ভাটি বাংলা ডেস্ক: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ , ৪:২৬:০৯ অনলাইন সংস্করণ
১২ আগস্ট যখন কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদকারীরা ৯ আগস্ট খুন হওয়া শিক্ষানবিশ ডাক্তারের বিচারের দাবিতে নেমে এসেছিল, তখন সেখান থেকে ৪শ’ ৮০ কিলোমিটার দূরে, ভারতের অন্যতম জনবহুল রাজ্য বিহারের মুজাফফরপুর জেলার পারু গ্রামের একটি ধানক্ষেতে ৫৫ বছর বয়সী নিরালি কুমারীর (ছদ্মনাম) ১৪ বছর বয়সী মেয়ের নগ্ন, ধর্ষিত, রক্তাক্ত এবং হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়।
কুমারীরা দলিত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। এটি ভারতের জটিল বর্ণের শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত এমন একটি শ্রেণি, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উচ্চ বর্ণদের দ্বারা নিপীড়িত হয়ে আসছে।
বিহার জুড়ে, দলিত পরিবারগুলি উচ্চ বর্ণের প্রভাবশালী ভূমি মালিকদের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ভূমি মালিকরা প্রায়ই উচ্চ সুদের হারে অর্থ ধার দেয়, যা পরিবারগুলিকে প্রায়শই ঋণের ফাঁদে ফেলে। সাম্প্রতিক ঘটনা গ্রামটির দলিত সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-এর বার্ষিক তথ্য দেখায়, ২০১২ সাল থেকে (যখন ১হাজার ৫শ’ ৭৬টি) থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত (৪হাজার ২শ’ ৪১টি) জাতীয়ভাবে দলিত মহিলাদের ধর্ষণের অভিযোগ ১শ’ ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন দলিত নারী ও মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়।
দলিত কর্মীরা পারুতে একটি ছোট বিক্ষোভ করার পর, ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় কুমারী পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। নিরালি কুমারী বলেছেন যে, তাদেরকে বাড়িটি তালাবিহীন অবস্থায় এবং সমস্ত জিনিসপত্র রেখে চলে যেতে হয়েছে।
আইনজীবী শামা সিনহা, যিনি আদালতে যৌন সহিংসতার শিকারদের প্রতিনিধিত্ব করেন, আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘প্রতিশোধের ভয়, অপরাধের কম মামলা করার একটি প্রধান কারণ, কারণ পরবর্তী দিনগুলিতে, এই পরিবারগুলিকে তখনও একই গ্রামে বসবাস করতে হয় এবং একই সামাজিক প্রথার মুখোমুখি হতে হয়।’
পারুর সমস্ত দলিত পরিবার গ্রামটি ছেড়ে পালিয়ে গেছে, এবং তাদের ১৮টি কুঁড়েঘর এখন জনশূন্য।
পারু থেকে পালিয়ে আসা দলিত বাসিন্দাদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি মুজাফফরপুর পুলিশ।
পরিবারের ১৫ সদস্যের সাথে বিধ্বস্ত নিরালি তাদের বাড়ি থেকে প্রায় ১শ’ কিলোমিটার দূরে সাদা দেয়াল ঘেরা একটি ছোট্ট ঘরে আত্মগোপন করে রয়েছেন। এক প্রতিবেশী নিরালিকে বলেছেন, ‘তুমি যদি প্রাণে বাঁচো, তাহলে কোনো একদিন তোমার জিনিসপত্র নিতে যেতে এসো।’