• মুক্ত কলাম

    আওয়ামী ব্যান্ডওয়াগন এফেক্ট ও চিন্তার দাসত্ব

      কাজী জেসিন ৭ নভেম্বর ২০২৪ , ১:৪৯:৪০ অনলাইন সংস্করণ

    আমরা দীর্ঘদিন শাসিত হয়েছি একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের দ্বারা। এই সরকার শুধু আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, নিরাপদে বাঁচার অধিকার, সাম্যের অধিকারই কেড়ে নেয়নি, হরণ করেছে বহু মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারার ক্ষমতা।

    সুতরাং চিন্তার শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে আসতে হলে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে বিরুদ্ধ চিন্তাকে লজিক্যালি

    ফ্যাসীবাদের ভিত্তি মজবুত হয় সবসময় গণমাধ্যম এবং শিল্পীদের দ্বারা। বিগত পনেরো বছর আওয়ামী লীগের বর্ধিত মাধ্যম হিসেবে মূলত কাজ করেছে গণমাধ্যম ও শিল্পীসমাজের বৃহৎ অংশ। আমরা দেখেছি গণমাধ্যম পরিণত হয়েছে মাফিয়া মাধ্যমে। প্রতিবাদীরা সেখানে নানাভাবে পিষ্ট হয়েছেন।

     

    শিল্পীরা লিখে, গান গেয়ে, অভিনয় করে, সিনেমা, নানারকম মূর্তি বানিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো জনগণ যখন পুঁজিবাদী দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজব্যবস্থার মধ্যে গা এলিয়ে আগে বাড়তে চায়, তখন জ্ঞানের চেয়ে আর্থিক সুবিধালাভে তার মনোযোগ বেশি থাকে। আর তাতে সুবিধা হয় যেকোনো ফ্যাসিস্ট বা মাফিয়া সরকারের। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। সবার হাতে অর্থ তুলে দিয়ে, সবাইকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে সরকার তার ভিত্তি মজবুত করেছে। কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে কীভাবে?

    কীভাবে এদেশের বহু মানুষ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এরকম একটা মাফিয়া সরকারকে সহ্য করেছে? এর পেছনে আছে কয়েকটি কারণ। মূল যে কারণটি এড্রেস না করলেই নয়, তা হলো চিন্তায় করাপ্ট হওয়া। চিন্তার করাপশন মানুষের কীভাবে হয়?

    “ব্যান্ডওয়াগন এফেক্ট” (Bandwagon Effect) বলে একটি ধারণার সূত্রপাত হয় ১৯ শতকের শেষের দিকে। থমাস নস্ট নামক একজন রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট এই ধারণাটি জনপ্রিয় করেন। তার কার্টুনে তিনি “ব্যান্ডওয়াগন”, একটি মিউজিক্যাল ওয়াগনকে প্রতিনিধিত্ব করতেন, যা রাজনৈতিক প্রচারণার সময় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যবহৃত হতো। ধারণাটি ছিল যে মানুষ ‘ব্যান্ডওয়াগনে’ যোগ দেবে এবং একটি প্রার্থী বা উদ্দেশ্যকে সমর্থন করবে কেবলমাত্র কারণ এটি জনপ্রিয় এবং চলন্ত।

    সময়ের সঙ্গে, এই প্রক্রিয়া একটি ব্যাপক মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক প্রভাব বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হতে শুরু করে, যেখানে মানুষ ট্রেন্ড বা আচরণ অনুসরণ করে কারণ তারা দেখে অন্যরা এটি করছে এবং প্রচারমাধ্যমও একাধারে প্রচার করতে থাকে তাই যা  ক্ষমতাবানদের চিন্তাকে তুলে ধরে।

     

    এই ব্যান্ডওয়াগন তত্ত্বের কাছে পরাস্ত হয় মূলত যাদের জ্ঞানের অভাব থাকে। জ্ঞানের অভাব বলতে এখানে তাদের কথা বলছি যারা কোনো “বহুল প্রচারিত আদর্শ,  বিশ্বাস বা সংস্কৃতি” যা মূলত ফ্যাসিস্টের প্রোপাগান্ডার অংশ, তা বিশ্বাস করার আগে  নিজের বোধ ও বিবেচনা দিয়ে মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখেন না। অ্যারিস্টোটল বলেন, “The more you know, the more you realiæe you don&_t know.” যখন মানুষের জ্ঞান অন্বেষণ থেমে যায়, ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং বন্ধ হয়ে যায়, তখন চিন্তার করাপশন ঘটে। তাছাড়া ভয় থেকেও মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে করাপ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

