প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৬:২০:৩৭ অনলাইন সংস্করণ
মোঃ বদরুজ্জামান বদরুলঃ পৃথিবীর হাজারও সম্পর্কের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে কঠিন এবং গভীর বন্ধন গড়ে উঠে মাতা-পিতার সাথে সন্তানের। একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এবং রহমতে, মা-বাবার মাধ্যমে পৃথিবীর সকল মানুষ অফুরন্ত সৌন্দর্যের পৃথিবীকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস ১০ দিন একজন মা তার সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার আগ পযর্ন্ত কি যে কষ্ট করেন সন্তান যখন মা হবেন ঠিক তখনই বুঝতে পারেন। ঠিক তেমনি একজন বাবা তার সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার আগ থেকে বড় হওয়ার আগ পযর্ন্ত কি যে কষ্ট করেন সন্তান যখন বাবা হবেন তখনই বুঝতে পারেন। অনেক প্রতিক্ষার পর খুব অসহায় অবস্থায় একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে। পৃথিবীতে এসে পিতা-মাতার যথাযথ লালন-পালন, আদর, স্নেহ, মায়া-মমতা ও শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে বেড়ে ওঠে প্রত্যেকের সন্তান। সুতরাং সন্তানের জীবনে পিতা-মাতার অবদান অনস্বীকার্য এর কোন বিকল্প নেই। পিতা-মাতার এই অবদান পরিমাপ করা বা এর মূল্য নির্ণয় করা পরিশোধ করা কোনো সন্তানের পক্ষেই সম্ভব নয়। সন্তানের জন্য পিতা-মাতাই একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সুতরাং প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি তাদের যে কর্তব্য তা সঠিকভাবে পালন করা এবং সব সময় তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করা। সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে তার মাতা-পিতা, সন্তানের জীবনে মাতা-পিতার গুরুত্বও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। তাদের অধিকার প্রদান করাই প্রত্যেক সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তানদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। বাবা-মায়ের যখন বার্ধক্য চলে আসে তখন তারা নবজাতক শিশুর মতোই অসহায় হয়ে পড়েন, এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বোঝা না ভেবে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা সন্তানের দায়িত্ব। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি বৃদ্ধ অবস্থায় তার বাবা-মাকে পেয়েও কিন্তু তাদের সঠিকভাবে সেবা-যত্ন করলো না তার মতো হতভাগা এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। পৃথিবীতে পেশাগত সফলতা টিকিয়ে রাখতে এবং সমাজে নিজের মূল্যবোধ বজায় রাখতে গিয়ে সন্তানের কাছে তার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের শেষ স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম তবে, সব বাবা মায়ের না। এই অপসংস্কৃতির হাওয়া আমাদের বাংলাদেশও দেশেও বইছে। আমাদের সরকার প্রধান এবং শিক্ষিত সচেতন সমাজের উচিত আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এটা রোধ করা। পিতা-মাতা মনে কষ্ট পায় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়।
বিভিন্ন ধর্মে পিতামাতার স্থান বা মর্যাদাঃ ধর্ম যাই হোক না কেন সন্তান এবং পিতা-মাতার মধ্যকার ভালোবাসার অনুভূতিগুলো একই রকম ও অকৃত্রিম। প্রত্যেক ধর্মেই মাতা-পিতাকে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কুরআন এবং হাদীস শরীফে মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ আসনে ভূষিত করে বলা হয়েছে। হাদিসে আছে- ‘পৃথিবীতে যদি সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করার হুকুম দেওয়া হতো, তবে তা হতো মাতা-পিতাকে সেজদা করা।’ হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী। পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি।’ খ্রিস্টান ধর্মেও একই রকমের কথা উল্লেখ আছে। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে বলা হয়েছে ‘মাতাপিতার সেবা করাই সবচেয়ে বড় উত্তম’।
মাতা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তঃ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা সকলেই মাতৃ ও পিতৃভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আমাদের প্রিয় এবং যাকে সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেন না প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ রাসূল (স.) শৈশবেই তাঁর মাকে হারিয়ে দুধমাতা হালিমার স্নেহ-মমতায় বেড়ে ওঠেন। দুধমাতা হলেও তিনি তাঁকে নিজের মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। হযরত বায়েজীদ বোস্তামি ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। হযরত আব্দুল কাদির জিলানী, হাজী মুহম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
পিতা-মাতার প্রত্যাশা পূরণঃ সন্তানের বেড়ে ওঠা, তার যথাযথ লালন-পালন, তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা এসব ঘিরেই পিতা-মাতার জগৎ। পিতামাতা সন্তানের জন্য সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করেন। সব বাবা-মার একটাই প্রত্যাশা-‘আমার সন্তান যেন থাকে সুখে শান্তিতে। সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার নিরলস সাধনা বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক মাতা-পিতাই চান তাদের ছেলেমেয়েরা সুসন্তান হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে।
#সংগৃহীত ফিচার।