প্রতিনিধি ১৯ এপ্রিল ২০২১ , ১১:২৫:৪৫ অনলাইন সংস্করণ
নবীন মাহমুদ, ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইনের না থাকা এবং বাহিরের ফার্মেসিতেও স্যালাইন না পাওয়ায় স্যালাইনের হাহাকার করছে সংশ্লিষ্টরা। এতে বিঘিœত হচ্ছে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা। রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন না থাকা এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে দানশীল ব্যক্তিদের কাছে স্যালাইন চেয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তপক্ষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফেসবুক পেজ থেকে সবার কাছে স্যালাইন প্রদানের সাহায্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়েকদিন যাবত ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের ফ্লোরেও রোগ রাখার জায়গা নেই। ভয়ের কথা হচ্ছে যারা আসছেন, তারা সবাই তীব্র্র পানি স্বল্পতা নিয়ে আসছেন । তাদের প্রায় সকলকে আইভি স্যালাইন লাগাতে হচ্ছে। এত স্যালাইন হাসপাতালে সরবারহ নেই। রোগীর সংখ্যা তীব্র আকার ধারণ করায় সরকারি আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্যালাইন প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের পাশে দাঁড়াতে সবার কাছে অনুরোধ করেছে। রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টা পর্যন্ত ৫৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন শতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। ঝালকাঠি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, এক মাসে জেলায় ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছন ১ হাজার ৪৬১ জন। এরমধ্যে গত সাত দিনে ৭০৭ ও ২৪ ঘণ্টায় ১৯৬ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হন। রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে রোগীর সংকুলান না হওয়ায় অন্য ওয়ার্ড ও সব বারান্দার মেঝেতে রেখে স্যালাইন দিতে হচ্ছে রোগীদের। কেউ কেউ শুধু কলেরার স্যালাইন পুশ করেই বাসায় চলে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে সদর হাসপাতালেও ওষুধ ও স্যালাইনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স সমাপ্তি মন্ডল বলেন, প্রতিদিন যে হারে ডায়রিয়া রোগী আসছে তাতে ডাক্তার, নার্সসহ আয়াদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত ৫৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হন। ডায়রিয়া রোগীরা জানান, মুখে খাবার স্যালাইন হাসপাতাল থেকে দিয়েছে কিন্তু আইভি স্যালাইন হাসপাতাল থেকে দিতে পারছে না। বাহির থেকেই কিনতে হচ্ছে তাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ আইভি স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং লকডাউাউনের কারনে সরবরাহ কম থাকায় স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। তাই অনেকেই আইভি স্যালাইন কিনতে এলেও তাদের চাহিদা মত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডিউটি ডাঃ মোঃ জাহিদ বলেন, গত ১০ ঘন্টায় ২৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে এবং ২৫ জন ছাড়পত্র নিয়েছেন। রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাঃ আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল জানান, গত কয়েকদিন থেকেই আইভি স্যালাইন সংকট আছে। লকডাউনের কারণে ইডিসিএল থেকে আইভি স্যালাইন আনা সম্ভব হয়নি এবং গত ৭২ ঘন্টায় প্র্রায় একশ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংকট হয়েছে। ডাক্তার, নার্স নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ দিনে ৫ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সোমবার ৬০ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে এবং অন্তত ৪০ জন ভর্তি রয়েছে। টিএইচও ডাঃ আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল আরও জানান, সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকায় নিরুপায় হয়ে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফরা (ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা ও কর্মচারি) এবং কয়েক ব্যক্তির সহযোগীতায় দেড় হাজার স্যালাইনের অর্ডার দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যেই পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সকলকে খাবার গ্রহনের ব্যাপারেও সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি। ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী জানান, এ বছর ডায়রিয়া আক্রান্তের হার অনেক বেশি। করোনা ও ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে ইতোমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ডাক্তার ও নার্সরা। সংকট থাকার কারণ হিসেবে ইডিসিএল থেকে কম উৎপাদন ও সরবরাহের কথা জানান তিনি। স্যালাইন ও ওষুধের ঘাটতির কথা স্বীকার করে সমাধানের চেষ্টার কথা জানান ডা. রতন কুমার ঢালী।