।
৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে গনতন্ত্রী দলের সামাদ মিয়া পরবর্তীতে আব্দুস সামাদ আজাদ এবং হারিকেন প্রতিক নিয়ে মুসলিম লীগের আবুল হোসেন মোক্তার তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অবতীর্ন হন।
এ সময় গোটা দিরাই শাল্লা জুড়ে মুসলীমলীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারনা শুরু হয় আওয়ামী মুসলীম লীগের নেতৃত্বে। হাতিয়া গ্রামের মাওলানা সাদিকুর রহমান,রাড়ইল গ্রামের আব্দুল আহাদ চৌধুরী, চন্ডিপুরের বশির মিয়া.হাজী কবির উদ্দিন, নেজাবত মিয়া,আব্দুর রউফ, ভরারগাঁয়ের ডাঃ আব্দুন নূর চৌধুরী, জগদলের আব্দুল হক মাষ্টার, দিরাইয়ের ক্ষিতিশ নাগ, সাকিতপুরের ওয়াকিব মিয়া,নগদীপুরের ধন মিয়া,মাছিমপুরের শরাফত মোড়ল, সাকিতপুরের আব্দুল গফুর সরদার, রফিনগরের আগুন মোড়ল,আটগাঁওয়ের মতিউর রহমান চৌধুরী,জগদলের ফয়জুর রহমান,কলিয়ার কাপনের হাছিল মিয়া,ধলের বাদশা চৌধুরী,হাতিয়ার গুলজার আহমদ,ভাটিপাড়ার ফয়জুন্নুর চৌধুরী,কুলঞ্জের আঃ হক,গনকার গতু মিয়া, কলিয়ার কাপনের হাছিন মিয়া, রেজান মিয়া, রফিনগরের মৌলানা আব্দুল কাইয়ুম, নোয়াগাঁওয়ের লক্ষীকান্ত দাস, বলনপুরের হিটলাল দাস, বলরামপুরের রমজান আলী. রাজেন্দ্র পুরকায়স্থ,ভাটিপাড়ার মহু তালুকদার,বাছন মিয়া, ইয়ারাবাদ কান্দিগাওঁয়ের হাশিম মোড়ল,আগুয়াই গ্রামের লাল মোহাম্মদ চৌধুরী,উজান গায়ের আব্দুল খালেক,কাশিপুরের শাহ আলম মিয়া,মনুয়ার ডাঃ আব্দুল হক, নারকেলার মহীম দাস ও
শ্রীহাইল গ্রামের আব্দুল মান্নান চৌধুরী প্রমুখ নেতাকর্মীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে সামাদ আজাদকে বিজয়ী করে ভাটি অঞ্চলে প্রগতির রাজনীতির ধারাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
গনভোট ও যুক্তফ্রন্টের এ দুটি নির্বাচনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাউল কামাল উদ্দিন ও শাহ আব্দুল করিম। আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ বলেছেন, “যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন চলাকালে ভাটি অঞ্চলের গনসংযোগে আসতে পারেননি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ.কে.এম ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ জাতীয় নেতারা।
বিশাল হাওর অঞ্চলের বৃহত্তর নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হিসেবে প্রচারাভিযান চালানো আমার একার পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল। এ সময় কামাল ভাই ও আব্দুল করিম এ দুই বাউল শিল্পী নৌকা ও আওয়ামী মুসলিম লীগের তথা যুক্তফ্রন্টের সমর্থনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিপক্ষে পালাগান (মালজুড়া) গেয়ে ১০ গ্রামের ভোটারদেরকে আকৃষ্ট করতেন। আমার বিজয় ও আওয়ামী রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় এদুজন বাউল শিল্পীর অবদান আজীবন কিংবদন্তী হয়ে থাকবে”।
উল্লেখ করা একান্ত প্রয়োজন যে,যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে দিরাই-শাল্লা ও জগন্নাথপুর থানা নিয়ে ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনের একটি আসন। ঐ আসনে তৎকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগ এর সারা সুনামগঞ্জ মহকুমা জুড়ে একটি রাজনৈতিক ঘাটি থাকলেও বর্তমান জোটগত নির্বাচনের ন্যায় যুক্তফ্রন্টের একটি বৃহৎ জোট হওয়ায় সুনামগঞ্জ মহকুমার কোন আসনেই আওয়ামী মুসলিম লীগ দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন পাননি। অথচ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জগন্নাথপুরের আছাফুর রাজা চৌধুরী ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আকমল আলী মোক্তারের নেতৃত্বাধীন মহকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের রাজনৈতিক দলটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি ছিল সুনামগঞ্জ।
শেরেবাংলা একেএম ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজা পার্টি,হাজী মোঃ দানেশ ও সিলটি মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী দল,মৌলানা আতাহার আলীর নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি ও মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট নামক মহাজোট বা সম্মিলিত বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক মঞ্চ সুনামগঞ্জের ৫টি আসনেই প্রার্থী দেয়। তবে মহকুমার কোন আসনেই আওয়ামী মুসলিম লীগ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন পাননি। দিরাই শাল্লা জগন্নাথপুর আসনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন দিরাই থানার মাটিয়াপুর নিবাসী জনাব আবুল হোসেন মোক্তার। যিনি সুনামগঞ্জের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মেজর অব: ইকবাল হোসেন চৌধুরীর পিতা। তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন গণতন্ত্রী দলের নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ।
মুসলিম লীগের শক্তিশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ভাষা সৈনিক আব্দুস সামাদ আজাদের নৌকা প্রতীকের পক্ষে সেই দিনগুলিতে শাল্লা থানায় সবচেয়ে গৌরবোজ্জল ভূমিকা পালন করেছেন শ্রীহাইল গ্রামের প্রখ্যাত যুবনেতা ও তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা আব্দুল মান্নান চৌধুরী।
মহকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আকমল আলী মোক্তার বলেছেন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় আব্দুল মান্নান চৌধুরী মহকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগের কার্যকরী সদস্য ছাড়াও শাল্লা থানা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুনামগঞ্জ আগমনে দেওয়ান আনোয়ার রাজা চৌধুরীকে সভাপতি ও সাংবাদিক মুহাম্মদ আবদুল হাই কে সাধারণ সম্পাদক করে সুনামগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের যে কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন আব্দুল মান্নান চৌধুরী। একই সময়ে তিনি শাল্লা থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেন। জীবদ্ধশায় আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ শ্রীহাইলের এই মান্নান চৌধুরীর অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতেন। বাউল কামাল পাশা,বাউল শাহ আব্দুল করিমের পাশাপাশি আব্দুল মান্নান চৌধুরীর কথাই বেশি বলতেন তিনি।
জনাব সামাদ আজাদ সাহেবের কাছ থেকেই আমি জানতে পারি,১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ এমএনএ ও প্রাদেশিক পরিষদ এমপিএ নির্বাচনে আব্দুল মান্নান চৌধুরী দিরাই-শাল্লা আসনে নৌকা প্রতীকে দলীয় ২ প্রার্থী যথাক্রমে আব্দুস সামাদ আজাদ ও অক্ষয় কুমার দাশের পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে দিরাই-শাল্লা আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী আব্দুস সামাদ আজাদের পক্ষে বলিষ্ট নেতা হিসেবে পালন করেন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা।
১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের শাসনামলে একই আসনে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আলী আমজাদ চৌধুরীর পক্ষে তার মজবুত অবস্থান ছিল। ১৯৮৬ সালে নৌকা প্রতীকে ৮ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপির বিজয়েও নিরলস শ্রম সাধনা অব্যাহত রাখেন। ১৯৭০ ও ৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর দিরাই শাল্লা সফরকালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সভামঞ্চে অবস্থানকারী নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি।
বিরোধী দলীয় নেতা থাকাবস্থায় ১৯৮৬ সালে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন। ১৯৯০ সালে দিরাই ও শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে আব্দুল কদ্দুছ ও আব্দুল মান্নান চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি আব্দুস সামাদ আজাদ তাদের পক্ষে কয়েকটি নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
নির্বাচনে আলহাজ্ব আব্দুল কদ্দুছ পরাজিত হলেও বিজয়ী হন আব্দুল মান্নান চৌধুরী। তবে এই দুই প্রার্থীকে দিরাইয়ে একমঞ্চে জনসমক্ষে পরিচয় করিয়ে দেন সামাদ আজাদ।
একজন সাংবাদিক হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম জানতাম। কারণ আমার বড় চাচা ডাঃ আব্দূন নূর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান চৌধুরী উভয়েই যুক্তফ্রন্টের নির্বাচিত এমপি আব্দুস সামাদ আজাদের ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন।
