প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২০ , ১২:৪৮:০৪ অনলাইন সংস্করণ
শাল্লা প্রতিনিধি- হাওরবেষ্টিত উপজেলা শাল্লা। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। মধ্যে একেকটি ভূখন্ড। এই ভূখন্ডগুলোতে প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে হতদরিদ্র, নিপীড়িত ও খেটে খাওয়া দিনমজুরের সংখ্যাই বেশি। তাই এসব মানুষের চিন্তা করেই সরকার মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শাল্লা উপজেলা হাসপাতাল। শুরুতে হাসপাতালের সুনাম থাকলেও বর্তমানে হাসপাতাল নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। আর জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিকারি হচ্ছেন শাল্লা হাসপাতালের প্রধান সহকারি নিশিকান্ত তালুকদার। তিনি স্থানীয় প্রভাবে রামরাজত্ব কায়েম করছেন শাল্লা হাসপাতালে। একাধিকবার অভিযোগ হওয়া সত্ত্বেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিশিকান্ত দাস এমএলএসএস পদে ১৯৯৪ সালে ২৭ জানুয়ারী যোগদান করেন ছাতক হাসপাতালে। হাসপাতালে যোগদান করার সময় তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত ভূমিহীন কৃষক। এমনকি ভূমিহীন ব্যক্তিদের তালিকায় তিনিও ছিলেন একজন। কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়া এই কর্মচারী আজ অঢেল সম্পত্তির মালিক। শুধু তাই নয়, বর্তমানে এলাকায় তিনি একজন তালুকদার বংশের লোক হিসেবে পরিচিত। বন্দোবস্ত পাওয়া নিশিকান্তের তালুকদারী সম্পত্তি না থাকা সত্ত্বেও নামের শেষে তালুকদার টাইটেল দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে লুকিয়ে থাকা পেছনের অনেক কাহিনী।
জানা যায় ১৯৮৯ সালে হতদরিদ্র ও ভূমিহীন ব্যক্তিরা তৎকালীন জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরে খাস জমি বন্দোবস্ত পান। এর মধ্যে নিশিকান্ত দাস ৩২৩/১৯৮৮-৮৯ নং বন্দোবস্ত মুলে হবিবপুর মৌজায় ৮৭৪ দাগে ১.৩৮ একর জায়গা কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত পান। কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত পাওয়া এই অফিস পিয়ন আজ কোটিপতি হলেন কিভাবে ? এমনই প্রশ্ন এলাকাবাসীর। শুধু তাই নয়, সিলেট শহরসহ শাল্লা উপজেলা সদরে উনার অনেক সম্পত্তি রয়েছে। বাহাড়া ইউনিয়নের সুখলাইন মৌজায় দিরাই-শাল্লা সড়ক সংলগ্ন ১৮০৫ দাগে ৮৪ শতক জায়গা রয়েছে তার। যার বর্তমান বাজার মুল্য প্রায় ৭০লাখ টাকা। আর এসব সম্পত্তি তিনি করেছেন অফিস পিয়নের চাকুরী করেই। বারবার শাল্লা থেকে বদলী হলেও টাকা পয়সা দিয়ে একই কর্মস্থলে ফিরে আসেন তিনি। নিজ এলাকার মধু খেয়ে অভ্যস্থ হয়ে গেছেন, তাই মধুর স্বাদ ভুলতে পারেননি তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, শুধু সুখলাইন মৌজায় ও সিলেটে নয় ; তিনি নামে-বেনামে আত্মীয়-স্বজনদের এলাকাতেও ভূ-সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। তাছাড়া স্থানীয় আনন্দপুর ও দাড়াইন বাজারেও তার ১টি করে ২টি দোকানভিট রয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুধু আমার মূখের কথা নয়, হবিবপুর গ্রামের যেকোনো জনকে জিজ্ঞাসা করলে নিশি বাবুর অতীত অকপটে বলে দিতে পারবে। তিনি যে একজন ভূমিহীন ছিলেন, তা একদম সত্যি। আর সরকারি চাকুরী করে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে আজ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে শাল্লা হাসপাতালের প্রধান সহকারি নিশিকান্ত তালুকদারের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন,
আমি ভূমি পাইনি। এটা দূ:খজনক। কারা আমার বিরুদ্ধে এসব করছে, তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। ১৯৮৭ বা ৯০ সালে আমি একটি আবেদন করেছিলাম। তখন আমি সরকারি চাকুরী করি না। এটা অনুমোদন হয় নাই। আমাদের হাসপাতালের অনেক অফিসার স্টাফ রয়েছে, কিন্তু আমার বিরুদ্ধেই শুধু নিউজ হচ্ছে। এতো সম্পত্তির মালিক কী ভাবে হলেন ? এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ সামছু উদ্দিনের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সত্যিই আশ্চর্য একটি কথা শুনলাম। একজন সরকারি কর্মচারী কোনো খাস জমি বন্দোবস্ত পেতে পারেনা। এটা খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটিই বলতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে বার বার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।