• ফিচার

    পরীমনি নিয়ে আবেগে কাঁপছে গণমাধ্যম

      প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২১ , ১১:১৬:০৫ অনলাইন সংস্করণ

    মোঃ বদরুজ্জামান বদরুল,বিশেষ প্রতিনিধি।একজন নারীকেবা পুরুষকেও কীভাবে দেখা বা ভাবা হবে, তা ঠিক করে দেয় প্রথমত ব্যক্তির পারিবারিক মূল্যবোধ, এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সবশেষে সমাজ। আর এসব প্রভাবকের ওপর প্রবলভাবে খবর দারী করে ধর্মীয় আবেগ। একই ভাবে একজন নারীর প্রতি সরকার বা রাষ্ট্র কেমন আচরণ করবে সেটা ঠিক করে দেয় প্রচলিত ও সংবিধিবদ্ধ আইন-বিধি-বিধান। শুধুমাত্র একজন নারীর প্রতি কেমন আচরণ হওয়া উচিত সেটাই দেখায় গণমাধ্যম। তাই নারী ঘটিত তুমুল আলোচিত, বিতর্কিত বিষয়ে মতামত, সিদ্ধান্ত আর অবস্থান জানাতে আমজনতার দৃষ্টি থাকে গণমাধ্যমের দিকে। গণমাধ্যম কীভাবে ঘটনাটিকে দেখছে বা বলছে সেটাই নিজেদের দৃষ্টি ভঙ্গি মনে করেন তারা।

    বলছিলাম চিত্রনায়িকা পরীমনির কথা। দেশে এই মুহূর্তে করোনা মহামারির ভয়াবহতা, মৃত্যুর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হওয়া মিছিল, টিকাকাণ্ড, ক্রিকেট উন্মাদনাসহ সব ছাপিয়ে গেছে পরীমনির ঘটনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সয়লাব, হরেক খবরে উপচে পড়ছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম। এমনকি মূলধারার গণমাধ্যম আর তার বেশির ভাগ সম্পাদকেরাও পরীতে মজে গেছেন। প্রতি মুহূর্তের সংবাদের আপডেট জানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। এক কথায় ‘উচিত-অনুচিত’ বোধ ভুলে অনলাইনে নিউজে হিট পাওয়ার আশায় প্রবল আবেগে ভাসছে নাকি ভাসানো হচ্ছে? গণমাধ্যম।

    পরীমনিকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে আলোচনা চলছে তার ওপর কারো কোনো হাত নেই। হাত থাকার সুযোগও যেমন নেই; ব্যক্তি স্বাধীনতার দিকটা দেখলে উচিতও নয়। আগেই বলেছি, একজন নারীকে নিয়ে কে, কী বলছেন, কেন বলছেন- সেটা একান্তই তার শিক্ষা। আর বিগত কয়েক দশকে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের মানুষ তৈরি করেছে- সেটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন দেখি না। তবে এটা অন্তত বলা যায়, রাজনীতি আর অর্থনীতি নিয়ে দেশের নীতি-নির্ধারকরা যতটা সোচ্চার-উদগ্রীব সুশিক্ষা নিয়ে ততটা নয়। অনেকে বলেন, উন্নত রুচির যৌক্তিকবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি হলে তারা প্রশ্ন করা শিখবে। যেসব প্রশ্নের উত্তর, যারা দেশ চালান তারা ঠিকভাবে দিতে পারবেন না। সে কারণেই যত প্রশ্নহীন, অন্ধ বিশ্বাসী মানুষ তৈরি করা যায় ততই তাদের জন্য মঙ্গল।

    অন্যদিকে, আমাদের যে মহান সংবিধান রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের মালিক তথা জনগণের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে- তা কি সঠিক ভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে? সংবিধানে কাউকে মহান বা অমহান হিসেবে কিংবা কাউকে বেশি অধিকার বা কম অধিকার দেয়া হয়নি। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বা চাকর হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাষ্ট্রের মালিকদের সম্মান আর আত্মমর্যাদা সুরক্ষাকে সবার উপরে স্থান দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র বা সরকার পরিচালনাকারীরা তা কি নিশ্চিত করছেন? উচ্চ থেকে নিচ পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে কি মনে করেন? তারা কি জনসেবা করছেন, না শাসন করছেন?

    মূলত, কোনো রাষ্ট্র বা সমাজের সবচেয়ে শেষ ভরসা গণমাধ্যম। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে যা স্বীকৃত। যে গণ মাধ্যমকে হওয়া প্রয়োজন একেবারেই নির্মোহ, নিঃসঙ্কোচ, দুর্দমনীয় সাহসী। ধর্ম-বর্ণ, উঁচু-নিচু, শোষক-শোষিত, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ থাকবে না যার কাছে। সংবিধানের আলোকে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জবাব দিহিতার বিষয়টি নজরদারি করবে। যেখানে আবেগের কোনো রকম স্থান থাকবে না। বাংলাদেশে আইনের প্রচলিত দর্শন হলো, ‘অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হয় সে নির্দোষ’। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অন্তত গণমাধ্যমকে বের হয়ে আসতে হবে। ‘অভিযোগকারীকেই যেন প্রমাণ করতে হয় অভিযুক্ত অপরাধী’ এমন দৃষ্টি ভঙ্গিই থাকা প্রয়োজন গণমাধ্যম তথা গণমাধ্যমকর্মীদের।

    তবে পরীমনি কাণ্ডে দেশ ও দেশের বাইরের মানুষ বাংলাদেশের গণমাধ্যম আর গণমাধ্যম কর্মীদের দৃষ্টি ভঙ্গি আর চেহারা-চরিত্র দেখলো সেটা আঁতকে ওঠার মতোই। গণমাধ্যমের এমন উদ্ভট, বিকৃত, আত্মঘাতী চরিত্র আগে কেউ দেখেননি। গণমাধ্যমের ‘গণ’ কি মুছে যেতে শুরু করলো? তবে কি জনগণের কাছে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার শেষ কফিনেও পেরেক ঠুকছি আমরা নিজেরাই?

    আরও খবর

    Sponsered content