• সুনামগঞ্জ

    শান্তিগঞ্জে পুলিশের মারধরে উজির মিয়া নিহতঃ প্রশাসন ও পুলিশের পৃথক-পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন

      প্রতিনিধি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৩:৩১:৪১ অনলাইন সংস্করণ

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় গরু চুরির অপরাধে পুলিশের মারধরে উজির মিয়া নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর এমন অভিযোগে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
    সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার উল হালিম ও সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবু সাঈদ কে পৃথক-পৃথক ভাবে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিহত উজির মিয়ার জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেন, বিষয়টি গুরুত্বে দিয়েই সবকিছু স্বচ্ছতার ভিত্তিতে করা হবে। আমরা ঘটনার তদন্তে কাজ করছি।’ সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
    এদিকে, নিহত উজির মিয়ার মৃত্যু ঘটনায় তার পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে লাশটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান। উজির মিয়ার চাচাতো ভাই গোলাম মস্তফা জানান, ‘পুলিশের বেধড়ক মারপিটের কারণেই উজির মারা গেছে। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার চাই। অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও জানান তিনি।’
    উল্লেখ্য, স্বজনদের অভিযোগ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শক্রুমর্দন গ্রাম থেকে গরু চুরির অপরাধে পুলিশের মারধরে উজির মিয়া নামে ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় সুনামগঞ্জ-সিলেট আ লিক মহা সড়কের পাগলা বাজার এলাকায় মারধরে মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে লাশ নিয়ে কয়েক ঘন্টা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধের কারনে কয়েক শ’ যানবাহন আটকা পড়াসহ হাজার-হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের খবর পেয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করতে রাস্তায় অবরোধ প্রত্যাহারের কথা বললে জনতার তোপের মুখে পড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুজ্জামান দ্রæত স্থান ত্যাগ করেন।
    এ সময শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক গাড়িটি নিহতের মরদেহের পায়ের সাথে চাপা দিয়ে এসেছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে অবরোধকারীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এস সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি ধীরে-ধীরে শান্ত হয়। সোমবার দুপুর থেকে শেষ বিকেল পর্যন্ত শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলাবাজার এলাকার শত্রুমর্দন গ্রামের সামনে এমন অবরোধ হয়ে সন্ধ্যায় গড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
    শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রæ মর্দন (বাঘের কোনা) গ্রামের মারা যাওয়া (২ সন্তানের পিতা) ওই ব্যক্তির নাম উজির মিয়া (৪৩)। তিনি পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। গত ২০ ফেব্রæয়ারি রাতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উজির মিয়া মারা যান।
    নিহতের স্বজনরা জানান, আনুমানিক ১৩দিন পূর্বে উপজেলার দরগাপাশা গ্রাম থেকে একটি গরু চুরি হয়। এ ঘটনায় গত ৯ ফেব্রæয়ারি রাতে পাগলা বাজারের পাশর্^বতী শত্রুমর্দন গ্রামের। চুরিকরা মালের ভাগ উজির মিয়া পায় এমন গোপন সংবাদে উজির মিয়াকেকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে শান্তিগঞ্জ থানার এসআই দেবাশীষ, এসআই প্লাটন কুমার সিংহ ও আক্তারুজ্জামান তাকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আদালত থেকে উজির মিয়া তিনি জামিনে মুক্তি পান। আটকের পর উজির মিয়াকে থানায় রাখার পর থানা পুলিশের বেধড়ক মারপিঠে তিনি আহত হন এমন অভিযোগ ও স্বজনদের। তার জামিনের পর তাকে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পড়ে তিনি বাড়িতে এসেও সুস্থ হননি। সোমবার তিনি মারা যান। এ ঘটনার রেশেই এলাকা বাসী প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
    স্বজনরা আরো জানান,পুলিশ থানায় উজির মিয়াকে এনে মারধর করলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরের দিন তাকে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়াতে তাকে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে দ্রæত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে নিহতের স্বজনরা সকালে উজির মিয়ার লাশ নিয়ে সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের পাগলা এলাকায় বিক্ষোভ করেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী। নিহতের ছোট ভাই গোলাম সারায়োর মাসুমের অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ আমার নির্দোষ ভাইকে আটক করে থানায় নিয়ে বেদড়ক পিটিয়ে আহত হওয়ার কারণেই ভাই মারা গেছেন। আমার আটককৃত ভাই অসুস্থ হওয়ার পর একটা রাতও ঘুমাতে পারেনি। শুধু যন্ত্রণায় চিৎকার করেছে।’
    এদিকে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, বিক্ষোভ থেকে সরে যাওয়ার সময় মরদেহের পায়ের চাপা দিয়ে যায় ইউএনওর গাড়ি। তার গাড়িচালক গাড়িটি মরদেহের পায়ের ওপর দিয়ে তুলে দেন।
    এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ থানা ওসি কাজী মুক্তাদির হোসেন বলেন, উজির মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল চোর সন্ধেহে। গ্রেফতারের সময় তিনি পালানো চেষ্টা করলে একটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মাথায় তিনি আঘাত পান। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎ’সা দিয়ে কোটে তাকে চালান দেয়া হয়। পুলিশ তাকে নির্যানতন করেনি, যদি কোন কিছু করে থাকে পরবর্তীতে তদন্তে বেড়িয়ে আসবে।
    এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ জামান তার চালক কর্তৃক লাশের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
    পুলিশের হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ‘আসামিকে আটক করা হয়েছিল ৯ ফেব্রæয়ারি। একদিন হাজতে রেখে পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ১১ তারিখে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি চলে যান। এরপর কোনো একদিন হয়তো তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আজকে সকালে নাকি তার মৃত্যু হয়েছে। তবে এখনও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’
    এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ার আলিম বলেন, কোন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কখনো ইচ্ছা করে লাশের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারে না। ঘটনাটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িত যেই হোক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে তিনি জানান।

    আরও খবর

    Sponsered content