• আন্তর্জাতিক

    ইসরাইলি সেনাপ্রধান নিহতের খবরে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ , ১:৪৩:৫৮ অনলাইন সংস্করণ

    ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে একের পর এক বিস্ময় সৃষ্টি করছে লেবাননের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ।

     


    এবার তারা ইসরাইলের আরও গভীরে হামলা করে তেল আবিবকে চমকে দিয়েছে।


     

    রোববার ইসরাইলের মধ্য-উত্তরাঞ্চলীয় হাইফার দক্ষিণে বেনইয়ামিনা এলাকায় সামরিক বাহিনীর গোলানি ব্রিগেড ক্যাম্পে এক ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। অভাবনীয় এ হামলায় ৭১ ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে চার জন নিহত ও ৬৭ জন আহত হয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে।

     

    আহতদের মধ্যে কমপক্ষে সাত জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকেও হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে, তারা আহতের কথা জানিয়েছে, ৬০ জনের বেশি। আর চার জন সেনা নিহতের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে।

    হিজবুল্লাহর ভয়াবহ ড্রোন হামলার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, ইসরাইলের সেনাবাহিনীর গোলানি ব্রিগেড ক্যাম্পে ওই হামলায় দেশটির সেনাপ্রধান হার্জি হাভেলি নিহত হয়েছেন।

     

    তবে ইসরাইলি সংবাদ ও গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে, খবরটি শুধুই গুজব। ইসরাইলি সেনাপ্রধান সুস্থ আছেন। নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। স্থানীয় সময় রোববার দিনের শেষভাগে এ ড্রোন হামলা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে এটিই সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা।

    কিন্তু কীভাবে ইসরাইলের এত গভীরে এই ড্রোন হামলা চালালো হিজবুল্লাহ? ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা খুবই ‘নির্ভরযোগ্য’ হলেও সেটি ফাঁকি দিয়ে দেশটির গভীরে ঢুকে প্রাণঘাতী হামলা চালাতে সক্ষম হয় হিজবুল্লাহর ড্রোন। আইডিএফ বলছে, হিজবুল্লাহর পাঠানো একটি ড্রোন বেনইয়ামিনা শহর-সংলগ্ন ইসরাইলি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায়।

     

    শহরটির অবস্থান তেলআবিবের উত্তরে। লেবানন সীমান্ত থেকে যা প্রায় ৪০ মাইল দূরে। হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বেনইয়ামিনায় ইসরাইলি বাহিনীর একটি পদাতিক প্রশিক্ষণ শিবির নিশানা করে হামলা চালাতে এক ঝাঁক ড্রোন পাঠিয়েছে। এর পরই ইসরাইলে ড্রোন হামলার খবর প্রকাশ্যে আসে।

    সেই সঙ্গে ইসরাইলি সেনাপ্রধান হাভেলি নিহত হবার খবরও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পরস্পর বিরোধী খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইসরাইলের প্রভাবশালী সংবাদপত্র জেরুজালেম পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ ড্রোন হামলার পরেই আইডিএফ চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভির মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

    পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে আরো জানিয়েছে, মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এর অনেক ভ্যারিফায়েড হ্যান্ডেল থেকেও হাভেলির নিহত হবার খবরটি ছড়ানো হয়েছে। এদের মধ্যে ইসরাইল থেকে শুরু যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক জন শীর্ষ ভাষ্যকারও রয়েছেন। তবে তাদের এসব পোস্ট গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট। খবরটি নিয়ে আইডিএফ কিংবা হিজবুল্লাহ তরফে কোন ধরনের বক্তব্যও দেয়া হয়নি।

     

    হাইফাতে ড্রোন হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ইসরাইলি সেনাপ্রধান হার্জি হাভেলি ওই হামলায় নিহত হয়েছেন। দাবি করা হয়, যে সময় ড্রোন হামলা হয়েছিল সেই সময়ে গোলানি ব্রিগেড ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তবে টাইমস অব ইসরাইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হামলার পর সেই সেনাঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন হাভেলি এবং হামলা মোকাবেলার জন্য সেনাদের প্রশংসা করেন।

    এদিকে আইডিএফের শীর্ষ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এ ঘটনা তদন্ত করবে। কীভাবে ঘাঁটিতে ড্রোন প্রবেশ করল, কিন্তু সতর্ক সংকেত বাজল না, তা খতিয়ে দেখা হবে।

    ঘাঁটিটি থেকে দেয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে হাগারি বলেন, তারা এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবেন। তারা ঘটনাটি তদন্ত করবেন। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আরো উন্নতি দরকার।

     

    সিএনএন বলেছে, হামলার সময় বেনইয়ামিনা এলাকায় কোনো সতর্কবার্তার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ড্রোন কীভাবে ইসরাইলি ভূখণ্ডের এতোটা গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

     

    হিজবুল্লাহ বলছে, তারা ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যতিব্যস্ত রাখার জন্য উত্তর ইসরাইলি শহর নাহরিয়া ও আকর নিশানা করে বেশ কয়েক ডজন রকেট ছোড়ে। একই সঙ্গে তারা এক ঝাঁক ড্রোন পাঠায়।

    সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, এসব ড্রোন ইসরাইলি প্রতিরক্ষা রাডারগুলোকে ফাঁকি দিতে পেরেছে। এরপর সেগুলো বেনইয়ামিনার অভিজাত গোলানি ব্রিগেডের প্রশিক্ষণ শিবিরের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায়। হামলার দায় স্বীকার করে সোমবার হিজবুল্লাহ তাদের সদ্য নিহত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করে। গত মাসের শেষ দিকে ইসরাইলি হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হন।

    ইসরাইলের ঘাঁটিতে হামলার পর হিজবুল্লাহ হুঁশিয়ার দিয়েছে, লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইল যদি হামলা চালিয়ে যেতে থাকে, তবে তাদের জন্য জবাব হিসেবে যা অপেক্ষা করছে, সে তুলনায় এই হামলা কিছুই নয়।

    হিজবুল্লাহ তাদের ড্রোন হামলাকে ‘মিশ্র অভিযান’ আখ্যা দিয়েছে। উল্লেখ্য, এক বছরের বেশি সময় ধরে ইসরাইলে নিয়মিত রকেট ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। সূত্র : জেরুজালেম পোস্ট।

    আরও খবর

    Sponsered content