প্রতিনিধি ৮ এপ্রিল ২০২২ , ২:৫৫:১২ অনলাইন সংস্করণ
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী এ.কে.এম এনামুল হক শামীম এমপি ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি হাওরের একমাত্র অর্থকরী বোরো ফসল রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবাণ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরের মানুষদের জন্য খুবই আন্তরিক। ২০১৭ সালের পর এবার কয়েকটি হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বোরো ফসল তলিয়ে যায়। প্রতি বছর সরকার হাওরের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। আমরা হাওরের জন্য স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করেছি। স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হাওরের মানুষজন হাসি মুখে বোরো ফসল গোলায় তুলতে পারবে। আমরা সে চেষ্টায় আছি। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার থাল হাওর পরিদর্শণ শেষে এসব কথা বলেন তিনি। উপমন্ত্রী আরও বলেন, হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাওরের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে আমরা তালিকা করছি। তাদেরকে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করবো। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন কৃষকদের তালিকা করার কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন,পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওরে পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দ্রুত যেন ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ সংস্কারের নির্দেশ দিয়ে সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পানি সম্পদ ব্যবস্থা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। উপ-মন্ত্রী আরও বলেন, আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী সুনামগঞ্জে অফিস করবেন এবং বাঁধে যেকোনো সমস্যা হলে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবেন। সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধ পিআইসির কাজগুলোর উপর যে অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখবো। তবে এখন আমাদের সবার লক্ষ্য ধান রক্ষা করা। আমরা চাইনা হাওরে আর একটিও ধান যাক। এবার ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে তার মধ্যে ১৫০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যার মধ্যে ৫০ মিটার আমরা ঠিক করে দিয়েছি। বাকি যেগুলো রয়েছে সেগুলোও ঠিক করে দেয়া হবে। হাওরে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে অভিযোগ রয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা মন্ত্রনালয় থেকে তদন্ত কমিটি করে দিব। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটি কমিটি করা হবে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ,পৌর মেয়র নাদের বখত, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জাকির জাফরান,জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার এম.এনামুল কবির ইমন,তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনাসিন্দু চৌধুরী বাবুল,বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সফর আলী, দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান তানভীর আল আশরাফী চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা হায়দার চৌধুরী লিটন,সিরাজুর রহমান সিরাজ,মোবারক হোসেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান,পরিবেশবিদ কাস্মীর রেজা,সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি আল-হেলাল,সুনামগঞ্জের সময় পত্রিকার সম্পাদক সেলিম আহমদ তালুকদার,রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারন সম্পাদক হিমাদ্রি তালুকদার ভদ্র মিঠু,সাংবাদিক জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা হাওরের বাঁধের বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা তুলে ধরেন। বিভিন্ন এলাকায় হাওর রক্ষা বাধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি পিআইসি গঠনে পাউবো কর্মকর্তাদের আগাম ঘুষ গ্রহন,ঘুষ নিয়ে একই লোককে প্রতিবছর পিআইসির সভাপতি সদস্যসচিব করা,রাম শ্যাম যদু মধুকে কাগজে কলমে পিআইসিতে রাখলেও নেপথ্যে গডফাদারদের স্বার্থ রক্ষা করা,পিআইসির নামে অতিরিক্ত বরাদ্দ নির্ধারন করে সরকারের অর্থের অপচয়,অপ্রয়োজনীয় পিআইসি গঠন করে সরকারী বরাদ্দের টাকা হরিলুঠ, ভাল পিআইসিদের বিল পরিশোধ,দুর্নীতিবাজ পিআইসিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা ও জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন গণদাবী উপস্থাপন করা হয় মত বিনিময় সভায়।