• লিড

    সুনামগঞ্জের ডিসির নির্দেশে সেই রাজাকার পুত্রের কবল হতে ৩ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধার!

      প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ , ৭:২০:২০ অনলাইন সংস্করণ

    কুলেন্দু শেখর দাস,সুনামগঞ্জঃ
    সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অবশেষে জেলার তাহিরপুর উপজেলায় রাজাকার পুত্র শামীম আহমেদ গংদের কবল হতে দখলমুক্ত হলো তাহিরপুরে মুক্তিযুদ্ধে ৫নং সেক্টরের ‘মুক্তির মঞ্চ’সহ প্রায় তিন কোটি টাকার সরকারি সম্পদ।
    বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের নির্দেশক্রমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
    সেই অভিযানে ‘মুক্তির মঞ্চ’ ও কথিত কিন্ডারগার্টেনের নামে দখলে থাকা সরকারি সম্পদ এবং তিনটি ভবন উদ্ধার করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেয় তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন।
    একইসঙ্গে দখলে থাকা তিনটি ভবন সিলগালা করে দেয়ার পর লোহার বেষ্টনী দিয়ে বন্ধ করে দেয়া জনচলাচলের রাস্তাটিও পাঁচ বছর পর ফের উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
    উচেছদ অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী ও সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. মুনতাসির হাসান, ট্যাকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ও আনসার সদস্যরা।
    একাত্তরের মুক্তির মঞ্চ ও সরকারি সম্পদ রাজাকার পুত্রের গংদের কবল থেকে মুক্তি হওয়ায় উল্লাস প্রকাশ ও সমাবেশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও স্থানীয়রা।
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারের দায়িত্বশীল মহল, জেলা প্রশাসকসহ উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
    প্রসঙ্গত,এ নিয়ে শতাধিক বীরমুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগপত্র গত কয়েক বছর ধরে  জেলা প্রশাসক ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
    বীরমুক্তিযোদ্ধাদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছিল,সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া মৌজার ১নং খতিয়ানভুক্ত এসএ ও আরএস দাগে ৭৬.৩৬ একর সরকারি জমি রয়েছে।
    ওই মৌজার ওই দাগে খতিয়ানের থাকা প্রায় জমি জুড়ে থাকা ৭১’র মুক্তির মঞ্চ, সমাবেশ স্থল, ছোট মাঠ, তিনটি ভবন, ভবনের ভেতর থাকা চেয়ার, টেবিল, আলমিরা, সোফা, টেলিভিশন, খেলাধুলার উপকরণ, ১২টি জোড়া ড্রাম, মুল্যবান লোহাজাত সামগ্রী, অর্ধশত ফলদ ও বনজ দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ, দুটি শৌচাগারসহ প্রায় ১ একর জমি দখলে নেন উপজেলার তরং গ্রামের শামীম আহমদের নেতৃত্বে থাকা তার অপর সহযোগী সুর্য্যেরগাঁও গ্রামের প্রয়াত ললিত দাসের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক স্বপন কুমার দাস সহ একদল ভুমিখেকো চক্র।
    এরপর ২০১৫ সালে রাতের আঁধারে ব্যক্তি মালিকানাধীন নাম সবর্স্ব একটি কিন্ডারগার্টেনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় ওই চক্রটি।
    পরবর্তীতে জনসমাগম ও প্রশাসনের দৃষ্টিতে দখলবাণিজ্য আড়াল করতে জন চলাচলের একমাত্র কাঁচা সড়কটিও লোহাজাত সামগ্রী দিয়ে বন্ধ করে দেয় তারা।
    শুধু সরকারি কোটির টাকার জমি দখলই নয় ওই জমির ওপর থাকা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)’র ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি (পতিত) প্রকল্পের প্রায় ৩০ লাখ টাকা মুল্যের শ্রমিক কর্মচারী ক্লাব, শ্রমিক ইউনিয়ন ভবন, শ্রমিক কর্মচারী ক্যান্টিনসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আসবাবপত্রসহ দখলে নেয় শামীম গংরা।
    অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন শামীম আহমদ তালুকদারের বাবা প্রয়াত আব্দুর রউফ তালুকদারের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি সে সময় পাক হানাদার বাহিনীদের সহায়তা করেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।,
    এদিকে ৪ ডিসেম্বর তাহিরপুর ‘মুক্ত দিবস’ পালন উপলক্ষে বিজয়র‍্যালী শেষে এক সমাবেশে পাকসেনাবাহিনীর দোসর স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার পুত্র ও তার সহযোগীদের দখল হতে বিজয় দিবসের প্রারম্ভে ‘মুক্তির মঞ্চ’ ও সরকারি সম্পদ উদ্ধার করা না হলে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বিজয় দিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেন।
    এ নিয়ে গত ৪ ও ৫ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি সরকারের উপরমহল ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নজরে আসে।
    পরবর্তীতে গত ৮ ডিসেম্বর জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের দাবির প্রেক্ষিতে ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টরে ‘মুক্তির মঞ্চ’সহ সরকারি জমি,ভবন উদ্ধারে তাহিরপুরের ইউএনও,সহকারি কমিশনারকে (ভুমি) মঙ্গলবারের মধ্যে দ্রত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
    উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে থানা মুক্তিযোদ্ধা সংদের সাবেক কমান্ডার, শহীদ সিরাজ স্মৃতি সংসদ সভাপতি হাজি রৌজ আলী, উপজেলার শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির উদ্দিন, ইউনিয়ন কমান্ডার আলকাছ উদ্দিন, নুর মাহমুদ, আব্দুল কুদ্দুছ, ডেপুটি কমান্ডার গোলাম রব্বানী, আবু তাহের, বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহানুর মিয়া, কুদরত আলী,সুজাফর আলী,সেলিম উদ্দিন,জাহের মিয়া, আবদুল মতিন,আব্দুল খালেক, খুর্শীদ আলী,আক্কল আলী, ট্যাকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই আবু মুসা,জেলা ও উপজেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকগণ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান,আওয়ামী লীগ অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

    আরও খবর

    Sponsered content