প্রতিনিধি ২৮ মার্চ ২০২২ , ৭:১১:৪৩ অনলাইন সংস্করণ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বাশিঁরে তুই রাই রাই বলে কারে ডাকবে রাই মরিলে,মালা গাথিয়া সূতায় মজিল ফুলেরি মালা দিব কার গলায়,গাড়ি যাত্রী ভরা আহসান মারা হইল বিসর্জন,ড্রাইভারে কয় ব্রেক মানেনা করি কি এখন,কইতে কইকে চাইতে চাইতে হইল বিসর্জন,কত কত মায়ের কান্নায় ভাসালে ভূবণ,যার ও মরছে পূত্র কন্যা সে করে রোধন,আমি জলে আসলাম তোমার ও লাগিয়ারে শ্যাম কালিয়া এমন অসংখ্য কালজয়ী ধামালী গানের রচয়িতা প্রয়াত কবি প্রতাপ রঞ্জন দাস তালুকদার স্মরণে দিনরাত ব্যাপী শুরু হয়েছে লোক উৎসব। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাওঁ ইউনিয়নের সুরমা নদী ঘেষা টাইলা গ্রামে জন্ম নেয়া কালজয়ী লোকগান(ধামালী) গানের রচয়িতা প্রয়াত কবি প্রতাপ রজ্ঞন দাস তালুকদার স্মরণে প্রথমবারের মতো ধামালী গানের উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো ভক্তবৃন্দের পদচারনায় অনুষ্ঠানস্থল লোকে লোকারন্য হয়ে তিন ধারনের ঠাই মিলেনি।
রবিবার সকাল ১০টায় টাইলা প্রতাপ রজ্ঞন ধামাইল উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ও শান্তিগঞ্জ প্রতাপ রজ্ঞন স্মৃতি পরিষদের সহযোগিতায় কবির বাড়ির সামনের মাঠে ধামাইল উৎসব উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তা শেষ হয়েছে আজ সোমবার সকালে। এতে সুনামগঞ্জ,সিলেট,হবিগঞ্জ জেলা ও নবীগঞ্জ উপজেলার লোক গবেষক ও লোকসঙ্গীত শিল্পীসহ প্রতাপ ভক্তরা অংশগ্রহন করেন। ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। টাইলা প্রতাপ রজ্ঞন ধামাইল উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও পশ্চিম বীরগাঁও ইউপি সদস্য মো.মছরু মিয়ার সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সমন্বয়কারী জয়ন্ত কুমার সরকার ও প্রতাপ রজ্ঞন ধামাইল উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক রাসেল আহমদের যৌথ স ালনায় ধামাইল উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন,শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী আবুল কালাম।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুলন রানী তালুকদার, গবেষক ও দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রতন কুমার দাস তালুকদার,শান্তিগঞ্জ প্রতাপ রজ্ঞন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত তালুকদার পুণ্টন,সাধারন সম্পাদক শ্যামল দে,দিরাই উপজেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির সভাপতি নারায়ন চন্দ্র দাস,টাইলা গ্রামের সন্তান, জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস তালুকদার,অঙ্গুর সেবা পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম,শ্যামা রানী দাস,কবি পূত্র প্রসেন দাস তালুকদার,পিন্টু দাস তালুকদার,লিটন মিয়া,সুজন তালুকদার,ব্রজেন্দ্র কুমার দাস,সুধারজ্ঞন দাস,বাদল চন্দ্র দাস প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজী আবুল কালাম বলেছেন,সুরমা নদীর ঘেষা টাইলা গ্রামের লোককবি প্রতাপ রজ্ঞন দাস তালুকদার অত্যন্ত দরিদ্র একটি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখাপড়ায় হাইস্কুলের গন্ডি পেরুতে না পারলেও তিনি তার জীবদ্দশায় অন্যর বাড়িতে কিংবা হাওরে ধানা কাটা থেকে শুরু করে সকল ধরনের দীনমুজুরের কাজ করে রাতের বেলা তার জীর্ণকুঠিরে অবস্থান করে লেম জ¦ালিয়ে তিনি গান রচনা করেছেন। তিনি মিডিয়া বিমুখ থাকায় তাকে গণমাধ্যমকর্মীরা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি। ফলে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অজপাড়া গায়ে জীবন কাটিয়ে কোনভাবে তার স্ত্রী,দুই ছেলে ও দুইমেয়েকে নিয়ে অনহারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করে গেছেন। তিনি তার জীবদ্দশায় ৮ শতাধিকের উপরে ধামাইলগান রচনা করে গেছেন। তিনি তার লেখা বইগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে বিক্রি করে ঐ সামান্য টাকা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। তিনি শান্তিগঞ্জ টু রজনীগঞ্জ রাস্তাটি লোককবি প্রতাপ রঞ্জন দাসের নামে নামকরন করতে এবং তার জরাজীর্ণ বসতভিটায় একটি ঘর নির্মাণসহ একটি সঙ্গীতালয় স্থাপনে সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলা প্রশাসনের উধর্বতন কৃর্তপক্ষের নিকট দাবী জানান। পরে অতিথিদের উপস্থিতিতে আগত শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করেন।
উল্লেখ্য কবি প্রতাপ রজ্ঞন দাস তালুকদার ১৯৪৫ সালে ১৮ই জানুয়ারী টাইলা গ্রামের দরিদ্র পিতা প্রমোদ রজ্ঞন দাস তালুকদার ও মাতা অমূল্য বালা তালুকদারের ঘরে জন্মগ্রহন করেন । তিনি ২০০৯ সালের ৯ অক্টোবর নিজ বাড়িতে পরলোক গমন করেন।
ধামাইল উৎসবে অংশগ্রহনকারী শিল্পীগোষ্ঠি হচ্ছে হবিগঞ্জের শান্তা ধামাইল গোষ্ঠি,পাগলা হতে নিপা সূত্রধর ধামাইল গোষ্ঠি,খাগাউরা হতে বৃষ্টি শিল্পীগোষ্ঠি,জামালগঞ্জ পলি শিল্পীগোষ্ঠি,শ্রীমঙ্গল হতে বাউলে দীপ গোষ্ঠি,ছাতক থেকে দীনহীন সুরজ্ঞিত শিল্পীগোষ্ঠি ও দিরাই হতে কালনীর তীর ধামালি দল দিনব্যাপী ধামালী গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন।