• লিড

    নিষ্ক্রিয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাই বহাল

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ১ অক্টোবর ২০২৪ , ৪:১৯:২৩ অনলাইন সংস্করণ

    ৫৬ দিন গেলেও খুনের সাথে জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশ সদর দফতরসহ বিভিন্ন ইউনিটে

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সদর দফতরের নিস্ক্রিয়তায় পুলিশ প্রশাসনে এখনও ঘাপটি মেরে আছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হত্যা-আহত করার সাথে জড়িতরা।

     

    আ’লীগ সরকারকে রক্ষায় এসব পুলিশ কর্মকর্তারা শুধু উচ্চ পর্যায়ে বসে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়ে বসেছিলেন না, মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ বাস্তবায়নে নিজেরাও ন্ব-শরীরে গিয়ে গুলি করেছেন আন্দোলনকারীদের উপর।

    পুলিশ সদর দফতর, এসবি, ডিএমপি, র‌্যাব সদর দফতর, নৌ-পুলিশ, সিআইডি এবং এপিবিএনয়ের মতো পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে একের পর এক নির্দেশনা দিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা।

     

    ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আ’লীগ সরকার পতনের ৫৬ দিন গেলেও খুনের সাথে জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশ সদর দফতরসহ বিভিন্ন ইউনিটে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও বহাল তবিয়তে থেকে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন তারা।

    সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতরসহ অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার বেশ কয়েকটি ইউনিট প্রধানের পদ শূন্য রয়েছে।

     

    কিন্তু রহস্যজনক কারনে যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদোন্নতি দিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ওইসব পদে পদায়ন করা হচ্ছে না। ফলে পুলিশ পুন:গঠন ও সারাদেশের পুলিশ ইউনিটগুলোকে সক্রিয় করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে দেশে নতুন সরকার গঠন হলেও খুনের সাথে জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়েই বৈঠক করছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ সদর দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

     

    আ’লীগের ক্যাডারদের রেখে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার করা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের শুরু থেকে জনতার দাবি উঠেছে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে খুনের সাথে প্রকৃত জড়িতদের তদন্তের মাধ্যমে বের করে শাস্তি দেয়ার। কিন্তু তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। শুধু তাই নয় শাপলা চত্বরে রাতে আধারে শত শত নিরীহ মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের খুনের সাথে জড়িতরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

     

    বহুল আলোচিত দু’টি হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত খুনীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হলে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মা শান্তিপাবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

    সূত্র জানায়, সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ সদর দফতরে এখন আ’লীগের সময়ের পরামর্শ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা বহাল রয়েছেন। ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়েই তারা বসেছিলেন না, মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ বাস্তবায়নে নিজেরাও ন্ব-শরীরে গিয়ে গুলি করেছেন আন্দোলনকারীদের উপর।

     

    ওই সদস্যদের মধ্যে ২জন অতিরিক্ত আইজিপি, ৩ জন ডিআইজি, ৪ জন অতিরিক্ত ডিআইজি এবং ৭ জন এআইজি (এসপি) রয়েছেন। এদের অনেকেই গত ১৫ বছর ধরনে বিভিন্ন সময় পুলিশ সদর দফতরে চাকরি করেছেন। এ সব কর্মকর্তারা বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে হাসান মাহমুদ খন্দকার আইজিপি থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ করা পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে যে পরামর্শ কমিটি গঠন করেছিলেন ওই কমিটির সদস্যও ছিলেন অনেকেই।

    ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট আ’লীগ সরকার হাসান মাহমুদ খন্দকারকে আইজিপি পদে নিয়োগ দেন। তিনি ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যান। পরে তিনি স্পেনের রাষ্ট্রদূতও হন। ওই পরামর্শ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি (পলাতক) প্রলয় কুমার জোয়ারদার, অতিরিক্ত আইজিপি আবু হাসান মুহম্মদ তারিক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি হাসানুল হায়দারসহ অনেকেই।

    এসব কর্মকর্তার নির্দেশেরই সারাদেশে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের খুন ও গুমের ঘটনা ঘটে।

    এমনকি সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তালিকাও তৈরি হতো পুলিশ সদর দফতরের ওই পরামর্শ কমিটির নির্দেশে। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের আগের দিন পর্যন্ত সক্রিয় ছিল ওই কমিটির সদস্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

    কিন্তু সরকার পরিবর্তনের ৫৬ দিন গেলেও এসব কর্মকর্তারাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপির সাথে একই টেবিলে বসে বৈঠক করছেন। পুলিশের একমাত্র গোয়েন্দা সংস্থা এসবিও আ’লীগ ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

    নৌ-পুলিশ ও সিআইডিতেও শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন আওয়ামীপন্থী ক্যাডার কর্মকর্তারা।

    ওই গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন দিল্লিস্থ বাংলাদেশের দূতাবাসে কর্মরত থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সাথে কাজ করেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা কে পরে ২০২৩ সালে দেশে ফিরিয়ে এনে অতিরিক্ত আইজিপি করা হয়। ওই কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় এপিবিএনয়ের মতো পুলিশের ইউনিটে থেকে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

    এছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি করা হয়।

     

    র‌্যাবের ওই সময়ের প্রধানসহ আন্দোলনকারীদের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে অতিরিক্ত আইজিপি ৬ জন, ডিআাইজি ১২জন এবং এসপি ৩০ জন এবং অতিরিক্ত এসপি ৭০ জন রয়েছেন যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যা-আহত করার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এসব অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তারা এখনও সুবিধাজনক পদে বহাল রয়েছেন।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে পুলিশে নিয়োগ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। এই সময়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩৩ শতাংশ। কিন্তু পুলিশকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যকর কোনো উদ্যোগ ছিল না; বরং পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অতিরিক্ত পুলিশ নির্ভরতায় বাহিনীটির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দেড় মাসেও পুলিশ কার্যকর ভূমিকায় যেতে পারছে না।

    পুলিশের বর্তমান ও সাবেক সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশকে সেবা মুখী করতে এবং মামলা ও এর তদন্ত, গ্রেপ্তার এবং অভিযানসহ সব ক্ষেত্রে জবাবদিহির আওতায় আনতে শক্ত কাঠামো তৈরি করতে হবে।

    এ জন্য পুলিশ-সংক্রান্ত কিছু আইন ও বিধান যুগোপযোগী করতে হবে। পরপর তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে পুলিশ বাহিনীর বড় অংশ দলীয় কর্মীর ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়।

    আরও খবর

    Sponsered content