• লিড

    গাজার পরিস্থিতি ‘মুক্ত পৃথিবীর’ নেতাদের জাতিগত নির্মূলের উদাহরণ

      নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ , ৩:৩২:৪৯ অনলাইন সংস্করণ

    ররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন

    গাজার পরিস্থিতি ‘মুক্ত পৃথিবীর’ নেতাদের সহায়তায় জাতিগত নির্মূলের ক্লাসিক উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

    তিনি বলেছেন, “গাজার পরিস্থিতি শুধু জাতিগত নির্মূলের একটি উদাহরণই নয়, বরং ‘মুক্ত বিশ্বের নেতাদের এবং মানবাধিকার, মানবিক আইন এবং সমস্ত নীতি ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রবক্তাদের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় শক্তির মাধ্যমে করা গণহত্যাও’।”

    তিনি বলেন, ‘ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ মোটেও যুদ্ধ নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি বর্বর ও সম্মিলিত শাস্তি এবং নিরপরাধ বন্দী নারী-পুরুষ এবং বিশেষ করে শিশুদের হত্যা করা, যারা যুদ্ধ করতে পারে না।’

     

    শনিবার (১১ নভেম্বর) সৌদি আরবের রিয়াদে অষ্টম বিশেষ ইসলামিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

    ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে যৌথ আরব-ইসলামিক অসাধারণ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    মোমেন বলেন, ‘এই যুদ্ধ শহর, জনপদ এবং একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করছে। পরিকল্পিতভাবে একটি দখল করা স্থানের জনগণকে তাদের খাদ্য, বাসস্থান, পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং অবশ্যই একটি নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।’

     

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করে এবং এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।’

     

    ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ-এর বিখ্যাত ইহুদিবাদী লেখক আরি শাভিতের ইসরাইলি নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমরা হয়তো এখনো ফিরতে পারি। দখলদারিত্বের অবসান, ইসরাইলিদের সেটেলমেন্ট বন্ধ, ইহুদিবাদের সংস্কার, গণতন্ত্র বাঁচানো, দেশ ভাগ করা এখনো সম্ভব হতে পারে। তা না হলে, আপনারা দেশ ছেড়ে চলে যান এবং প্রত্যেক ইসরাইলির অবশ্যই বিদেশী পাসপোর্ট আছে। আপনাদের অবশ্যই বন্ধুদের বিদায় জানাতে হবে এবং সান ফ্রান্সিকো, বার্লিন বা প্যারিসে যেতে হবে।’

    মোমেন বলেন, ‘বর্তমানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে কোনো কর্ণপাত না করেই ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের নির্বিচারে হত্যা চলছে। আমি বিশ্বাস করি এই যৌথ শীর্ষ সম্মেলন দুর্বল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নির্মম যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত, বাস্তব ও প্রভাবশালী শক্তিশালী বার্তা দেবে।’

    তিনি বলেন, ‘মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি এবং অন্য ধর্ম, শ্রেণি, বর্ণ, জাতিগত পটভূমি এবং বিশ্বাসের মানুষ সারাবিশ্বে এই গণহত্যার প্রতিবাদ করছে। তবুও জায়নবাদীদের একটি দল পরিকল্পিত হত্যা করেই যাচ্ছে।’

    গত ১৬ বছর ধরে গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছে।

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিড়ম্বনার বিষয় হলো এক সময় নির্যাতিত ইহুদি জনগণ, যাদের ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় দিয়েছিল, তারা এখন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, হাসপাতাল, পরিবার ও আশা ধ্বংস করছে।’

    বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ
    প্রথমত, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। এই যুদ্ধ অন্যায় এবং সব ধরনের মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন। ইসরাইলকে অবশ্যই নারী ও শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে।

    দ্বিতীয়ত, গাজার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্য জীবন-রক্ষাকারী উপকরণের অবাধ, দ্রুত ও নিরাপদ সরবরাহের জন্য একটি মানবিক করিডোর খোলা রাখা দরকার।

    গাজার দখলদারিত্বের ফলে নিরীহ মানুষ মৌলিক প্রয়োজনীয়তা থেকে বঞ্চিত করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিসেবে আমাদের দায় বহন করা উচিত।

    তৃতীয়ত, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলি নেতৃত্বকে দায়বদ্ধ রাখা। নিরপরাধ বেসামরিক লোকদের হত্যা এবং বর্বর উপায়ে এলাকা ফাঁকা করে দেয়ায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

    এই ধরনের কাজের শাস্তি হওয়া দরকার, যেন গাজায় চলমান সঙ্ঘাত একেবারের জন্য শেষ হয়। সব বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, যেন মানুষ তাদের নিজ ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস শুরু করতে পারে।

    চতুর্থত, জাতিসঙ্ঘ, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোড ম্যাপে আমাদের সব সম্মত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমরা শান্তি চাই। দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য জাতিসঙ্ঘের রেজোলিউশন ২৪২ এবং ৩৩৮ এর অধীনে ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমান্তে পাশাপাশি বসবাসের সঙ্গে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আমাদের একটি পরিষ্কার সময়সীমার পরিকল্পনা করা উচিত।

    পঞ্চমত, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য অপরিহার্য। ফিলিস্তিনিরা আমাদের ভাই ও বোন, যারা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তাদের নিজস্ব মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

     

    গত ৭৫ বছর ধরে আমরা ইসরাইলের কর্মকাণ্ড ও দখলদারিত্বের নিন্দা করে আসছি এবং এখন সময় এসেছে সব জাতি ও বিশ্বাসের, বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ এবং সম্মান ও মানবিক মর্যাদাকে সম্মান করা মানুষদের ইসরাইল এবং এর পণ্য বয়কট করার। এই খুনের খেলা চিরতরে বন্ধ করতে হবে।

     

    অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন এবং লিগ অব আরব স্টেটসের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতা ও সরকার প্রধানদের এবং প্রতিনিধি দলের প্রধানদের অংশগ্রহণে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনটি উদ্বোধন করেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ।

    শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম ত্বহা দুই পবিত্র মসজিদের হেফাজতকারী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের নেতৃত্ব ও সৌদি আরবের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।।

    তিনি এই অসাধারণ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ ও উদার আতিথেয়তার জন্য এবং শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য করা সব ব্যবস্থার জন্য ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

    ওআইসি মহাসচিব নিশ্চিত করেন, এই আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তাদের সংহতি এবং অবিচল সমর্থন এবং ফিলিস্তিন ও আল-কুদস আল-শরিফকে সমর্থন করার দায়িত্বের প্রতি তাদের যৌথ অঙ্গীকার নিশ্চিত করার উদ্দেশে আয়োজিত।

    তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন অবিলম্বে ও স্থায়ীভাবে বন্ধ করার এবং গাজা উপত্যকায় নিরাপদ উপায়ে পর্যাপ্ত সাহায্য-সহায়তা সরবরাহের জন্য মানবিক করিডোর খোলার জন্য এবং ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান।

    ওআইসি মহাসচিব ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ওপর জোর দিয়েছেন।
    সূত্র : ইউএনবি

    আরও খবর

    Sponsered content