প্রতিনিধি ২০ নভেম্বর ২০২১ , ৪:৫৯:৪৭ অনলাইন সংস্করণ
মোঃ বদরুজ্জামান বদরুল বিশেষ প্রতিনিধি। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১টি চাকুরিজীবী সংগঠনের অফিস সহ ৩টি বাড়ি ও ৫/৭টি দোকানপাট ভাংচুর করা হয়। এ সময় নৌকার সমর্থক মোঃ আল-আমীন ভূঁইয়া টিংকু সহ উভয় পক্ষের ৪/৫ জন আহত হয়েছে। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জানা যায়, শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে উপজেলার ৭নং ফরিদপুর ইউনিয়নের নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম আজিজ উল্ল্যাহ নির্বাচনী সভার আয়োজন করেন। সভাটি সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে। সভা শেষ হওয়ার পর ফরিদপুর মাজার সংলগ্ন মামুন সুপার মার্কেটের পাশে এসএম আজিজ উল্ল্যাহর সমর্থক মোঃ আল-আমীন ভূঁইয়া টিংকু ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মাসুদুর রহমান মুছার সমর্থক চাকুরিজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির ও মামুনের সঙ্গে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আল-আমীন ভূঁইয়া টিংকু স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদুর রহমান মুছার সমর্থকদের অকত্য ভাষায় গালাগালি করে। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদুর রহমান মুছা সমর্থকরা এগিয়ে আসলে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আল-আমীন ভূঁইয়া টিংকু আংশিক আহত হয়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নৌকার কর্মী সমর্থকরা দা, বল্লম ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়ে সরকারি ফরিদপুর ইউনিয়নের চাকরিজীবীদের অরাজনৈতিক সংগনের চাকুরিজীবী পরিষদ অফিসে হামলা চালিয়ে অফিসের দরজা-জানালা, ভিতরের আসবাবপত্র ও চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে। পরে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য আলহাজ্ব আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার বাড়ি সহ তার মামুন সুপার মার্কেটের ৫/৭টি দোকান, আরাফাত কেমিক্যাল ওয়ার্কসের স্বত্যাধিকারী মোঃ ফজলুর রহমান ও ফরিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহীদুল ইসলাম শহীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। ভাংচুরের সময় আলহাজ্ব আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া ফজলুর রহমান বাড়িতে ছিল না। এ সংবাদ পেয়ে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য আলহাজ্ব আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে তারা অরিজিনালি সন্ত্রাসী, আমি বাড়িতে নেই জেনেই তারা আমার বাড়িতে আমার মার্কেটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। কি পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বাড়িতে ছিলেন না বলে জানান। আরাফাত কেমিক্যাল ওয়ার্কসের স্বাত্যাধিকারী মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, আমি কোনো রাজনীতি করিনা আমার বাড়িতে তারা হামলা চালাবে কেন? যার ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা আমার বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ করার প্রক্রিয়া চলছে। চাকুরিজীবী পরিষদের সভাপতি মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, ফরিদপুর ইউনিয়ন সরকারি চাকুরি পরিষদ সম্পুর্ণ অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। এই সংগঠনে বিএনপি জামাত-শিবিরের কেউ নেই। যারা আছে তারা সবাই এক সময়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। কিন্তু নৌকার কর্ম-সমর্থকরা এ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রী বারাবর স্মারকলিপি দেব। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, আমি আওয়ামী লীগ হয়েও আমার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তার আনুমানিক ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফরিদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ তারেক আজিজ খান ইকবাল ও দেলোর হোসেন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন। নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম আজিজ আল্ল্যাহ বলেন, ঐদিন স্থানীয় আনন্দ বাজারে আমার নির্বাচনী জনসভা ছিল। সভা শেষে আমি জনতে পেরেছি আমোদপুর গ্রামের মুক্তার নামে একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অসুস্থ। তাকে দেখার জন্য আমোদপুর গ্রামে যাওয়ার পথে ফরিদপুর মাজার সংলগ্ন চাকুরিজীবী অফিস অতিক্রম করার সময় এ অফিসের ভিতর থেকে জাকির নামের একজন বলেন ধর। তখন আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি এ কথা কাকে বলেছে। সাথে আমার পিছন থেকে আরেক ছলে বলছে ধর আজুকে। পরে আমি কিছুটা দৌড়ে গিয়ে আমোদপুর মুক্তারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে আমার আল-আমীন ভূঁইয়া টিংকু নামে আমার কর্মীকে তারা মারপিট করে। এর কিছুক্ষণ পরে তারা মাইকিং করে লোকজন জড়ু করে চাকুরিজীবী অফিস সহ বিভিন্নজনের বাড়িতে ও দোকানে হামলা করে। হামলাকারীরা আমার কর্মীসমর্থক নয়। এ ঘটনা তারা আমার নির্বাচনকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে ঘটিয়েছে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দাখিল করেছি। কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম মস্তোফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, কিছু উশৃঙ্খল সমর্থকের কারণে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।