    ফ্যাসিস্টরা গণমাধ্যম এবং শিল্পমাধ্যমকে ব্যবহার করে যা জনপ্রিয় করে তোলেন, আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাই বিশ্বাস করেন। এর মধ্যদিয়ে অনৈতিক কাজ করেও এক ধরনের নৈতিকতার আরাম তারা পান। জঁ-পল সার্ত্র এবং অন্যান্য অস্তিত্ববাদীরা ‘ভ্রান্ত বিশ্বাস’ ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে প্রতারণা করে যেন তারা তাদের অস্তিত্ব বা কাজ সম্পর্কে অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি না হয়। এই স্ব-প্রতারণা হলো চিন্তার করাপশনের একটি রূপ, কারণ এটি ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তবতা উপেক্ষা বা বিকৃত করার মাধ্যমে ঘটে। সমাজে এই কাজটি ঘটে চলেছে টানা বিগত পনেরো বছর ধরে। আর এরই অংশ হিসেবে বিকৃত ইতিহাসনির্ভর বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করে, নাটক বা সিনেমা বানিয়ে অনেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা, সিনেমায় অভিনয় করে শিল্পীরা পেয়েছেন বিনামূল্যে প্লট।

    আমরা বিগত বছরগুলোতে যেকোনো অধিকারের প্রশ্ন আসলেই শুনতাম জামায়াত-শিবিরের ষড়যন্ত্র। আওয়ামী সরকার বিশ্বাস করাতে চেয়েছে যে তারা ক্ষমতায় না থাকা মানেই এই দেশে ইসলামী জঙ্গির আবির্ভাব হবে এবং পতিত আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার এখনো নানাভাবে সে প্রোপাগান্ডার তুষেই আগুন দিয়ে যাচ্ছে।

     

    এরই অংশ হিসেবে ক’দিন আগে গাজী টিভির নিউজ রুম এডিটরের মৃত্যুকে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, “সাংবাদিক রাহানুমা সারার মৃত্যু দেশটির মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরেকটি ‘নিষ্ঠুর আক্রমণ’।

     

    ” তিনি উল্লেখ করেন যে, গাজী টিভি একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবাদ চ্যানেল যা সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন। মূলত তিনি আত্মহত্যার ইঙ্গিত রেখে গেছেন এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে এরকম কোনো প্রমাণ সুরতহালে পাওয়া যায়নি। বরং সামনে উঠে এসেছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সেকুলারিস্ট চ্যানেল তাকে বেতন না দেয়ায় তিনি ভীষণ অর্থকষ্টে ছিলেন, এমনকি টানা কয়েকদিন তিনি ভাত খেতে পারেননি। সুতরাং যে ধরনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে তার ভিত্তিতে উল্টো আমরা গাজী টিভির মালিক সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভাষায় ‘সেকুলারিস্ট’ সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে সাংবাদিক সারার আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনতে পারি।

    মূল কথায় ফিরে আসি। জনাব জয় মানুষকে বিশ্বাস করাতে চান যে ধর্মনিরপেক্ষ সংবাদ চ্যানেলের সংবাদকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে অর্থাৎ সেকুলারিজমের ওপর আঘাত এসেছে। এই তথ্য তিনি ছড়াতে চান কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিই এই সাম্প্রদায়িকতার বীজনির্ভর।

     

    বৃটিশরা ভারত শাসন করেছিল ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতি দিয়ে। বৃটিশ শাসন নেই, কিন্তু এই নীতি রয়ে গেছে। এই নীতি এখন মোদির ভারত নীতি। ইসলামোফোবিয়া জিইয়ে রেখেই ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছে। জামায়াত নিয়ে ভারতের আপত্তির মূল কারণও এই ইসলাম। অথচ মোদি নিজেই একটি ধর্মভিত্তিক দলের (আরএসএস) নেতা। শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে ভারতে মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

     

    এটা রিয়্যালিটি। বাংলাদেশে ভারত ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি জারি রাখার মধ্যদিয়ে শুধু আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় রাখতে চায়নি; বরং তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছে যেন এই দেশের আপামর জনসাধারণ কখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে না পারে। কারণ জনতা ঐক্যবদ্ধ হলে, জনতার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হলে ভারত তার অন্যায্য মুরুব্বীগিরি দেখানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। সরকার যখন দুর্বল হয় এবং যখন অবৈধ হয়, তখনই তার অন্ধকার পথে টিকে থাকার জন্য ক্ষমতাবানদের সাহায্য প্রয়োজন হয়।

