• মুক্ত কলাম

    আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসঃ কতটা মুক্ত গণমাধ্যম?

      প্রতিনিধি ৩ মে ২০২১ , ৪:৩২:৪১ অনলাইন সংস্করণ

    এস এম ওয়াহিদুল ইসলামঃ
    আজ ৩ মে, “বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস”।  “তথ্য জনগণের পণ্য” এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’।
    বাংলাদেশের সূচক ধারাবাহিক ভাবে নিম্নগামী! সূচকে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২ তম!
    সাংবাদিক নির্যাতন দমন-নিপীড়ন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ সহ নানান জটিলতায় ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সেই সূচকে এক ধাপ করে পেছাচ্ছে বাংলাদেশ।  সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১ তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০ তম।

    অর্থাৎ , গতবারের সূচকেও বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছিল বলে জানা যায়।

    এবারের সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলাের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। বাংলাদেশের চেয়ে ভালাে অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ( ১৪৫ ) , ভারত ( ১৪২ ) , মিয়ানমার ( ১৪০ ) , শ্রীলঙ্কা ( ১২৭ ) , আফগানিস্তান ( ১২২ ) , নেপাল ( ১০৬ ) , মালদ্বীপ ( ৭৯ ) , ভুটান ( ৬৫ )। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে , তার ভিত্তিতে ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে , ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
    এরপর থেকেই দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে।
    সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় দিবসটিতে।
    মূলধারার গণমাধ্যম কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দখলেঃ
    অনুন্নত, স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মূলধারার গণমাধ্যম অনেকটাই কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর দখলে! বহুজাতিক কোম্পানি সমূহ নিজের বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে তাদের পণ্যের প্রসার ও প্রচারে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যম এখন মিডিয়া গুলো! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিডিয়া কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও সরকার অলিখিত সমঝোতার মাধ্যমে অবাধ লুটপাট, আধিপত্যবাদ, অধিক মুনাফা এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে প্রকাশ্যে  অ-প্রকাশ্যে কর্পোরেট মিডিয়া ও সরকারের আঁতাত জনস্বার্থ এবং যৌক্তিক জন আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সমান্তরাল ভাবে কাজ করছেন।
    এর বাহিরে ব্যক্তি মালিকানাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান সমূহ সরকারের ভুল কাজের সমালোচনা করলে এবং অসংগতি সমূহ তুলে ধরলে তাদের উপর চলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দমন-পীড়ন! ঠুনকো অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্প্রচার!
    সম্প্রতি আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সাংবাদিকরা নির্যাতিত নিপীড়িত হচ্ছেন। মাদকের বিরুদ্ধে যিনি সোচ্চার দেখা যায় তাকেই মাদক মামলা  দিয়ে ফাঁসিয়ে চুর-ডাকাতের মতো করে হাজির করা হচ্ছে আদালতে! অনেক সময় ভিন্ন মতালম্বী লেখক সাংবাদিক’দের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করে নির্মম নির্যাতন করার অভিযোগও আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং নির্যাতিত ব্যক্তির কাছ থেকে।
    আবার ক্ষেত্রবিশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিউৎসাহী হয়ে নিজেরাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন নির্ধিদ্বায়।
    জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় থেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রােববার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একটি বার্তা প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়— বর্তমানে নির্ভরযােগ্য তথ্য পাওয়াও কঠিন মনে হচ্ছে। এ শূন্যস্থান পূরণ করতে গুজব , মিথ্যা এবং চূড়ান্ত বা বিভাজিত মতামত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি সব সরকারকে তাদের ক্ষমতানুযায়ী একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুমুখী প্রচার মাধ্যমকে সমর্থন করার জন্য সবকিছু করার আহ্বান জানাচ্ছি। গুতেরেস আরাে বলেন, ভুল তথ্য এবং অপপ্রচাররােধে মুক্ত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। জাতিসংঘ সাংবাদিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে , বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন মনে করি। কারণ তথ্য হচ্ছে একটি গণসম্পদ।
    দিবসটি উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ( টিআইবি ) বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে , কোভিড ১৯ মহামারিকালে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পেশাগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। বহু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য সাংবাদিক চাকুরিচ্যুত কিংবা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন। তাই মুক্ত গণমাধ্যম এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অবিলম্বে স্বাধীন ও পেশাদার গণমাধ্যমের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
    আজ গণমাধ্যম দিবসটি উপলক্ষ্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড . ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে । কিন্তু প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন নানামুখী চাপ ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে সাংবিধানিক এই অধিকার মলাটবদ্ধ নথিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
    তারিখঃ ৩ মে, ২০২১ খ্রিঃ

    আরও খবর

    Sponsered content