এ সুবাদেই আমাদের পরিবারে আব্দুল মান্নান চৌধুরীর নামডাকের পাশাপাশি আলাদা গ্রহনযোগ্যতা ছিল। তিনি নিজ থানা শাল্লার পাশাপাশি দিরাই-শাল্লা এলাকায় সবসময়ই সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিলেন। একজন সৎ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার আলাদা গ্রহনযোগ্যতা ছিল। সর্বশেষ ঢাকার আনন্দ কমিউনিটি সেন্টোরে তাঁর এক মেয়ের বিয়েতে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যান ভাটি বাংলার প্রাণপুরুষ জননেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি। এখানেই তাঁর সাথে আমার শেষ দেখা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠামন্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান বলেছেন,আব্দুল মান্নান চৌধুরী ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মুলধারার রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলেন। শাল্লা উপজেলায় এমপি হওয়ার মত তৎকালীন সময়ে কোন যোগ্য নেতা থাকলে তিনি ছিলেন আব্দুল মান্নান চৌধুরী।
কিন্তু সময় সুযোগ ও অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে তিনি আব্দুস সামাদ আজাদের ব্যক্তিগত মনোনিত প্রার্থী হিসেবে অত্যধিক পছন্দের ব্যক্তি হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে প্রার্থী বা এমপি হতে পারেননি। আজ তার সুযোগ্য পুত্র তারুন্যের প্রতীক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন চৌধুরী) পিতার রাজনৈতিক পদাংক অনুসরণ করেই স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতাসীন দল থেকে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ইতিমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ হতে পদত্যাগও করেছেন। আমার নিজ উপজেলা দিরাই বর্তমানে হাইব্রীড ও অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগের দখলে। জননেতা আলহাজ্ব আব্দুল কদ্দুছ ও আমার পিতা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এন.এম মাহমুদুর রসুল সাহেবের অকাল প্রয়ানে মূলধারার আওয়ামীলীগ একেবারে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাড়িয়েছে। এখন রাধানগরের নিবেদিত আওয়ামী লীগ কর্মী রমজান মিয়া,চন্ডিপুরের আব্দুল আওয়াল,আব্দুল হাশিম,সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ অকাল প্রয়াত এবং রনধা প্রসাদ চৌধুরীর মত নিবেদিত নেতাকর্মীদের খবর কেউ রাখেনা। ভাটিপাড়ার যে বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) সাহেবের জাগরনী গানে ৫৪ থেকে ৭৩ পর্যন্ত নৌকার জয়গানে জয়ধ্বনী উঠতো সেই কামাল পাশাকে বর্তমান নেতৃত্ব ভূলে গেছে। এ অবস্থায় নতুন পুরনো সমন্বয়ে মহাণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দিরাই-শাল্লাকে পূণর্গঠন করতে মূলধারার নেতৃত্ব বিকশিত করার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
আর এজন্যই প্রয়োজন আব্দুল মান্নান চৌধুরীর মত সৎ ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী আল আমিন চৌধুরীর।
আরো উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান চৌধুরী ১৯৩২ ইং সনের ১লা মার্চ শাল্লা থানার শ্রীহাইল গ্রামে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। মৃত্যুবরন করেন ২০১১ ইং সনের ২রা জানুয়ারি। রেখে যান স্ত্রী, ৫ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানকে। পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার আজমেরীগঞ্জ থানার বিরাট হাইস্কুল থেকে এমই পাশ করেন তিনি। একই স্কুলে অধ্যয়ন করেন কাশিপুর গ্রামের কৃতিসন্তান এডভোকেট আব্দুল মতিনসহ তৎকালীন সময়ের দিরাই শাল্লা অঞ্চলের আরো অনেক শিক্ষার্থীরা। পরে মান্নান চৌধুরী বাণিয়াচঙ উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি অধ্যয়ন করেন। স্থানীয়ভাবে অংশগ্রহন করেন ভাষা আন্দোলনেও। আব্দুল মান্নান চৌধুরীর অগ্রজ বংশধররা দিরাই থানার জগদল ইউনিয়নের হোসেনপুর পীরবাড়ির বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন হোটেল উপবনের ম্যানাজার মো.নজরুল ইসলাম।
সাংবাদিক পীর মাহবুবুর রহমান দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার একটি সংবাদে উল্লেখ করেন,একটি অজপাড়াগাঁ থেকে সাতটি সন্তানকে সু-প্রতিষ্ঠিত করা চাট্টিখানি কথা নয়। নিজ যোগ্যতায় অসম্ভবকে সম্ভব করে জীবিত অবস্থায় রাষ্ট্রের সম্মানজনক খেতাব ‘রত্নগর্ভা’ মা হিসেবে স্বীকৃতি পান রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান চৌধুরীর সহধর্মীনি জিন্নাতুন্নেছা চৌধুরী।
