• সম্পাদকীয়

    স্যালুট রাষ্ট্রের প্রকৃত অভিভাবককে

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১১:১৪:১১ অনলাইন সংস্করণ

    যেকোনো রাষ্ট্রের ইমেজ এবং বহির্বিশ্বে সেই রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের যিনি অভিভাবক তার ইমেজ, ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর।

    বিগত প্রায় দেড় যুগ ধরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল সবচাইতে ভয়াবহ এক ইমেজ সঙ্কটে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ এবং সেই অংশগ্রহণে সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকার মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক এক সফল বিপ্লবের।

    এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভয়াবহ পতন ও শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই দীর্ঘ ইমেজ সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ।

     



    জাতি হিসেবে নিঃসন্দেহে আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রের শাসনভার গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছেন। ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান হিসেবে পেয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা এখন এক অনন্য উচ্চতায়। তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত দেখলো বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ।



     

    ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতিম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে দেশপ্রেমের টানে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি ভয়-ভীতি ও আরব আমিরাতে সরকারি আইনকানুন উপেক্ষা করে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছিলেন। যেহেতু রাজতন্ত্রের প্রথা অনুযায়ী আরব আমিরাতে যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই সেই বিক্ষোভ থেকে ৫৭ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় আমিরাত সরকার। বিষয়টি ছিল বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত বেদনার ও অগ্রহণযোগ্য।

    এমন একটি পরিস্থিতিতে ঐ প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থরক্ষায় সরাসরি এগিয়ে এলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অবতীর্ণ হলেন রাষ্ট্রের এক অভিভাবকের ভূমিকায়। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার ড. ইউনূস নিজেই সরাসরি টেলিফোন করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে। প্রেসিডেন্ট নাহিয়ান ড. ইউনূসের ফোন পেয়ে অত্যন্ত অভিভূত হন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার অনুরোধের প্রতি সম্মান জানিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংহতি জানানো ঐ ৫৭ জন বাংলাদেশিকে কারামুক্তির নির্দেশ দেন। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অভাবনীয় কূটনৈতিক সাফল্য, যা মনে করিয়ে দেয় ড. ইউনূসকে সরকারপ্রধান হিসেবে পেয়ে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ পেয়েছে রাষ্ট্রের একজন প্রকৃত অবিভাবক যে স্থানটিতেই দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছিল এক বিশাল শূন্যতা। নিঃসন্দেহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এত দ্রুততার সাথে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবচাইতে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্যক্তি হিসেবে ড. ইউনূসের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, সারা বিশে^র কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও বিশাল ব্যক্তিত্বের বিষয়টি।

    সরকার আসে সরকার যায়, অনেক সরকারপ্রধানও আসে যায়, কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য একজন প্রকৃত অভিভাবক পাওয়া প্রায়শই হয়ে ওঠে খুবই দুরূহ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জনগণের নিঃসন্দেহে সবচাইতে বড় প্রাপ্তি সরকারপ্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের মতো একজন অভিভাবক পাওয়া। তাকে পেয়ে যেমন আনন্দিত বাংলাদেশের সকল বন্ধুরাষ্ট্র ঠিক তেমনি তার ব্যাপক গ্রহণয্যোতা ও সম্মানের ভারের বিষয়টি নিয়ে গর্বিত বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষও।

    বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের আন্তর্জাতিক কূটনীতি নতজানুভাবে শুধুমাত্র একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সীমাবদ্ধ থাকবে এটি কোনোভাবেই দেশের মানুষের কাম্য ও কাক্সিক্ষত ছিল না। অবশেষে সেই দুরবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যথাযথভাবে সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার সুযোগটি করে দিলেন রাষ্ট্রের এই নতুন অভিভাবক, ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
    স্যালুট, বাংলাদেশের এই প্রকৃত অভিভাবককে।

    সূত্রঃ ইনকিলাম এর ম। ন্ত। ব্য প্র। তি। বে। দ। ন

    আরও খবর

    Sponsered content