প্রতিনিধি ৩০ নভেম্বর ২০২২ , ৩:৫৪:১০ অনলাইন সংস্করণ
স্পেশাল ক্রাইম রিপোর্টার, সিলেট থেকেঃ বর্তমানে ইয়াবা সেবন ক্রয় বিক্রয় বেড়েই চলছে। যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা। আর এই ইয়াবা মাদক বিক্রেতাগন নিজেদের হুন্ডি মজবুত করার লক্ষ্যে নানান কৌশলে তা ছড়িয়ে দিতেছে তরুণ যুবকদের মাঝে। তরুণ প্রজন্মের সুন্দর জীবনের ইতি টানতে সর্বনাশ ডেকে আনছে মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবনকারীরা।
উৎসমুখ দিয়ে যাতে ইয়াবা না ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে সবোর্চ্চ সতকর্তা রাখতে হবে। বড় বড় রাঘববোয়ালদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা জরুরি। এসব রাঘব বোয়ালরাই দেশের যুব সমাজের মধ্যে নেশার বীজ বুনছে।
দেশে মাদক এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সর্বমহলের অভিযান চলছে। অনেক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, বহুসংখ্যক গ্রেপ্তার হয়েছে আর অনেকেই চলমান অভিযানের ভয়ে দেশ থেকেই পালিয়ে গেছে। এই অভিযান শুরুর পর থেকেই সাধারণ মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। কিন্তু মাদক নিমূর্ল কাজটি সহজ কাজ নয়। কারণ এই বিষ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে। অভিযানের মধ্যেও দেশে ইয়াবা ঢুকছে। আর এই ইয়াবা বিক্রির জন্য একটা সিন্ডিকেট কাজ করে যাচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে। কখনো নিজেদের কে পুলিশের র্যাবের সোর্স বলে পরিচয় দিচ্ছে, কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে, আবার কখনো রাজনৈতিক ক্ষমতাসীল নেতার পিএস বলে পরিচয় দিয়ে থাকে।
ইয়াবা বতর্মান সমাজের সবচেয়ে বড় কাটা। নেশার উপাদানের মধ্যে মাথাব্যথার বড় কারণ ইয়াবা। তরুণ সমাজের কাছে ইয়াবা সবাির্ধক জনপ্রিয় এবং পাচারের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সহজ। এর কারণ ইয়াবার গঠন। ছোট ট্যাবলেট আকৃতির এই নেশাদ্রব্য যে কোনো স্থানে অধিক পরিমাণ লুকিয়ে রাখা যায়। নেশাগ্রস্তদের কাছে ইয়াবা ‘বাবা’ নামে পরিচিত।
প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। এর বিস্তার এতটাই ভয়াবহ যে সামনে কোনোভাবেই এর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মাদকদ্রব্যই যদিও সমস্যার মূল কারণ কিন্তু ইয়াবা এত অল্প সময়ে এত ভয়াবহ থাবা বিস্তার করেছে যে অন্যসব মাদক গ্রহণ এর কাছে যেন নস্যি। ইয়াবার আকার, রং এবং সমাজের উঁচুস্তরে ব্যবহার ইয়াবার জনপ্রিয়তার বড় কারণ। হাত বাড়ালেই শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল সব জায়গায় ইয়াবা মিলছে। আর আকারে ছোট হওয়ায় এর বহনও সহজ। প্রায়ই চোরাইপথে এমন সব অভিনব উপায়ে ইয়াবার চালান আটক হয় যে তা পত্রিকার পাতায় পড়লে রীতিমতো শিহরণ জাগে। ইয়াবার ব্যবসায় প্রায় সব শ্রেণি-পেশার লোক জড়িত রয়েছে। অল্প সময়েই টাকার পাহাড় গড়া যায় বলেই এই ব্যবসায় এত আকষর্ণ। কোটি কোটি টাকার পাহাড়, আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ির লোভ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ইয়াবার ব্যবসায় নামাচ্ছে। এটা এমন একটি চেইন যেখানে উপর থেকে একেবারে তৃণমূল পযর্ন্ত মাদকাসক্তের হাতে পৌছে যাচ্ছে । তার খুব কম পরিমাণই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। তা’ছাড়া প্রতিদিন জড়িত হচ্ছে নতুন নতুন ব্যক্তি। আর প্রতিদিন আসক্ত হচ্ছে কোনো কিশোর বা যুবক। ইয়াবার বিষ এতটাই ভয়ঙ্কর যে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করাটা দুঃসাধ্য বলে মনে হচ্ছে।
বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইয়াবা সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যা আমাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকার করতে সক্ষম। মাদকে ঘিরে ফেলছে সমাজ। প্রতিটি স্তরের নারী-পুরুষই মাদকে আসক্ত। এত এত সচেতনতা সত্তে¡ও কিন্তু এর ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। নিত্য-নতুন মাদকের আবিভার্ব ঘটছে। বিড়ি, সিগারেট, জদার্, তামাক পাতা, গাজা, ফেনসিডিল, ভাং থেকে শুরু করে হালের ইয়াবা এখন শহরের গন্ডি পেরিয়ে গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঢুকে কালো থাবা বিস্তার করে বসেছে। যার প্রভাবে শিক্ষিত তরুণ সমাজ হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।
