প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ৮:১৬:৪৪ অনলাইন সংস্করণ
দাপুটে ক্রিকেট খেলে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। একটি করে ফাইনাল আসে আর একটি করে বিষাদের কাব্য লেখা হয়। যেখানে দুঃখিনী দলটির নাম নিউজিল্যান্ড। নিঃশ্বাস দূরত্বে থাকা শিরোপাও হয়ে ওঠে বিভ্রম, যেন তা ধু ধু মরুভূমিতে কেবলই মরীচিকা। এবার হয়তো মরুর দেশে দুঃখ ঘুচবে কিউইদের; ক্রিকেটের আলোচনায় বলা হচ্ছিল এভাবেই। কিন্তু না, হারই অমোঘ নিয়তি তাদের।
গতকাল দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে রেকর্ড গড়ে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের করা ১৭২ রান ২ উইকেট খুইয়েই টপকে যায় ৭ বল আগে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা সপ্তমবারে এসে টি-টোয়েন্টির শিরোপা ঘরে তুললো, ক্রিকেট বিশ্ব পেল ক্ষুদ্র সংস্করণের নতুন চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ২০১০ সালে একবার ফাইনালে উঠেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় অজিরা।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে যোগ হলো আরও একটি আক্ষেপের অধ্যায়। ২০১৫ সাল থেকে এর শুরু। সেবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই হেরেছিল কিউইরা। এরপর ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে তাদের স্বপ্নচূর হয় ইংল্যান্ডের কাছে হেরে। এবার সেমি-ফাইনালে ইংলিশদের বিদায় করে শোধ নিলেও অজিদের বিপক্ষে পরাজিত সৈনিকই থেকে যেতে হলো উইলিয়ামসন, গাপটিল, বোল্টদের। আরও একবার তাদের সান্ত্বনা- রানার্স আপের তকমা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ডকে বলতে গেলে একাই পথ দেখান অধিনায়ক উইলিয়ামসন। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করার দিনে কয়েকটি রেকর্ড গড়ে দলকে দেন শক্ত ভিত। অধিনায়কের ব্যাটে ১৭২ রানের রেকর্ড সংগ্রহ দাঁড় করায় কিউইরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
চোখের সামনেই শিরোপা, কিন্তু সেটা ছুঁতে রেকর্ড গড়ে জিততে হবে। অস্ট্রেলিয়া দেখেশুনে ব্যাটিং করেও ভালো শুরু করতে পারেনি। শুরুর চাপও অবশ্য বুঝতে হয়নি তাদের। ডেভিড ওয়ার্নার ও ম্যাচসেরা মিচেল মার্শের দারুণ জুটিতে জয়ের পথেই থাকে অজিরা। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মার্শ।
তবে লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা মোটেও ভালো করতে পারেনি অজিরা। দলীয় ১৫ রানেই ট্রেন্ট বোল্টের আঘাতে আউট অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। এরপর শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে ব্যাট করতে থাকেন মিচেল মার্শ। ওয়ার্নার-মার্শের ব্যাটে পাওয়ারপ্লে শেষে অজিদের সংগ্রহ ১ উইকেটে ৪৩ রান। শেষ ১৪ ওভারে দরকার ছিলো ১৩০ রান।
এরপর মার্শ-ওয়ার্নারের দাপটে ৬১ বলে ৯২ রানের জুটি অজিদের দেয় জয়ের ভীত। সোধি, স্যান্টনারদের পাত্তাই দেয়নি এই দুই অজি ব্যাটসম্যান। দলীয় ১০৭ রানে ব্যক্তিগত ৩৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৫৩ রানে বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন ওয়ার্নার। তবে মার্শ একদিকে দাপট দেখিয়ে মাত্র ৩১ বলেই তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটা খুব বেশি সময় স্থায়ী হলো না উইলিয়ামসনের। এই রেকর্ডে নিজের নামে লিখিয়ে নিলেন অজি টপঅর্ডার।
পরে ম্যাক্সওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে সহজেই জয়ের পথটা পাড়ি দেন মার্শ। শেষ ২ ওভারে দরকার ছিলো মাত্র ১১ রান। সাত বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের খোয়ানো দুটি উইকেটই ঝুলিতে পুড়েন বোল্ট একাই।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পায় দুই ওপেনার ড্যারেল মিশেল ও মার্টিন গাপটিল। জশ হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ১১ রানে মিশেল ফিরলে ভাঙে ২৮ রানের ওপেনিং জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে গাপটিলের সঙ্গী হন কেন উইলিয়ামসন। দু’জনে মিলে অনেকটাই ধীরে এগোতে থাকেন। বলের সাথে ঠিক পাল্লা দিয়ে রান করতে পারছিলেন না তারা। ১০ ওভার শেষে দলীয় স্কোর তখন ১ উইকেটে মাত্র ৫৭ রান।
এরপরই খোলস শেকে বেরিয়ে অজি বোলারদের উপর চড়াও হন উইলিয়ামসন। তবে মাত্র ২১ রানে স্টার্কের বলে বাউন্ডারিতে হ্যাজেলউড ক্যাচ মিস করলে জীবন পান উইলিয়ামসন। এরপরই ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করেন ব্ল্যাকক্যাপস অধিনায়ক। দলীয় ৭৬ রানে গাপটিল ব্যক্তিগত ৩৫ বলে ২৮ রানের কচ্ছপগতির ইনিংস শেষে বিদায় নিলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে উইলিয়ামসন তুলে নেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের দ্রুততম ফিফটি।
শেষদিকে ১৮ তম ওভারে গ্লেন ফিলিপস ১৭ বলে ১৮ রানে আউট হবার পর একই ওভারে ব্যক্তিগত ৪৮ বলে ৮৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস শেষে ফিরেন উইলিয়ামসন। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭২ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। অজিদের পক্ষে হ্যাজেলউড সর্বোচ্চ ৩ উইকেট লাভ করেন। অপরদিকে, স্টার্ক ৪ ওভারে দেন ৬০ রান! তবে ম্যাচটি জিতে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে পেয়ে হয়তো সেই আক্ষেপ ভুলে যাবেন এই অভিজ্ঞ পেসার। তিন ফিফটিতে আসর সেরার পুরস্কার ওঠে ২৮৯ রান করা ওয়ার্নারের হাতে।