তার স্বামী শাল্লা উপজেলার অভিজাত ঘরের সন্তান আব্দুল্লাহ মন্নান চৌধুরী। তিনি ছিলেন শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান। বড় ছেলে বর্তমান বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। দ্বিতীয় ছেলে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণকারী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন চৌধুরী) উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান। আরও দুই ছেলে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-হোসাইনী সহযোগী অধ্যাপক (লোক প্রশাসন বিভাগ) ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-বাকী সহকারী অধ্যাপক (অর্থনীতি বিভাগ)। তৃতীয় পুত্র চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-আহসান মুমিন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে চৌধুরী খুজেন্তা আখতার শারমিন হবিগঞ্জে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন কনিষ্ট কন্যা চৌধুরী খুজেন্তা আখতার নাজরীন সুইডেনে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন।
পিতা ও মাতার অবদান সম্পর্কে এই দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে দিরাই-শাল্লা আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী) বলেন, আমাদের বর্তমান পজিশনে আসার পেছনে বলতে গেলে সব অবদান আমাদের পিতা-মাতার। আমার পিতা রাজনীতি ও সমাজসেবায় যুক্ত থাকায় আমাদের প্রতি খেয়াল রাখার সুযোগ হয়তো কম ছিল। কিন্তু পিতার আদর যত্ন ভালবাসা ও দোয়া আমাদেরকে সেবামূলক কর্মকান্ডে সবসময় অনুপ্রাণীত করে যাচ্ছে। পিতামাতা আমাদের সকল ভাইবোনকে সুযোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। তাই যোগ্যতা ও দক্ষতার বিচারে আমরা দিরাই শাল্লাবাসীকে এখন আলোকিত করতে চাই। কারো প্রতি হিংসা বিদ্ধেষ নয় বরং সকলের প্রতি সমান শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অক্ষুন্ন রেখে দিরাই শাল্লাকে একটি আলোকিত জনপদে উন্নীত করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও নৌকার মনোনয়ন চাই।
আল-আমিন চৌধুরীর বাড়ী শাল্লা উপজেলা। বৃটিশ আমলে ১৯৩৭ সালে আসাম পার্লামেন্ট,পাক আমলে পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এবং স্বাধীনতার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ১৭টি জাতীয় নির্বাচন অতিবাহিত হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু কোন নির্বাচনেই শাল্লার কোন জনপ্রতিনিধি এমপি হননি বা হওয়ার চেষ্টা করেননি। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের একটি ছোট্ট ও অবহেলিত জনপদ হিসেবে শাল্লাবাসীরও অধিকার আছে জাতীয় জনপ্রতিনিধিত্বের। আমরা দিরাইবাসী শুধু তাদের কাছ থেকে নিয়েছি প্রকারান্তরে তাদেরকে কোন কিছুই দেইনি। এখন ঋন শোধ করার পালা।
গানের সম্রাট বাউল কামাল পাশা তার একটি দেশাত্ববোধক গানে শাল্লা থানার চিত্রটি উপস্থাপন করতে গিয়ে গেয়েছেন,পূবেতে বাল্লা আছে পশ্চিমে থানা শাল্লা,বর্ষায় নাও হেমন্তে বাও দয়া করো আল্লাহ,সমতল সীমান্ত হাওড় তিনে মিলে যার পরিচয়। আমরা সিলেটবাসী কিসের ভয়,যে মাটিতে শাহজালাল ঘুমিয়ে আছেন সবসময়।। আদা মরিচ পিয়াজ হলুদ এই সিলেটে সব আছে,স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ভাই জায়গায় জায়গায় বসেছে। এ কামাল কয় দু:খের বিষয় এমএ পড়ার সুযোগ নয়। যে মাটিতে শাহজালাল ঘুমিয়ে আছেন সব সময়। অর্থাৎ একসময় বৃহত্তর সিলেট জেলায় সবকিছু থাকলেও এম.এ পড়ার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিলনা। সময়ের ব্যবধানে এখন সবকিছুই সাধিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও পিছিয়ে আছে শাল্লা। অথচ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে একটি পশ্চাৎপদ জনপদকে যেকোন মূল্যে এগিয়ে নেওয়ার কোন বিকল্প নেই। তাই শাল্লা থেকে জাতীয় সংসদে এমপি নির্বাচিত করার দাবী এখন দিরাই শাল্লাবাসীর সময়ের এবং প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।
সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল,প্রতিষ্ঠাতা বাউল কামাল পাশা সংস্কৃতি সংসদ,সুনামগঞ্জ। ০১৭১৬-২৬৩০৪৮