• রাজনীতি

    হত্যাযজ্ঞ তদন্তে জাতিসঙ্ঘের তদন্ত কমিটি গঠন জরুরি : জামায়াত আমির

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১০:২৪:১০ অনলাইন সংস্করণ

    কুষ্টিয়ায় বক্তব্য রাখছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। - ছবি : নয়া দিগন্ত


    বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যাযজ্ঞ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে জাতিসঙ্ঘের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

     

    ছাত্রদের এই আন্দোলন এক দিনের নয়, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিষ্ট সরকারের জুলুম ও নির্যাতনে ফসল। এই আন্দোলনে পুরো নেতৃত্ব ছিলেন আমাদের সন্তানেরা। এই বিজয় কোনো বিশেষ দল বা গোষ্টির নয়, ছাত্র এবং আপামর জনগনের বিজয়। আর এই বিজয়কে ধরে রাখতে আমাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তারা মর্যাদাপূর্ণ শহীদ হিসেবে সৃষ্টিকর্তার কাছে পুরস্কৃত হবেন।

     

    রোববার সকালে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আয়োজনে কুমারখালী উপজেলার আলাউদ্দিন নগর মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

     

    কুষ্টিয়া জেলা আমির অধ্যাপক আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে জেলা সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ার্দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের নির্বাহী সদস্য ও পরিচালক মোবারক হোসাইন, জামায়াতের মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসাইন, শূরা সদস্য শাজাহান আলী মোল্লা, ছাত্রশিবির কুষ্টিয়ার সভাপতি ইমরান হোসেন, শহর ছাত্রশিবির সভাপতি হাফেজ সেলিম রেজা, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া জেলা সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ, সমন্বয়ক পারভেজ মোশাররফ, সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রনহমান, শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউসুফ আলী, রিপন আলী প্রমুখ।

     

    জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে। আন্দোলনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কাজ করেছে দুর্বৃত্তরা। তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্বৃত্তরা যেন আড়াল হয়ে না যায়।

    তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দেশের মেধাবী ৫৭ সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের ওপর পাশবিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একদিনের নয়, খুনিরা আওয়ামী লীগ নেতা তুরাবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একাধিকাবার বৈঠক করে এই পরিকল্পনা করেছিল আর হত্যাযজ্ঞের দিন মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে খুনিদের নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। ওই রাতের বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করলে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।

    তিনি বলেন, দেশ প্রেমিক জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংসের নীল নকঁশা আঁকা হয়েছিল তারই ধারবাহিকতায় গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের আর্থিক, মানষিক ও শারিরিকভাবে পঙ্গু করা হয়েছিল। মামলায় জর্জরিত করা হয়েছিল। তাতেও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ভেঙ্গে পড়েননি বরং মনোবল ও সাহসিকতার সাথে তাদের এই পাষবিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আজ সকল মানুষের মন জয় করে নিয়েছে।

    তিনি বলেন, একটি মহল মনে করেছে দেশ তাদের হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে হাট-বাজার, ঘাট সব কিছুই দখলের রাজত্ব কায়েম করেছে আর সেটা কারা করেছে তা জনগণের কাছে স্পষ্ট।

    তিনি বলেন, দেশের এই অরজাকতায় জামায়াতের একজন নেতা-কর্মীও জড়িত নয়। জামায়াত এখন শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে রয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় কাজ করছে। আমি মনে করি সভ্য জাতি হিসেবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া অপরাধ আর এই অপরাধের সাথে জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ত নেই।

     



    ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশ স্বাধীন হয় নাই, দেশ জুলুম মুক্ত হয়েছে। এই অর্জনকে ধরে রাখতে আমাদের পাহারা দিতে হবে। অর্জনের চেয়ে অর্জনকে দৃঢতার সাথে ধরে রাখাটায় বড় সাফল্য।



    তিনি আরো বলেন, ইনসাফের প্রতীক দ্বীন। তিনি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। জাতিকে আর বিভক্ত নয় ঐক্যবদ্ধতার দ্বারে নিতে আমাদের সকল প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।

    তিনি বলেন, ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে সাংবাদিকদের বেইজ্জতি করা হয়েছে। একাধিক সাংবাদিক খুন হয়েছে। খুনের কোনো বিচার হয়নি। সাংবাদিকরা মন খুলে মত প্রকাশ করতে পারেনি। তাদের কন্ঠস্বরকে গলা টিপে ধরা হয়েছে। মানুষের বাক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

    এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া যশোর অঞ্চলের টিম সদস্য ড. আলমগীর বিশ্বাস, খন্দকার এ কে এম আলী মহসিন, আব্দুল মতিন, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা জেলা আমিরগণ, মুফতি আমীর হামজাসহ কুষ্টিয়া জেলা ও সকল উপজেলা জামায়াতের বিভিন্ন ইউনিট, ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।



    অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় শেষে কুষ্টিয়ার ১৩ শহীদ পরিবারের হাতে নগদ ২ লাখ করে মোট ২৬ লাখ টাকা তুলে দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

    এ সময় তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে কুশলাদি বিনিময়কালে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।



    তিনি সকলকে সান্ত্বনা দেন এবং শহীদ পরিবারের জন্য জামায়াতের পক্ষ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ব্যস্ত জামায়াতের আমির স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তাদের লিখনীর মাধ্যমে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

    আরও খবর

    Sponsered content