ভাটি বাংলা ডেস্ক: ১ নভেম্বর ২০২৪ , ২:৪৩:০৪ অনলাইন সংস্করণ
ভারতের আশ্রয় নেতা পতিত শেখ হাসিনার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থামছেই না। একের পর এক ষড়যন্ত্র করে এ দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন।
‘ডিসেম্বরে দেশে ফিরবেন’ ‘২২৭ জনকে হত্যা করবেন’ গাইবান্ধার এক নেতার সঙ্গে অডিও সংলাপে এ ঘোষণা দেয়ার পর ফের গার্মেন্টস সেক্টরে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করছেন। আর হাসিনার বিশৃঙ্খলার রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কয়েকজন গার্মেন্টস মালিক, শ্রমিক নামধারী কিছু ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডার ফের মাঠে নেমেছে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে রাস্তা অবরোধ করে দু’টি গার্মেন্টসের কর্মী নামধারী সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা আশপাশের আরো আটটি গার্মেন্টসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। পুলিশ ও যৌথবাহিনী বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয়। এতেই ক্ষান্ত হয়নি শ্রমিকের আড়ালে থাকা সন্ত্রাসীরা। রাস্তা অবরোধমুক্ত করতে গেলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর শেষে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এতে দু’টি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তাদের কিছু শ্রমিক থাকলেও বেশির ভাগই যুগলীগের কর্মী। আর গার্মেন্টস মালিকদের অনেকেই শ্রমিকদের উসকে দিতে ইচ্ছে করে বেতন-ভাতা আটকে রেখে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের পাঁয়তারা ও পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে এবার শ্রমিকবেশে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ পতিত আ.লীগ সরকারের প্রেতাত্মারা। আর অন্তরালে থেকে এসব সন্ত্রাসীদের অর্থ ও নাশকতার উপাদানের জোগান দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কতিপয় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কুচক্রী মহল আশুলিয়া-সাভারের পর এবার ঢাকার গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসমূহে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এই কুচক্রী মহল এ ধরনের আরো ঘটনা ঘটানোর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। যেকোনো সময় তারা ভিন্নরূপে অন্য কোনো আন্দোলনের নামেও নাশকতার অপচেষ্টা চালাতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার ঠুনকো দাবিতে আন্দোলনের নামে রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে দু’টি গার্মেন্টেসের কর্মীরা। এ সময় তারা আশপাশের আরো আটটি গার্মেন্টসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
পুলিশ ও যৌথবাহিনী বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয়। এতেই ক্ষান্ত হয়নি শ্রমিকের আড়ালে থাকা সন্ত্রাসীরা। রাস্তা অবরোধমুক্ত করতে গেলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর শেষে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দু’টি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
পুলিশের সাথ দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর পুলিশ টিয়ারশেল ও পরে রাবার বুলেট ছুটতে বাধ্য হয়। এতে মিরপুর-১৪ নম্বরের কাফরুল ও ভাষানটেক থানার কিছু এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশের গুলিতে এ সময় দুজন শ্রমিক আহত হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর আগে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসীদের রাস্তা অবরোধের কারণে অফিসগামী মানুষদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বিড়ন্বনার শিকার বেশির ভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেন। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ৮টায় মিরপুর-১৪ নম্বরের ‘গার্মেন্ট ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার্স লি.’ নামে একটি পোশাক কয়েকশ শ্রমিক কচুক্ষেতে রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে।
শ্রমিকরা কাছাকাছি আরো আটটি গার্মেন্টে হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা করে। সেনাবাহিনী তাদের ফাঁকা গুলি ছুুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু তারা আবারো জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে।
সংঘর্ষ মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে মিরপুর ১৪ নম্বর সড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোর যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ পোশাক শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাড়িতে আগুন লাগানোর পরেও আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি চালায়। এতে দুই পোশাক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন।
এরা হলেনÑ আল আমিন (১৮) ও ঝুমা আক্তার (১৫)। এদের মধ্যে আল আমিনের দুই কাঁধে ও ঝুমার ডান পায়ের গোড়ালিতে গুলি লাগে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর ১২টার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়। স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম মোস্তফা গত রাতে ইনকিলাবকে বলেন, শ্রমিকবেশের আন্দোলনরতদের তা-ব ছিল কাফরুল ও ভাষানটেক থানার বেশ কিছু অংশজুড়ে।
পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলাটির বাদি হবে পুলিশ। তবে আসামিদের ব্যাপারে তিনি মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, যারা যৌথ বাহিনীর ওপর হামলা ও গাড়ি পুড়িয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা গেছে। এসব চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন ভাষানটেক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল।
তিনি বলেন, পুলিশ লাইনের গাড়ি পোড়ানোর দায়ে তার থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য জানিয়েছেন, গতকালের ঘটনাটি আসলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন ছিল না। কারণ তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো দাবি ছিল না। ঠুনকো দাবি তুলে তারা রাস্তায় নেমেছে। মূলত তাদের উসকে দিয়েছে একটি চক্র।
সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার অপচেষ্টা। এ জন্য চক্রটি মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। এর পেছনে আওয়ামী লীগের একাধিক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছেন। পুলিশ ইতোমধ্যে এদের সম্পর্কে তদন্ত শুরু করেছে।
কচুক্ষেত এলাকায় মৌসুমি অ্যান্ড ভুঁইয়া নামে একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, তিন দিন আগে ওই ভবনের একটি পোশাক কারখানায় এক নারী পোশাক শ্রমিককে মারধর করা হয়।
এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে একজন পুরুষ শ্রমিককেও মারধর করা হয়। গতকাল সকালে শ্রমিকরা ওই কারখানায় গেলে কারখানা বন্ধ দেখেন। এ ঘটনার বিচার দাবিতে ও কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে।
সূত্রঃ ইনকিলাব