প্রতিনিধি ২ ডিসেম্বর ২০২১ , ১:৪২:১৭ অনলাইন সংস্করণ
মোঃ বদরুজ্জামান বদরুল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ বহুল আলোচিত সুনামগঞ্জের শাল্লার সাব-রেজিস্টার অফিসের অফিস সহায়ক মোহন মিয়ার বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকুরী গ্রহন ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ৪ বছরে দিনমজুর থেকে কোটিপতি বনে যাওয়ার অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন পর থেকে অভিযুক্ত মোহন মিয়া লাটিয়াল বাহিনী ও অবৈধ প্রভাব দেখিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে অভিযোগকারীকে।
এছাড়াও অটেল টাকা ছড়িয়ে তদন্ত প্রভাবিত করাসহ সাংবাদিক ও অফিসার কিনে নেওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত মোহন মিয়া!
তার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে ঊর্ধ্বত অফিসারদের স্ববিরোধী কার্যকলাপ ও পরবর্তী নির্দেশনা দেখে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিগত ১৫ নভেম্বর ২০২১খ্রিঃ তারিখে জেলা রেজিস্টার অফিসার মফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরীত আদেশে “স্মারক নং জেরেকা/সুনাম/রেজিঃ/০২১/১৪০৬(৩)”। উনি লিখেছিলেন- সুনামগঞ্জ জেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সদর রেকর্ড রুমের দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য শাল্লা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহায়ক মোহন মিয়াকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সদর রেকর্ড রুমে প্রেষণে নিয়োগ করা হল। উক্ত প্রেষনে থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মচারী তার মূল কর্মস্থল হতে বেতন ভাতাদি গ্রহন করবেন। “অনুলিপি”
সাব রেজিস্ট্রার শাল্লা সুনামগঞ্জ, তার অফিসে প্রেষণে নিয়োগকৃত অফিস সহায়ক মোহন মিয়াকে ২২-১১-২১ তারিখের মধ্যে কর্ম মুক্ত করিয়া নির্দেশিত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করতে বলা হলো অন্যথায় সংশ্লিষ্ট অফিস সহায়ক উক্ত তারিখে বিকাল ৪.৩০ ঘটিকার পর হইতে আপনা আপনি কর্মমুক্ত বলিয়া গণ্য হবেন।
এখানে লক্ষণীয় জেলা রেজিস্টার নির্দেশ দিলেন মোহন মিয়াকে ২২-১১-২১ তারিখের বিকাল ৪.৩০ ঘটিকার ভিতরে সুনামগঞ্জ সদর রেকর্ড রুমে যোগদান না করলে মোহন মিয়ার চাকুরী আপনা আপনি কর্মমুক্ত বলিয়া গণ্য হবে।
অথচ একই তারিখে ও দিনে শাল্লা সাব রেজিস্টার তদন্তের নোটিশ জারি করে মোহন মিয়াকে শাল্লা অফিসে রাখেন এবং সন্ধ্যা ৬ ঘটিকা পর্যন্ত অফিসে থাকার প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী সহ ভিডিও রয়েছে।
অপরদিকে জেলা রেজিস্টার অফিসার মফিজুল ইসলামের আদেশের ব্যত্যয় ঘটার পরও অভিযুক্ত মোহন মিয়াকে শাল্লা থেকে সুনামগঞ্জ সদর অফিসে নিয়ে স্ব-পদে বহাল রেখেছেন জামাই আদরে! আজ সদর অফিসে সরজমিন গিয়ে দেখা যায় প্রেষণে সদ্য বদলিকৃত মোহন মিয়া অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন।
তদন্তের নামে জালিয়াতি ও প্রহসন!
অভিযোগ দায়েরকারী শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁওয়ের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মালেকের পুত্র মোঃ সোহেল আহমেদ বলেন আমি বিগত ০৭ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফরে মোহন মিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করি।
এরই প্রেক্ষিতে গত ০৯ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে সুনামগঞ্জ জেলা সাব-রেজিস্ট্রার (স্মারক নং-/০২১/১৩৮৭) উপর্যুক্ত বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য শাল্লা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসার (খন্ডকালীন) মোঃ আব্দুল বাতেনকে নির্দেশ প্রদান করেন। জেলা সাব-রেজিস্ট্রার এর নির্দেশ ক্রমে গত ১৫ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে শাল্লা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসার বিষয়টি তদন্তের জন্য অভিযুক্ত মোহন মিয়াকে গতকাল ২২ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে সকাল ১০ ঘটিকার সময় জরুরী ভিত্তিতে অফিসে উপস্থিত থেকে জবাব দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করেছিলেন।
তদন্তের নির্ধারিত দিন ২২ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে সেখানে আর বড় জালিয়াতি ও তদন্তের নামে প্রহসন করা হয়। জাল সনদে চাকুরীর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট স্বাক্ষী শাল্লা হাসিমিয়া মাদ্রাসার সাবেক সুপার (বানিয়াচুংয়ের বাসিন্দা) আব্দুল কুদ্দুস অনুপস্থিত থাকার পরেও উপস্থিত হাজিরায় উনার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে উপস্থিত দেখিয়ে তদন্তকার্য শুরু করেন অফিস সহায়ক মোঃ মোহন, ডিআর অফিসের রিয়াদ ও সাব-রেজিস্ট্রার বাতেন!
অভিযোগকারী সোহেল মিয়ার আপত্তিতে সদোত্তর না দিতে পেরে প্রমাণ নষ্ট করতে হাজিরা ছিড়ে ফেলেন ডিআর অফিসের রিয়াদ নামের একজন আর এগুলো প্রকাশ্যে তদন্তে বসা বাতেনের সামনেই! এমন একাধিক ভিডিও আমাদের হাতে এসেছে।
তারপর অবৈধ টাকার জোরে একই অফিসারের অধীনে তদন্ত কার্য পরিচালনার উদ্যো গ্রহন করলে, অভিযোগকারী সোহেল মিয়ার লিখিত আপত্তিতে তদন্ত অফিসার বাতেনকে বাদ দিয়ে তদন্ত পরিচালনার নির্দেশ দেন জেলা রেজিস্টার।
এবিষয়ে জেলার রেজিস্টার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এবং শাল্লা সাব রেজিস্টারকে একাধিক বার কল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গতঃ শাল্লা উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও সদরে অবস্থিত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মচারী শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁওয়ের বাসিন্দা ভূমিহীন দিনমজুর হানিফ মিয়ার পুত্র অফিস সহায়ক মোহন মিয়ার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন (মাত্র ৪ বছরের চাকুরী জীবনে কোটি টাকার উপরে জায়গায় জমি ও প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স) সহ অবৈধভাবে জাল সনদ সৃজন করে ৮ম শ্রেণি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী গ্রহণ, বেপরোয়া কথাবার্তা ও রূঢ় আচরণ এবং ঘুষ বানিজ্য সহ কাজ করতে আসা সেবা প্রার্থীদের হয়রানির অভিযোগে এনে বিগত ০৭ নভেম্বর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁওয়ের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মালেকের পুত্র মোঃ সোহেল আহমেদ জেলা সাব-রেজিস্ট্রার সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফরে অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে উপরোক্ত ঘটনার অবতারণা হচ্ছে।