প্রতিনিধি ১৪ আগস্ট ২০২১ , ৯:৩৪:৫৫ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লা প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার সাবেক এসআই শাহ আলী’র উপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় ওসি নূর আলমের জড়িত থাকার আরো একটি তথ্য এরইমধ্যে ফাঁস হয়েছে। আর ওই ঘটনায় তার সহযোগি হিসেবে কাজ করেছে এক সাংবাদিক এবং মুখোশধারী কিছু যুবক। এই তথ্য জানিয়েছে নৌকার মাঝি মনির হোসেন।
গত ১২আগষ্ট উক্ত মনির হোসেনের দেয়া একটি ভিডিও স্বাক্ষাৎকার ফলাও করে প্রচার করে শাল্লার ঘটনায় অতিউৎসাহী সুনামগঞ্জ থেকে শামস শামীম সম্পাদিত হাওর২৪ ডট কম সহ কয়েকটি নিউজ পোর্টাল। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যুগযুগ ধরে চলে আসা সম্প্রীতির শাল্লাকে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী প্রচারের হোতারা একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করেছিলেন কর্তব্যরত পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর শাহ আলীর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের সাম্প্রদায়িক কারণে ফাঁসানো হয়েছে!
একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাষ্ট্র, সরকার ও সামাজিক স্থিতিশীলতার বিনাশী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে কিছু লোক, ওরা শাল্লা কিছু ঘটলেই সাম্প্রদায়িক জিকির তুলে।
আমাদের হাতে আসা একটা অডিও এবং ভিডিও ফুটেজের আলোকে নৌকার মাঝি মনির হোসেনের বক্তব্য নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো।
মনির হোসেন এক ভিডিও বার্তায় উল্লেখ্য করেন ‘আমি মোঃ মনির হোসেন, আমি নৌকা
বাইয়া ভাত খাই, মনোজ দার নৌকা চালাই। রাতে ঘুমিয়ে রইছি, আমারে ওসি স্যার
ফোন দিছে, ফোন দিয়া বলতাছে আমার কয়েকজন লোক তোর সাথে দেখা করতেছে, তুই তাদের সাথে দেখা কর। আর তারা যা যা বলে তুই সব বলবে। আর যদি তুই না বলস
তাহলে তোকে মদ-গাজা দিয়া ফাঁসিয়ে দেব। তুই সারা জীবন জেল কাটবে। তখন ওসি
বলছে এই কথাগুলা কইয়া তুই দেশ ছাইরা পালিয়ে যাইবে। তখন আমি আমার পরিবারের কাউকে না বলে দেশ (এলাকা) ছাইরা চলে আসি। তখন গেছে কাইল শুনলাম যে ওসি বদলী হইয়া গেছে, এখন ওসি যেহেতু বদলী হইয়া গেছে, তাহলে আমি আমার সত্যটা এই মুহুর্তে প্রকাশ করতেছি। যে ওসি আমাকে এরকম ভাবে ব্ল্যাকমেইল করবে, তো আমিতো কখনোও জানিনি, কি করবো, আমি তো গরীব মানুষ, ওসির কথা শুনে আমি দেশ (এলাকা) ছেড়ে চলে এসেছি। এখন যেহেতু ওসি চলে গেছে, আমি আমার সত্যটা প্রকাশ করছি’।
মনির হোসেনের এই ভিডিও বার্তাটি পেয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মনির
বলেন, হঠাৎ ওসি আমাকে ফোন করে মামলার ভয় দেখিয়ে তার লোকজনরে সাথে যেতে বলেন- ওইসময় সাংবাদিক বিপ্লব সহ আরো কয়েকজন লোক আমাকে মোটর সাইকেলে করে আনন্দপুর গ্রামে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়, ওইখানে আমার কথা রেকর্ড করে। তুমি আর কাউকে চিনতে পেরেছো কি না জানতে চাইলে মনির বলে তাদের মাস্ক পড়া ছিল, আমি তাদের চিনতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, ওসি আমাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতেও হুমকি দেয়।
এবিষয়ে শাল্লা থানার আনন্দপুর গ্রামের বরেন্দ্র রায়ের ছেলে দৈনিক একাত্তরের কথা ও আজকের পত্রিকার শাল্লা উপজেলা প্রতিনিধি বিপ্লব রায়ের সাথে মুঠোফোনে কল দিলে একটি বন্ধ অপরটি রিসিভ হয়নি
এব্যাপারে সদ্য ক্লোজড ওসি নূর আলমের সাথে মুঠোফোনে বারবার কল দিলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গতঃ সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লায় গত ১২ জুলাই দিবাগত রাতে নানা অপকর্মের হোতা যুবলীগ নেতা অপু বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের এসআই শাহ আলী গুরুতর আহত হন। রাতের আঁধারে শাল্লা থানা সংলগ্ন রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। এসআই শাহ আলী সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপুর নেতৃত্বে তার বাহিনীর ৭-৮ জন লোক দা, লোহার রড, লোহার পাইপ নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলায় শাহ আলী গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজনসহ থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা এসে আহত এসআইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ঘটনার পর শাল্লা থানা পুলিশ কথিত যুবলীগ নেতা নাইন্দা গ্রামের অরিন্দম চৌধুরী অপু, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের রতন দাসকে গ্রেফতার করে। গত ৮ আগস্ট রোববার সুনামগঞ্জ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান যুবলীগ নেতা অপু।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রদায়িকতাকে পূঁজি করে যুবলীগ নেতা অপু এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে হিন্দুদের বাড়ীতে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল মানুষের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টায় মেতে ওঠে অপু। বেপরোয়া অপু’র বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে সাম্প্রদায়িকতার ধোয়া তোলে করা হয় হয়রানি। ফলে তার অত্যাচার নিরবে সহ্য করছে শাল্লার মানুষ। যুবলীগ নেতা অপু এর আগেও শাল্লা উপজেলার ইউএনও’র উপর হামলার ঘটনার এজাহারভুক্ত আসামী ছিল। দলীয় প্রভাব ও সাম্প্রদায়িকতাকে পূঁজি করে সে ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।