প্রতিনিধি ৪ অক্টোবর ২০২২ , ২:০৭:০০ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের বড়মেদী বিল গ্রুপ জলমহালের ইজারাদার চক্রের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের সাপেরকোনা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লি: এর নামে ১৪২৯-১৪৩৪ বাংলা সন ৬ বছরের জন্য অন্যান্য করাদিসহ বার্ষিক ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৪ শত ৮২ টাকা ইজারামূল্যে ভূমি মন্ত্রণালয় হতে বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জলমহালটি ভাগিয়ে নেয়। সমিতির সভাপতি হচ্ছেন সাপেরকোনা নিবাসী ইদ্রিছ উল্লাহর পুত্র রোয়াব আলী ও সাধারন সম্পাদক একই গ্রামের মৃত কদর আলীর পুত্র মো. দিলোয়ার হোসেন। প্রথমবারের মতো জলমহালটি মন্ত্রণালয় হতে ভাগিয়ে নিয়েই এই চক্রটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে শুরু করে দেয় প্রতারনার ব্যবসা।
প্রতারনার অংশ হিসেবে প্রথমে ১/১২/২০২১ইং শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের জয়সিদ্দি গ্রামের মো.আবুল খয়েরের পুত্র ফোজায়েল আহমদের সাথে বার্ষিক ২৫ হাজার টাকা ভাড়া বাবত দর সাব্যস্থক্রমে ৩ শত টাকার নন জুডিসিয়েল স্টাম্পে কথিত সমিতির সকল সদস্যগনের পক্ষে সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সমিতি ভাড়ার চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। সমিতি ভাড়া গ্রহন করে ফোজায়েল আহমদ চুক্তিপত্রের ক্ষমতাবলে ২৭/৭/২০২২ইং তারিখে রতিরঞ্জন তালুকদারসহ ২১ জনের সাথে জলমহালটির পার্টনারশীপ চুক্তিপত্র সম্পাদন করত: জলমহালটির অন্যান্য করাদিসহ সরকারী ইজারামূল্য পরিশোধ করেন। উক্ত সাবলীজ গ্রহনকারী ও পার্টনারশীপ চুক্তিপত্র সম্পাদনকারী ফোজায়েল আহমদ ও রতিরঞ্জন গংদের মেয়াদ শেষ হতে না হতেই সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক ২য় বারে আবার ৬ বছরের জন্য ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ১৯/৯/২০২২ইং সাবলীজ দেয় কেজাউড়া গ্রামের শিহাব ও মছব্বিরসহ ১০ জনকে। বারংবার জলমহালটির সাবলীজ দিয়ে কথিত ইজারাদার সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকরা কেজাউড়া গ্রামের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের মধ্যে ২টি গ্রæপের সৃষ্টি করে প্রকাশ্য দাঙ্গা লাগিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রেখেছে বলে স্বীকার করেছেন গ্রামের ইউপি সদস্য মো.জসীম উদ্দিন। গত ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার জলমহালটির ভোগদখল নিয়ে প্রথমবারে রতিরঞ্জন গং এবং সমিতির সভাপতি রোয়াব আলীর আপন ভগ্নিপতি ও চা ল্যকর শিশু তুহিন হত্যা মামলার আসামী আব্দুল মছব্বির ওরফে কাইক্যা মোল্লার মধ্যে মৌখিক বাধানুবাদের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সাবলীজ গ্রহনকারী রতিরঞ্জন তালুকদারের ভাগীদার মোঃ জিহাদ মিয়া।
২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দিরাই থানায় বিরোধীয় দুপক্ষের ১০ জনের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বৈঠক হয়। উভয়পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সালিশে সিদ্বান্ত হয় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকগং সাবলীজ দিতে গিয়ে রতিরঞ্জন তালুকদার গংদের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছেন তার বকেয়া পাওনা দেড়লাখ টাকা নি:শর্তভাবে ফেরত দিলে রতিরঞ্জনগং দখল ছাড়বেন। শুক্রবার বিকেল ৫টায় দিরাই থানা ওসির কক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিরোধীয় দুই পক্ষকে মিলেমিশে জলমহালটি ভোগদখল করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ না মানলে জলমহালের সাবলীজ দেয়ার ঘটনায় নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে বিধি মোতাবেক জলমহালটির ইজারা বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসককে সুপারিশ করবেন বলে কঠোর হুশিয়ারি দেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ওসি দুপক্ষের ১০ জনের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বারসহ জলমহালটিকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে যাতে খুন খারাবী সংগঠিত না হয় সেজন্য একটি মুছলেকা নেন। পরবর্তীতে থানার এসআই মোঃ রাজু মিয়া বাদী হয়ে ঊভয়পক্ষের ১০ জনের বিরুদ্ধে দিরাই থানার নন এফআইআর প্রসিকিউশন নং ৬৭/২০২২ইং তাং ২৩/৯/২০২২ইং (ননজিআর ৫২/২০২২) ধারা ১০৭ ফৌজদারী কার্যবিধি দায়ের করেন। কিন্তু কথিত প্রসিকিউশনে জলমহালটির ইজারাদার সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কে নীতিমালা ভঙ্গের হাতেনাতে প্রমান পাওয়ার পরও আসামী করা হয়নি। আরো জানা যায়,২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার এসআই রাজুর সামনে থানায় রতি রঞ্জনগংদের বকেয়া পাওনা বাবত দেড়লাখ টাকা পরিশোধ করে সভাপতি ও সম্পাদক।
এই ঘটনায় ইজারালব্ধ জলমহালটি সাবলীজ দেয়ার উপযুক্ত প্রমাণ পেলেও নীতিমালা ভঙ্গের কারণে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কথিত সভাপতি সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন মনে করেননি। যে কারনে গত ২ অক্টোবর জলমহালটির সন্নিকটবর্তী কেজাউড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি আলীমুল ইসলাম জেলা প্রশাসকের কাছে শর্তভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে জলমহালটির ইজারা বাতিলের জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রোয়াব আলী বলেন,আব্দুল মছব্বির আমার বোনজামাই। আমি নীতিমালা মেনেই সাড়ে ২৪ লাখ টাকায় আমার বোনজামাইসহ ১০ জনকে ভাগীদার নিয়োগ করেছি। মো. দিলোয়ার হোসেন বলেন,দিরাই ইউএনও এবং ওসি সাহেবের মধ্যস্থতায় আমার ফুফা আব্দুল মছব্বিরগং সহ ১০ জনকে আমরা জলমহালের নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিয়োগ করেছি। একটি সমিতির দুজনে দুরকম দুই নম্বরী কথাবার্তা বলছে উল্লেখ করে, ১/১২/২০২১ইং তারিখে সাপেরকোনা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির ভাড়া গ্রহনকারী ফোজায়েল আহমদ বলেন, কাগজেপত্রে সাপেরকোনা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি জলমহালটি লীজ পেলেও জামানতের পেঅর্ডারসহ ইজারামূল্যের সকল টাকা আমি সরকারকে পরিশোধ করেছি। আমার আশা ছিল ৬ বছর ব্যবসা করার। তারা গত ১৯/৯/২০২২ইং তারিখে চুক্তিপত্রে আমাকে লিখিতভাবে শর্ত দিয়েছিল দাঙ্গাহাঙ্গামা নিরসনের স্বার্থে কেজাউড়া গ্রামের কোন লোককে কোন অবস্থাতেই তারা সাবলিজ বা ভাগীদার নিয়োগ করবেনা।
যদি এরুপ করে এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয় তাহলে সেক্রেত্রে সমিতি কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ তারা নিজেরা দায়ী হবে। এবং সমিতির লোকেরা ২০০৯ইং এর নীতিমালা অনুযায়ী নিজেরাই জলমহালটির ভোগদখল করবে। কিন্তু সমিতির সভাপতি রোয়াব আলী বর্তমানে অতি লোভের বশবর্তী হয়ে তার ভগ্নিপতি আব্দুল মুছব্বির গংদের কাছ থেকে ১৯/৯/২০২২ইং তারিখে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা গ্রহন করে জলমহালটি হস্তান্তর করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সাধনে তৎপর হয়ে উঠে এবং ভগ্নিপতিগংদের সাথে গত ১৯/৯/২০২২ইং তারিখে চুক্তিপত্র সম্পাদনের নামে উদ্দেশ্যমূলক দাঙ্গাহাঙ্গামার লিখিত লাইসেন্স প্রদান করে। এই লাইসেন্স পাওয়ার সুবাদেই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জলমহালটি নিজেদের হেফাজতে ভাগিয়ে নেয় আব্দুল মছব্বিরসহ তার গ্রামের ১০ জন অংশীদার।
মেম্বার জসীম উদ্দিন ও কেজাউড়া গ্রামের শান্তিপ্রিয় নিরীহ লোকজন বলেন, সাপেরকোনা সমিতির সমিতির সভাপতি রোয়াব আলী ও তার সহযোগী সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন কর্তৃক আমাদের বাড়ীর সামনের জলমহালটি দফায় দফায় সাবলীজ প্রদান করায় গ্রামের মধ্যে জলমহালের ভোগদখল নিয়ে বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় খুনখারাবীসহ দাঙ্গা হাঙ্গামার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে জলমহালটির ইজারা বাতিল করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবী স্থানীয় জনসাধারনের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।