     

    ঐক্যবদ্ধ একটি শক্তিশালী জনপ্রতিনিধি ক্ষমতায় গেলে কোনো সরকারই তার ফায়দা হাসিল করতে পারবে না। এই সত্যটুকু না বুঝলে আমরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া অসত্যের রাজনীতি কোনোদিন বুঝতে পারবো না। সুতরাং ইসলামভীতি যে অপরাজনীতির অস্ত্র এবং এর বিস্তৃতি কতোদূর তা আমাদের প্রথম বুঝতে হবে।

     

    এই অলি-আউলিয়া, বাউলের বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার দুঃস্বপ্ন যারা দেখছেন এবং দেখাচ্ছেন, তাদের মূলত মাইন্ড ডিটক্সিফিকেশন দরকার। জঁ-জাক রুশো বলেছিলেন, ‘মানুষ স্বাধীন জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু সর্বত্রই শৃঙ্খলিত।’ রুশোর মতে, সমাজের অপশিক্ষা এবং ভ্রান্ত ধারণাগুলো মানুষকে তার প্রকৃত স্বাভাবিক অবস্থায় থেকে বিচ্যুত করে এবং তাকে শৃঙ্খলিত করে রাখে। প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।

    আমরা দীর্ঘদিন শাসিত হয়েছি একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের দ্বারা। এই সরকার শুধু আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার, নিরাপদে বাঁচার অধিকার, সাম্যের অধিকারই কেড়ে নেয়নি, হরণ করেছে বহু মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারার ক্ষমতা। সুতরাং চিন্তার শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে আসতে হলে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে বিরুদ্ধ চিন্তাকে লজিক্যালি।

     

    আর লজিক সৃষ্টির জন্য উন্মুুক্তমনে জানতে হবে। পাঠ করতে হবে এমন বই যা ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের পড়তে দেয়নি। কারণ আপনার চিন্তার মালিক, বিশ্বাসের মালিক আপনি। এই বিশেষ ক্ষমতাই আমাদের স্বাধীন করে তোলে। হাসিনার পতন আমাদের স্বাধীন করবে না যতদিন না আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা আমরা ফিরে পাবো।

     

    শুধু ভোটের স্বাধীনতা না, চিন্তার স্বাধীনতার সম্পূর্ণ ব্যবহারের মধ্যদিয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে গড়তে পারে আগামীর বাংলাদেশ। কোনো কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনায় তথাকথিত প্রগতিশীলদের ভেতরে দেখছি ভীষণ আতঙ্ক বা ক্ষোভের প্রকাশ ঘটছে। সম্প্রতি ব্রিগেডিয়ার আমান আযমী জাতীয় সংগীত নিয়ে অনেক পুরানো এক বিষয়কে সামনে হাজির করেছেন। আমরা এর বিপক্ষে বা পক্ষে বলবো অথবা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কিছুই বলবো না- তা হতেই পারে। কিন্তু একজন ব্যক্তি এই আলাপটা তুললেন বলেই তাকে গালি দেবার প্রবণতা বলে দেয় আমরা স্বাধীনভাবে ভাবতে পারি না।

    জামায়াতের আমীর যখন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কথা বলেন তখন কিন্তু আমরা অনেককে নিশ্চুপ থাকতে দেখছি। নিষ্ঠুর এবং বর্বর এক গণহত্যা চোখের সামনে দেখার পর রক্তের দাগ মুছে যাবার আগেই যখন ক্ষমা ঘোষণার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয় তখন আওয়ামী প্রগতিশীলদের তা ভালো লাগে শুনতে, তারা নীরব থাকেন। আমাদের সমাজ শুধু দ্বিধাবিভক্ত না। বহুধাবিভক্ত। এখানে প্রগতিশীলতার মুখোশ পরে বসে আছেন বহু আওয়ামী-সংস্কৃতির প্রহরী। অনেকে তা বুঝে করছেন, অনেকে না বুঝেই।

    বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে। সাধারণত জাতীয় সংগীতের ভাষা, ইতিহাস, অথবা রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণগুলো থেকে সংগীত পরিবর্তনের দাবিগুলো উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত ‘Advance Australia Fair’ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে অনেকবার।

     

