প্রতিনিধি ১৫ নভেম্বর ২০২২ , ৩:২৯:৩৮ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শুরুর প্রাক্কলে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বিবদমান দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১ কর্মী নিহত হয়েছেন, এ ঘটনায় উভয়পক্ষের আরো ৪০ জন আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে এই কর্মীর মৃত্যুটা স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে।
সোমবার সকালে দিরাই উপজেলা সদরের বিএটিসির মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলন শুরু হয়ার আগেই এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে এতে উভয়পক্ষের আনুমানিক ৪০ জন আহত হন। নিহত কর্মীর নাম আজমল হোসেন চৌধুরী (২৭) তিনি দিরাই উপজেলার কুলঞ্জ ইউনিয়নের কুলঞ্জ গ্রামের মরহুম আব্দুল হান্নান চৌধুরীর ছেলে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রার্থী আলতাব উদ্দিন মাষ্টার ও সাধারন সম্পাদক প্রদীপ রায় গ্রুপের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায় গ্রুপের বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে সম্মেলনকে সামনে রেখে দুটি গ্রুপ শহরে শো-ডাউন করেন। এ নিয়ে আজ সোমবার বিআরটিসি মাঠে সম্মেলনে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। এই সময় মোশারফ ও রঞ্জন রায়ের কর্মী সমর্থকরা প্যান্ডেলের ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করলে প্রতিপক্ষ আলতাব উদ্দিন মাষ্টার ও প্রদীপ রায়ের সমর্থকরা বাধা প্রদান করেন।
উভয়পক্ষের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এর পর্যায়ে চেয়ার ও ইট পাটকেল ছুড়ে একে অপরের দিকে। এতে উভয়পক্ষের ৪০ জন আহত হন।
হামলায় আহতরা হলেন- দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম প্রদীপ মাছুম, বাগবাড়ির মোহন মিয়া, চণ্ডিপুরের বাবুল মিয়া, মতিউর রহমান, হাসান মিয়া, মাদানী মহল্লার সাগর মিয়া, আব্দুল ওয়াহাব, রফিনগর ইউপি মহিলা সদস্য নিয়াশা সরকার, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মল্লিকপুরের মুহিবুর রহমানসহ অর্ধশত নারী-পুরুষ। সংঘর্ষে হামলায় আহত হয়ে দিরাই হাসপাতালে মারা যান কৃলঞ্জ গ্রামের আজমল হোসেন চৌধুরী (৩০)।
হামলার সময় সম্মেলন মঞ্চে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. শামীমা শাহরিয়ারসহ জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ও দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সম্মেলন শুরু হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়ার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মঞ্চের সামনে এলে মঞ্চে ওঠতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে উভয় গ্রপের নেতাকর্মীরা, এসময় কেন্দ্রীয় নেতাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে মঞ্চের নেতারা চেয়ার হাতে নিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন। পরে পুলিশ এসে তাদের মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের মানবঢাল তৈরি করে ও চেয়ার দিয়ে রক্ষা করেন। পুলিশ হামলাকারীদের ঠেকিয়ে দেয়।
নিহত স্বজনরা জানান- সংঘর্ষের সময় ঢিলের আঘাতে আরমান অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যান কিন্তু মানুষের ভিড়ে চিকিৎসা নিতে না পেরে বাসায় চলে যান তিনি। এর কিছুক্ষণ পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এসময় চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, আরমান এর মৃত্যু হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাইদ বলেন, একজন মারা গেছেন বলে শুনেছি। তার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে, নাকি সংঘর্ষের কারণে হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
হামলার এক ঘণ্টা পরে পুনরায় সম্মেলন শুরু হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে মঞ্চে হামলার ঘটনা ঘটে। তাই মোশাররফ হোসেন ও রঞ্জন রায়কে দল থেকে বহিষ্কার ঘোষণা করা হলো।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান পরবর্তীতে নতুন কমিটি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করেন।
সংঘর্ষের ব্যাপারে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. মোশারফ মিয়া জানান, আজমল হোসেন চৌধুরী আরমান বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্দশের আমার গ্রুপের একজন সক্রিয় কর্মী।
আজ সম্মেলন শুরুর আগে আমরা সবাই কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগতম জানাইয়া মিছিলটি গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন চেয়ার ও ইটপাটকেল ছুড়ে মারতে থাকে। পরে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
এ ব্যাপারে দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. সাইফুল আলম জানান দিরাই হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন মো.আমির হোসেনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।