ভাটি বাংলা ডেস্ক: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ , ১০:৩৮:৫৫ অনলাইন সংস্করণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনো ভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মাফিয়া সরকারের পতন ঘটানোর পরে এবার আমরা সবাই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর যাত্রার পথে রয়েছি। যাত্রা পথে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেও আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। সেটি হলো একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।
সেহেতু নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশ আছে বলে বিএনপি মনে করে না। মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে বিএনপি’র উদ্যোগে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মাফিয়া সরকারের পলায়নের পর তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহল ছাড়াও বর্তমান সরকারের মধ্যেই নানা রকম ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ চলছে।
এই সরকার কেন বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছে কিংবা বর্তমান সরকার কী বিপ্লবী সরকার? কেউ কেউ এ ধরনের প্রশ্নও তুলছেন।
সরকার গঠনের বর্তমান পর্যায়ে এসে, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বর্তমানে যে ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে- এ ধরনের বিতর্ক সরকারের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সরকারকে লক্ষ্যচ্যুত করার কারণ ঘটনাতে পারে।
এ কারণে বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো, সরাসরি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কিংবা সরাসরি সংবিধানের বিধি-বিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া পরিহার করে, একটি সুনিশ্চিত এবং সুবিবেচিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে ভবিষ্যতে উত্থাপিত যেকোনো ধরনের জটিল প্রশ্ন কিংবা পরিস্থিতি মোকাবিলাও সহজ হবে।
জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি’র চলমান এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পরাজিত অপশক্তি এবং শাসন-প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে সক্রিয় হয়ে উঠছে। এজন্য এ কারণেই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন দলীয় কর্মসূচি থাকলেও একটি বিষয় বিএনপিসহ আমরা সবাই একমত। মাফিয়া সরকারের সুবিধাবাদীদের রাষ্ট্রীয় ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে সরকারের পক্ষে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ নয়।
এ কারণে যারা সরকারের রয়েছেন এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি আমরা যারা এই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি, আমাদের প্রত্যেকটি কাজ যথাযথ অগ্রাধিকারভিত্তিক হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাতে পরাজিত অপশক্তি কোনো সুযোগ নিতে না পারে।
তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল ভেদ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ।
তবে খেয়াল রাখা জরুরি, এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্প্রদায় করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ ও দুর্দশা লাঘব করা না গেলে- জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল সমস্যার কার্যক্রম জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়বে। সুতরাং সরকারের কার্যক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিক এজেন্ডা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু একটি শব্দ মাত্র মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র কিংবা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়।
বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্র ও সমাজের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা হয়। রাষ্ট্রে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকলে হোক সংখ্যালঘু, হোক সংখ্যাগুরু, কেউ কিন্তু নিরাপদ নয়।
সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু সবার নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণতন্ত্রের পক্ষে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল এবং সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই বিএনপি’র অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
এই লক্ষ্য অর্জনে দেশে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিও বিএনপি’র নিঃশর্ত সমর্থন রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মাফিয়া প্রধান দেশ থেকে পালানোর পর দেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানসহ সবাই এখন আয়নাঘরের ভীতিমুক্ত।
তবে বিভিন্ন ধর্মীয় স্বার্থগোষ্ঠীকে পুঁজি করে কিংবা তাদেরকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদের এবং আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
দীর্ঘ ১৫ বছর আপনারা মাফিয়া মুক্ত পরিবেশে আজকের এই অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বছর বাংলাদেশের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি এভাবেই মিলেমিশে যার যার ধর্মীয় উৎসব, ধর্মীয় আচরণ যথা নিয়মে আতঙ্কমুক্ত পরিবেশে পালন ও উদ্যাপন করবেন। প্রতিটি ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে উদ্যাপন করবেন, এটিই ছিল একটি স্বাভাবিক রীতি।
কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে মাফিয়া শাসন আমলে দেখেছি, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসবকে ঘিরে ইচ্ছা করেই সারা দেশে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হতো। গত ১৫ বছরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের একটাও বিচার করা হয়নি।
সভাপতির বক্তব্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর নতুন সম্ভাবনা শুরু হয়েছে। সেই সময় আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার সেই জাতি গঠন করতে পারি নাই। আজকে দীর্ঘ সংগ্রামের পরে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ এসেছে। সেইদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এমন কিছু মানুষ আছে যারা বাংলাদেশ নিয়ে চক্রান্ত করছেন। সেই চক্রান্ত আজকে আবার শুরু হয়েছে। সেই চক্রান্ত ছাত্র-জনতা রুখে দিবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা ছিল- এদেশে যারা বসবাস করে তাদের পরিচয় হবে বাংলাদেশি। আমাদের বর্তমান নেতা তারেক রহমান বলেছেন রেইবো নেশন চাই। তার পরে বলেছেন, ধর্ম যার যার দেশটা সবাই। এটা আমরা উপলব্ধি করি। আর আপনাদের (হিন্দু) ধর্মেরও শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলা হয়েছে। আমাদের ধর্মেও তাই। তাই সবাই মিলে মৌলিক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, হিন্দুদের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, সম্প্রতি দেখতে হচ্ছে- মন্দির পাহারা দিতে হবে। কেন? কে মন্দির ভাঙছে। কোনো মুসলমান মন্দির ভাঙতে পারে না। যার মনে ইমান নেই। সেই মন্দির ভাঙতে পারে। সুতরাং আপনারা নিজেদের প্রস্তুত রাখুন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকের দিনটি প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে। এই বছরের উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য হচ্ছে, ৫ই আগস্ট অসূর পালিয়ে গিয়েছে। সত্যের বিজয় হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি কয়েকটি কথা বলে- এরমধ্যে সংখ্যালঘু বলে কিছু আছে সেটা আমরা বিশ্বাস করি না, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, একটা রংধনু রাষ্ট্র গড়তে চাই। এটা জাতীয়তাবাদীর চিন্তার দর্শন। এই কথার উৎস হচ্ছে জাতীয়তাবাদ।
এগুলো মৌলিক ভাবনার প্রতিফলন। কিন্তু অনেকে ধর্মকে মূলধন করে নেতা হয়ে যাচ্ছে, তাদের দল লাভবান হচ্ছে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, নিতাই রায় চৌধুরী, ড. সুকোমল বড়ুয়া, আফরোজা খান রিতা, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, বিএনপি নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, অপর্ণা রায় দাস, সুশীল বড়ুয়া, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, উপদেষ্টা তপন মজুমদার, মহাসচিব তরুণ দে, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মিল্টন বৈদ্য, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী চিত্ত রঞ্জন মজুমদার, জয় দেব জয়, অশোক তালুকদার, শ্যামল ঘোষ, সত্যজিৎ কুণ্ডু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা পিন্টু গুহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীর নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।