ভাটি বাংলা ডেস্ক: ৮ অক্টোবর ২০২৪ , ৩:২০:৪০ অনলাইন সংস্করণ
টানা এক বছর ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।
আর এসব হামলার পেছনে বেশিরভাগ অস্ত্র জোগান দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলকে রেকর্ড পরিমাণ সামরিক সহায়তা দিয়েছে দেশটি।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্টস অব ওয়ার প্রকল্পের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে ১ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার পরিমাণ সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিং মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফের শক্তিশালী করার জন্য ৪০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পাশাপাশি বন্দুক এবং জেট ফুয়েলের জন্য বিপুল পরিমাণের নগদ অর্থ সহায়তা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত এক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক অভিযান চালানোর জন্য অতিরিক্ত ৪৮৬ কোটি ডলার দেওয়া হয়েছে।গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইয়মেনের সশস্ত্র হুথি গোষ্ঠীর চালানো আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের খরচ চালাতে এ তহবিল সরবরাহ করা হয়।
এই হিসাবটি বের করেছেন হার্ভার্ডের জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের অধ্যাপক লিন্ডা জে বিলমস। তিনি ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে মার্কিন যুদ্ধের ব্যয়ের ওপর নজর রেখেছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন গবেষক উইলিয়াম ডি হার্টুং এবং স্টিফেন সেমলার।
এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর এক ঘোষণায় ইসরাইলকে আরও ৮৭০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ প্যাকেজটি ইসরাইলকে তার সামরিক কার্যক্রমের সহায়তা হিসাবে দেওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটি।
এদিকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে গাজায় অবিরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। এই এক বছরে গাজায় হামাসের ৪০ হাজারের বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালিয়েছে তারা।
সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এ সময়ে হামাসের ৪ হাজার ৭০০টি টানেলের মুখ খুঁজে পেয়েছে ইসরাইলি সেনারা। ধ্বংস করেছে এক হাজার রকেট লঞ্চার সাইট।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় হামাসের ৮ জন ব্রিগেড কমান্ডার, ৩০ জন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং ১৬৫ জন কোম্পানি কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে।
এতো সংখ্যক হতাহতের মাঝেও হামাস নেতা খালেদ মেশাল বলেছেন, গাজায় ইসরাইল যা ঘটাচ্ছে, তা শুধু হলোকাস্টের সঙ্গেই তুলনীয়। সোমবার সকালে দেওয়া এক ভাষণে তিনি আরও বলেছেন, ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই বিজয় আসবে।
হামাসের এই নেতা আরও বলেছেন, সব ধরনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলেই ৭ অক্টোবরের ঘটনা ঘটতে পেরেছে। সেই দিনের পর হামাস তার কৌশলগত ফল অর্জন করেছে।
এ সময় তিনি হিজবুল্লাহ, হুথিসহ যেসব গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি জনগণ ও হামাসকে সমর্থন দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান। আরব দেশগুলো গাজায় অর্থায়ন করায় তাদেরও ধন্যবাদ জানান মেশাল।
তিনি দাবি করেন, গাজায় ইসরাইল তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েই লেবাননে নতুন যুদ্ধ ফ্রন্ট খুলেছে। এ সময় তিনি আরও দাবি করেন, ইসরাইল জর্ডান ও মিসরের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করছে।
উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা চালানোর পর থেকেই দেশটি গাজা ও লেবাননে হামলা চালানো শুরু করে।
মেশাল বলেছেন, যদিও ইসরাইল ইরান ও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু তারপরও সামগ্রিকভাবে তারা পরাজিত হয়েছে। এ সময় তিনি ফিলিস্তিনিদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘আপনারা হতাশ হবেন না, আমরা শিগগির বিজয়ী হব।’
গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাস নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইল। সেই অভিযান এখনো চলছে। আর এই যুদ্ধ চলাকালে এমন কোনো দিন নেই যে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হাতে ফিলিস্তিনি নিহত হয়নি।
এ নিয়ে ৪১ হাজার ৯০৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ। এর জবাবে বেশ কয়েকবার পালটা হামলার শিকারও হয়েছে ইসরাইল।তাদেরও এ পর্যন্ত মোট ৭২৯ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে গাজায় স্থল অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন ৩৪৭ জন।