• অনিয়ম / দুর্নীতি

    ইজারাবিহীন ধোপাজান নদী হতে আবারও বের হয়ে যাচ্ছে বালি পাথরবাহী নৌকা

      প্রতিনিধি ৫ এপ্রিল ২০২২ , ২:৫১:০৩ অনলাইন সংস্করণ

    আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ থেকে: ইজারাবিহীন ধোপাজান নদী হতে আবারও বের হয়ে যাচ্ছে বালি পাথরবাহী নৌকা।ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীতে প্রতিদিন রাতের আধারে বালি পাথর পাচার হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পঙ্গপাল নামের এক ধরনের ছোট ইঞ্জিন নৌকার পাশাপাশি বড় ইঞ্জিন নৌকা দিয়ে নিয়মিত বালি পাথর পাচার করে যাচ্ছে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হুরারকান্দা গ্রামের মোঃ সফিকুল হকের পুত্র মোঃ রফিকুল হক। ধোপাজান নদীতে থাকা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের টহলরত পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজ করে প্রতিরাতে সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে বালি পাথরবাহী ইঞ্জিন নৌকা পাচারে নেতৃত্ব দিচ্ছে উক্ত রফিকুল হক। ২রা এপ্রিল শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় অর্থাৎ ১লা রমজানের সেহরী খাওয়ায় যখন সবাই ব্যস্ত তখনই প্রথম দফায় ৩টি নৌকা বের করে সে। পরবর্তীতে আরো ৭টি নৌকা বের করে নেয় সে। এসময় নদীতে টহলরত পুলিশের এসআই সাব্বির ও বোটম্যান মানিক মিয়া রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। রাতের বেলা বালিপাথরবাহী নৌকা বিনা বাধায় পুলিশ ক্যাম্পের সামনে দিয়ে অবাধে বের হওয়ার পরও কেন আটক করা হলনা জানতে চাইলে এসআই সাব্বির বলেন,আমরা চাঁদাবাজীর খবর শুনে ঘটনার সময় মনিপুরিঘাটে চলে যাই। হয়তো এ সুযোগে কোন নৌকা বের হয়ে যেতে পারে। রাত ৩টায় মনিপুরিঘাটে কিসের চাঁদাবাজী এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। ঐ সময় রাতে সাহাবুদ্দিন নামে ডিবি পুলিশের একজন এএসআইও দায়িত্বরত ছিলেন বলে তাদের কাছে জানা যায়। ঘটনার ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে কল করলে মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি এএসআই সাহাবুদ্দিন। অন্যদিকে স্থানীয় সদরগড় গ্রামের লোকজন ও ধোপাজান নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেরা বলেন,প্রতিরাতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা রেইটে উৎকোচ নিয়ে ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদী হতে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা বালি পাথর উত্তোলনকারীদের অবৈধ বালিপাথরবাহী নৌকা ছেড়ে দেয় পুলিশ। ১লা রমজানের রাতে রফিকুল চক্র ১০টি বালি পাথরবাহী নৌকা বের করে নিয়েছে বলে কয়েকজন বালি পাথর ব্যবসায়ী জানান। তারা বলেন,হুরারকান্দা গ্রামের সফিকুল হকের পুত্র মোঃ রফিকুল হক একজন চিহ্নিত চোরাকারবারী। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় তার বালি পাথরবাহী নৌকা আটক করে মোবাইল কোর্টের আওতায় একাধিকবার তাকে ও তার সহযোগীদেরকে আর্থিক দন্ডসহ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তারপরও তার অবৈধ বালি পাথর ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে রফিকুল হকের মুঠোফোনে কল করলে রফিকুল হক জানায়,আমি গত ১০ মাস ধরে এসপি বাংলার কাছে শহরের হাছননগরের বাসায় অবস্থান গ্রহন করছি। প্রায় রাতেই নদীতে থানা ও ডিবি পুলিশ নৌকা ধরে ছাড়ে। আমি ভাদেরটেক এর শাহীনূরের সাথে বালি নীলাম ক্রয় করার পর কিছুদিন বালি ব্যবসা করেছি। আমার নৌকা কখনও আটক হয়নি। আমি যতদিন ব্যবসা করেছি সিস্টেম করেই করেছি। আমি কখনও পাথরের ব্যবসা করিনি। গতরাতে ধোপাজান নদীর ধারেকাছেও যাইনি। আমার প্রতিপক্ষরা আমার নামে অপবাদ দিচ্ছে। গত রাতে যে ১০টি নৌকা বের হয়ে গেছে এগুলো পাথরের নৌকা। এ নৌকাগুলো ডলুরা কাইয়ারগাঁও থেকে এসেছে। এগুলো ভাদেরটেক বা হুরারকান্দা গ্রামের কোন ব্যবসায়ীর নৌকা নয় সেটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি। এই নৌকাগুলো আসলে কার তা পুলিশই বলতে পারবে। সদরগড় গ্রামের কয়েকজন নাগরিক বলেন,রফিকুল অস্বীকার করলে কি হবে ? সবগুলো নৌকা পাচারে সে নিজে ও তার ভাই জড়িত। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শফিকুল ইসলাম বলেন,নতুন গুদিগাঁও গ্রামের আলীনূর কর্তৃক নীলাম গ্রহনের সময়সীমা পার হওয়ার পর গত ৩ সপ্তাহ যাবৎ কিছু চোরাকারবারী ডলুরা শহীদ মিনারের সামনে কিছু পাথর মজুত করেছে। এই পাথরগুলো রাতের বেলা ট্রাক ট্রলি দ্বারা মঈনপুর গ্রামে এনে ক্রাশার মেশিনের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করছে আর কিছু পাথর নৌকায় করে ধোপাজান নদীর পুলিশ ক্যাম্পের সামনে দিয়ে বের করে নিচ্ছে। ধোপাজান বালি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ কবীর মিয়া বলেন,হুরারকান্দা,সদরগড় ও ভাদেরটেক মনিপুরীহাটি গ্রামের সচেতন নাগরিকগন বিভিন্ন সময় রাতের বেলা চোরাইভাবে বালি পাথর উত্তোলনকারী নৌকা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। তারপরও এই নৌকাগুলো কিভাবে ছাড়া পেয়ে যায় তা রহস্যজনক। তিনি গভীর রাতে ধোপাজান নদীর পুলিশ ক্যাম্পের সামনে দিয়ে অবৈধ বালি পাথরবাহী নৌকা বের করে নেয়ার কাজে জড়িতদের উপর নজরদারী বাড়ানোর জন্য জেলা পুলিশ সুপারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

    আরও খবর

    Sponsered content