    বিশেষত, সংগীতের কিছু ভাষা এবং এর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি যথাযথ প্রতিনিধিত্বের অভাবের কারণে পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। ২০২১ সালে, ‘For we are young and free’ লাইনটি পরিবর্তন করে ‘For we are one and free’ করা হয়, যা মধ্যদিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি আরও সংবেদনশীলতার প্রতিফলন ঘটে। কানাডার জাতীয় সংগীত ‘ও কানাডা’ পরিবর্তনের কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। ২০১৮ সালে, সংগীতের একটি লাইন ‘in all thy sons command’ লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করার জন্য পরিবর্তন করে ‘in all of us command’ করা হয়, যা কানাডার সমানাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় সংগীত পরিবর্তন হয় ১৯৯৭ সালে। “Nkosi Sikelel’ iAfrika” Ges “Die Stem van Suid-Afrika” কে একত্রিত করে একটি নতুন দ্বিভাষিক জাতীয় সংগীত তৈরি করা হয়, যা জাতিগত বৈচিত্র্য এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন’ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বহুবার। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বৃটিশ শাসকদের প্রশংসা করে লেখা হয়েছিল। ১৯১১ সালে গানটি লেখার পরেই বিতর্ক শুরু হয়। এই সময়ে ভারত সফরে এসেছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জ। তিনি থাকাকালে বৃটিশ সরকারের প্রশংসা করে গানটি রচিত করা হয়েছে বলে বিতর্ক শুরু হয়। তবে ১৯৩৭-এ পুলিনবিহারী সেনকে লেখা এক চিঠিতে অবশ্য এই অভিযোগ খণ্ডন করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

     

    রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এটা চিন্তা করা খুবই বোকামি যে গানটি ইংরেজ সরকারকে চিন্তা করে রচিত করা হয়েছে। তারপরও বিতর্ক রয়ে গেছে।

    এমনকি ২০১৫ সালে ভারতের জাতীয় সংগীত থেকে ‘অধিনায়ক’ শব্দটি বাদ দিয়ে সেখানে ‘মঙ্গল’ শব্দটির প্রয়োগ করা উচিত বলে দাবি করেন রাজস্থানের তৎকালীন গভর্নর কল্যাণ সিং। কল্যাণ সিংয়ের প্রশ্ন ছিল, জন-গণ-মন-অধিনায়ক জয় হে, এই লাইনে অধিনায়ক কে? তিনি বলেন ‘অধিনায়ক’ শব্দে বৃটিশের প্রশংসা করা হয়েছে।

    তাই লাইনটি বদলে করা হোক, জন-গণ-মঙ্গল গাহে। কল্যাণ সিং মারা গেছেন, কিন্তু তার এই অমীমাংসিত দাবি আগামীতেও কেউ তুলবেন না তা ভাবা অবান্তর। জাতীয় সংগীত বির্তক একটি উদাহরণ মাত্র। মূলকথা হলো কথা বলার জন্য স্পেস তৈরি করতে না পারলে আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা আসবে না। তবে যখন কথা বলছেন তখন কোনো বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলছেন এর মধ্যদিয়ে আপনার মনস্তাত্ত্ব্বিক আকাঙ্ক্ষা এবং রাজনৈতিক চরিত্র প্রতিফলিত হয়।

    যে প্রগতিশীল নাগরিকরা আজ তর্কে হাজির হয়েছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জাতীয় সংগীত বিতর্কে কিন্তু কখনো বিগত পনেরো বছরে আওয়ামী সরকারের হত্যা, গুমের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি তাদের প্রতি অনুরোধ যে বিবেককে আপনি বর্গা দিয়েছিলেন তা ফিরিয়ে নিন।

    অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলুন। গণহত্যার বিচার চান। চোখের সামনে আমাদের সূর্যসন্তানদের নির্বিচারে শুধু গুলি নয়, লাশ এবং আধ-মরা বুলেটবিদ্ধদের পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলুন। শুধু জামায়াত কেন, কোনো দলই যেন গণহত্যাকারীকে মাফ করতে না পারে।
    আওয়ামী ব্যান্ডওয়াগন এফেক্ট থেকে বের হয়ে একটি মানবাধিকার সমুন্নত রাষ্ট্র গঠনে শরিক হোন- যাতে  আগামীতে আপনার আমার, আমাদের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

    সূত্রঃ মানবজমিন এর নির্বাচিত কলাম

    সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

    লেখকঃ কাজী জেসিন

    আরও খবর

    Sponsered content