• লিড

    হতাহতদের পরিবারে ক্ষোভ-হতাশা ধরাছোঁয়ার বাইরে খুুনিরা

    চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:৫২:৩৭ অনলাইন সংস্করণ

    চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণকারী ছাত্রলীগ, যুবলীগের অস্ত্রধারীদের এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

    উদ্ধার হয়নি ছাত্র হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ। প্রতিটি খুনের ঘটনায় সুস্পষ্ট মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে এসব মামলার আসামি চিহ্নিত খুনিরা।

    সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়ায় ছাত্র আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মাঝে যুগপৎ ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অর্ন্তবর্তি সরকারের তরফে খুনিদের কঠোর শাস্তির আশ^াস দেওয়া হলেও অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশের নির্লিপ্ত ভূমিকায় হতবাক সচেতন মহল।

     



    বিগত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধসহস্রাধিক।



     

    তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন চার শতাধিক ছাত্র-জনতা। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকে। আহতদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। ছাত্র-জনতার রক্তভেজা বিপ্লবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। সরকার পতনের প্রায় এক মাস পার হলেও পতিত স্বৈরাচারের দোসর খুনিচক্রের সদস্যরা আড়ালেই থেকে গেছে।

    রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো চট্টগ্রামেও আন্দোলনরতদের উপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে মিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারেরা নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছে।

     

    ১৬ জুলাই নগরীর ষোলশহর থেকে মুরাদপুর এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম, পথচারী ফারুক আহমেদ ও এমইএস কলেজের ছাত্র শান্তসহ তিনজনের মৃত্যু হয়, আহত হয় শতাধিক। ওই ঘটনায় পুলিশের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারেরা।

     

    পতিত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী যুবলীগের হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে গুলি করা হয় শিক্ষার্থীদের উপর। হেলাল আকবর বাবরের গাড়িতে করে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হয় মুরাদপুরে।

     



    গাড়ি থেকে ভারী অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডারেরা নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষণ করে। ভারী অস্ত্র হাতে গুলি বর্ষণ করা অবস্থায় অন্তত ১০ জন ক্যাডারের ছবি ধারণা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ায় এসব ছবি প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। হামলাকারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ক্যাডারদের নাম ঠিকানাও প্রকাশ করে বিভিন্ন মিডিয়া।



     

    এরপর বহদ্দারহাটেও শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলায় অংশ নেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডারেরা। ১৮ জুলাইয়ের ওই হামলায়ও চবি শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তড়ুয়াসহ তিন জনের মৃত্যু হয়।

    সর্বশেষ শেখ হাসিনার পতনের একদিন আগে নগরীর নিউমার্কেটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে মহানগর ও বিভিন্ন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও যুবলীগের ক্যাডারেরা ভারী অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গুলি বর্ষণ করে। ওইদিন নিউমার্কেট, সিটি কলেজসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ক্যাডার অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে মাঠে নামে। মহানগরীর ক্যাডারদের সাথে যোগ দিতে ট্রাক, পিকআপ এমনকি পুলিশের গাড়িতেও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়াটে অস্ত্রধারীদের নগরীতে এনে জড়ো করা হয়।

     



    পুলিশের ছত্রছায়ায় এসব অস্ত্রধারীরা ছাত্র আন্দোলন দমাতে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও অস্ত্রের মহড়া দেয়। অস্ত্রধারীরা সবাই চিহ্নিত এবং তারা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও ক্যাডার। বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরও অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়।



     

    স্বৈরাচারের পতনের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সুস্পষ্টভাবে আসামিদের নাম ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত এসব সন্ত্রাসীদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা চট্টগ্রাম আসেন। তারা হতাহতদের পরিবারের সদস্য ও ছাত্র নেতাদের সাথে আলোচনায় খুনিদের কঠোর শাস্তি দেয়ার আশ^াস দিয়ে দেন। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও ছাত্র হত্যাকারীদের কঠোর সাজা দেয়ার আহ্বান জানান।

     

    তবে এখনও পর্যন্ত এসব অস্ত্রধারী খুনিদের কাউকেই গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

    শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতার রোষের শিকার হয় নগরী ও জেলার কয়েকটি থানা।

    জনগণের প্রতিরোধের ভয়ে থানা ছেড়ে পালায় পুলিশ।

    এরপর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে। শুরু হয় থানাগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম। সারা দেশে পুলিশে ব্যাপক রদবদল হলেও চট্টগ্রাম নগর পুলিশে তেমন কোনো রদবদল হয়নি।

    এরপরও ছাত্র হত্যাকারী অপরাধীদের গ্রেফতারে কোন অভিযান পরিচালনা করেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা।

    আরও খবর

    Sponsered content