• ইসলামি জীবন

    খোশ আমদেদ মাহে রমযান-

      প্রতিনিধি ১২ এপ্রিল ২০২১ , ১১:৪৬:১৭ অনলাইন সংস্করণ

    আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব

    শাবান মাসের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে একফালি বাঁকা চাঁদ উদিত হয়ে মুসলিম বিশ্বে আসে মহিমান্বিত মাস রমজান। রহমত, বরকত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, আরব-অনারব সবার কাছে ফিরে আসে এই মাস। পবিত্র এ মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন-মুসলমানরা তাদের ঈমানি চেতনাকে জাগ্রত করে এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নিবেদিত বান্দা হওয়ার মহান সুযোগ লাভ করে। আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস— পবিত্র রমজানুল মোবারক। পবিত্র কোরআনের ভাষায় যাকে ‘রামাদান’ বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে- শাহরু রামাদানাল্লাজি উনজিলা ফি-হিল কোরআন [সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫]। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান সাওম বা রোজা পালন। রজব, শাবান ও রমজান— এ তিনটি মাসই মূলত সিয়ামের মৌসুম। রজব ও শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতির মাস। আর রমজান হচ্ছে অন্য সব মাসের সর্দার। ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম।

    প্রিয় নবীজি (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)

    অপর হাদিসে এসেছে, হযরত শাহ্ ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)

    বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)

    রোজা আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয় ইবাদত। রোজা এমন এক ইবাদত, যা নীরবে ও সবার অজান্তে সম্পাদন করা যায়। কোনও ব্যক্তি রোজা পালন করছে কিনা, তা প্রকাশ না করে গোপনও রাখতে পারে। আবার অন্যের সামনে পরহেজগারি প্রকাশ করতে চাইলে রোজা না রেখেও নিজেকে রোজাদার হিসেবে প্রকাশ করার অবকাশ রয়েছে। রোজার বিধান ও বিধিনিষেধ প্রতিপালনে আল্লাহ ও রোজাদার ব্যতীত তৃতীয় সত্তা নেই। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আদম সন্তানের বিভিন্ন নেক কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়, তবে রোজা ব্যতিক্রম, রোজা আমার জন্য রাখা হয়, আমি নিজে এর প্রতিদান দিবো। (বুখারি, মুসলিম

    হাদিসে আরো এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার।

    সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রানের চেয়েও উওম। রোজাদারের খুশির বিষয় ২টি- যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারী)।

    সমস্ত মুসলিম জাহানের পাপরাশিকে বিদগ্ধ ও ভম্মীভূত করার জন্য এই রমজান মাসের সীয়াম সাধনাই হোক আল্লাহ পাকের কাছে একমাত্র উছিলা। আল্লাহ পাক মুসলিম বিশ্বকে এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব উপলদ্ধি করার তৌফিক দান করুন। এটাই আমাদের একান্ত কামনা ও প্রত্যাশা।

    মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে করোনা ভাইরাসের মহামারী থেকে হেফাজত করুন। এবং মুসলিম উম্মাহকে সর্ব প্রকার বিপদ আপদ থেকে হেফাজতে রাখুন। সেই সাথে রমজানের রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাত নসিব করুন, এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করে আমরা সুন্দরভাবে নিজের জীবনকে পরিচালনা করতে পারি সেই তৌফিক দান করুন! আমিন।

    আল্লামা জুনায়েদ আল হাবীব দা.বা.
    প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল : জামিয়া কাসেমিয়া আশরাফুল উলুম ঢাকা।

    আরও খবর

    Sponsered content