সবর্নাশা মাদকের দিকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ছাত্রসমাজ। অনেক ছাত্রের স্কুল ব্যাগে বই-খাতার সঙ্গে থাকছে মাদকদ্রব্য। এমন কোনো পেশা নেই যে বা যারা ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে না। ভয়টা এখানেই বেশি। যাদের অন্যদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পালন করার কথা তারাই এই পথে পা বাড়াচ্ছে।
মাদক জগতের জনপ্রিয়তার দিক থেকে ইয়াবাই এখন এগিয়ে সেবা দেন হাত বারিয়ে।
এই ইয়াবা নামক মাদকের বিস্তার এত ভয়ঙ্কর আকারে হয়েছে যে, তা শিক্ষার্থীদের বই খাতার ব্যাগে পযর্ন্ত স্থান করে নিয়েছে। মাদকে আসক্ত কেন হয়। কেনই বা তারা বই, খাতা, কলম ছেড়ে মাদকের মতো সবর্নাশের পথে পা বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভুমিকা কতটুকু সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে। কোনো অন্যায় প্রতিরোধে আইন যথেষ্ট নয়। আইনের সঙ্গে সচেতনতা মিলে রোধ করা সম্ভব একটি অপরাধকে। একটি ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে পরিবারকে। তারপর সমাজের সব স্তরের মানুষকে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় আমাদের গ্রামে-গঞ্জে ছোট ছোট ছেলেদের মাদকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে পরিবারের সদস্যদের হাত ধরেই। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। প্রথম তামাকজাতীয় নেশা সেখানেই প্রত্যক্ষ করে। হাতের নাগালের মধ্যেই সেগুলো থাকে। আমাদের দেশে গ্রামে-গঞ্জে এমনকি শহরে খুব প্রচলিত তামাকজাত দ্রব্য হলো বিড়ি বা সিগারেট, জদ্দার (যা বেশির ভাগ পরিবারের নারী-পুরুষই পানের সঙ্গে খায়) ও গুল। এসব এতটাই সহজলভ্য ও হাতের নাগালে থাকে, যে ইচ্ছা করলেই এসব কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা তা পরখ করতে পারে।
সচেতন মহলের লোকেরা মনে করেন পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা যদি মরন নেশা মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতাদের শনাক্ত করে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন , তাহলে এই মরন নেশা (ইয়াবা) মাদকের করাল গ্রাসের থাবা থেকে আমাদের যুব সমাজ রক্ষা পেতে পারে।
যে ছবি দীর্ঘ দিন যাবৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় নজর কেড়েছেন তিনি হলেন সিলেটের মাদকের স্বর্গরাজ্যের গডফাদার ইয়াবা জসিম।
ইয়াবা জসিম কানাঘাট থানায় ট্রাক ড্রাইভার মানিক মিয়ার ছেলে।
আর ইয়াবা জসিম শাহপরান (রাঃ) থানায় তার আবির্ভাব হয় প্রায় ২০ বছর আগে। আবির্ভাবের পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছে। এক সময় মানিক মিয়ার এক মেয়েকে বিয়ে দেয় লন্ডনি শুক্কুর মিয়ার কাছে, সেই সুবাদে বর্তমানে বোন জামাইয়ের বাসায় বসবাস করে একটি জালিয়াতি চক্র সৃষ্টি করে ও ইয়াবার ডিলার হিসাবে সিলেট বিভাগে বিভিন্ন লোক মারফতে ইয়াবার চালান ও ক্রয় বিক্রয় করে যাচ্ছে।
প্রশাসনের দৃষ্টি থেকে নিজেকে আড়াল রেখে। এই মাদক চুরা চালানির সাথে রয়েছে তার বিশাল চক্র। যার দ্বারা সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় অনাসে অপকর্মে জাল বিস্তার করে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয় বাইপাস রোডে অসংখ্য জালিয়াতি লিজ দলিল বানিয়ে জায়গা দখলসহ বহু অপকর্মর সাথে জড়িয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অনুসন্ধান কালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শত শত ব্যক্তিরা।
এই ইয়াবা জসিমের মাথার উপর কোন কোম্পানির ছাতা রয়েছে তা নিয়ে আগামী পর্বে আসছে বিশেষ প্রতিবেদন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সূত্রঃ– https://www.facebook.com/100005590842858/posts/1057090687820616/?mibextid=Nif5oz