• জাতীয়

    অদম্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ঠাকুরগাঁওয়ের গলেয়া দাস

      প্রতিনিধি ৫ ডিসেম্বর ২০২০ , ২:২৯:৪৮ অনলাইন সংস্করণ

    ঠাকুরগাঁও থেকে মাহমুদ আহসান হাবিব।। বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেশ চন্দ্র দাস সবার কাছে পরিচিত “গলেয়া দাস” হিসাবে, বয়স ৭১ বছর সম্ভ্রান্ত কোনো পরিবারের সদস্য কিংবা আহামরি শিক্ষিত না হয়েও দেশের মাটির ভালোবাসার টানে দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করতে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৫১ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ বাজারে জন্ম গ্রহন করেন এ বীরমুক্তি যোদ্ধা।

    মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জন্মের পরে বাবাকে হারিয়ে, অসুস্থ্য মা ও প্রতিবন্ধি বড় ভাইকে নিয়ে অভাবের সংসারে, এক বেলা খেয়েই কোন মতো দিন পার করতেন। অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মাকেও হারিয়েছেন। কিন্তু শত কষ্টের মাঝেও মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিতে পিছু হাটেননি তিনি। অন্যের বাসা-বাড়িতে রাখালের কাজ করে একবেলার আহার জোগাড় ও কষ্ট করে ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।

    মুক্তিযুদ্ধো শুরু হলে প্রতিবন্ধী বড় ভাইকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য আনসার কমান্ডার আব্দুর রহমানের সাথে চলে যান ভারতের থুকরাবাড়ি ক্যাম্পে। সেখানে প্রথমে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে মুজিব ক্যাম্পে ২৮ দিন প্রশিক্ষণ শেষে চলে যান মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টর চেংরা মাড়া টাউনের বুড়ি মাড়ি হাটে সেখানেই উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশারের অধিনে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনেন।

    দেশ স্বাধীনের পর ফিরে আসেন নিজ ভুমিতে। দেবীগঞ্জ বাজারের একটি ছোট্ট সাইকেল মেরামতের দোকান দেন। ২মেয়ে ২ ছেলে জনক তিনি, দুই মেয়ের বিয়ে দিলেও বড় মেয়ের স্বামী অকাল প্রায়ত হওয়ায় সে এখন বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। আর বড় ছেলে বাস-রেলস্টোশনে কুলির কাজ করে সংসার চালান। ছোট ছেলে ডিগ্রী পাস করে চাকুরির জন্য দফতরে দফতরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এখন ক্ষেত খামারে কাজ করেন। আর বাবা রাস্তায় ধারে বসে অন্যের বাইসাইকেল মেরামত করেন।

    বীর মুক্তিযদ্ধা রমেশ চন্দ্র বেশির ভাগ সময় থাকেন মুখ ভরা হাসি নিয়ে। স্থানীয়দের কাছে মানুষ হিসেবে অত্যন্ত রসিক এবং খোলা মনের, কারো কাছে তাঁর কোন চাওয়া কিংবা কারো প্রতি রাগ-অনুরাগ নেই তার। শুধু আছে অন্যের প্রতি গভীর ভালোবাসা, সম্মান, বিশ্বাস, দেশপ্রেম, আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

    জানাযায়, দীর্ঘ ৩০ বছর অপেক্ষার পর বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়া শুরু করলে তিনিও সেই ভাতা পান। প্রথম দিকে ৩শ থেকে এখন ১২ হাজার টাকা মাসিক মুক্তিযদ্ধা ভাতা উত্তোলন করেন। এবং বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় তাকে মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের সুযোগ্য কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

    আরও জানাযায়, শহিদুল রহমান স্ত্রী সেলিনা আক্তার জমি সংকান্ত বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেশ চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা চালাতে দীর্ঘ ১৮ বছর আদালত পাড়ায় দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে ঋনের দায়ে তিনি আজ সর্বশান্ত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণের কাছে গেলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে বরং উল্টো ক,কথা শুনে অসহায়ের মতো ছল ছল চোখে ফিরে আসেন। অবশেষে চলতি বছরে সেই মিথ্যা মামলা রায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেশ চন্দ্র দাসের পক্ষে আসেন।

    বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেশ বলেন, মিথ্যা মামলার জন্য আমাকে ১৮ বছর কোর্টের বারান্দায় ঘুরাঘুরি করতে হবে তাহলে এ কেমন স্বাধীনতা?

    ১৮ বছর খেয়ে না খেয়ে ঋন করে মিথ্যা মামলা চালিয়েছি। আমার ঋনের বোঝা বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এই বয়সেও সাইকেলের মেকারি করে এতো বড়ো সংসার চালাতে হচ্ছে। কি আর বলব বলুন?

    আমার দুচোখের পানি শুকিয়ে গেছে। ছোট ছেলেকে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা শিখালাম যদি একটা চাকুরী পাই। আমার টাকা নাই তাই চাকুরীও নাই। তাই রাস্তায় বসে সাইকেল মেকারি করে মাহাজন শোধ করতেছি। যত দিনবেঁচে থাকবো মেকারি করে মাহাজন শোধ করব। কিন্তু আমি এই মামলাতেই মরে গেছি।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবরের কথা শুনলেই আমার কান্না আসে। ওনি এমন একটা মানুষ ছিলেন ওনার আওয়াজ শুনলেই আমার বুক কেঁপে ওঠে। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিবো, তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এই কথা গুলো শুনলে আমি আবেগ আপ্লূত হয়ে যায়।

    কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধু কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও একটা ঘর নির্মাণ করে না দিতো তাহলে আজ আমাকে বউ বাচ্চা নিয়ে পথে বসতে হতো।

    আরও খবর

    Sponsered content