ভাটি বাংলা ডেস্ক: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:০৫:১৪ অনলাইন সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
এই হত্যাকান্ড কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মনে করেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক পৃথক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারা এই প্রতিক্রিয়া জানান।
অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে সন্ত্রাসী, হামলাকারী ও অপরাধী মুক্ত।
২২ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলা হচ্ছে। দেশজুড়ে অন্যান্য ক্যাম্পাসও দ্রুত খোলা হবে।
শিক্ষার্থীরা কোনো হামলাকারীর সাথে ক্লাস ও পরীক্ষায় বসতে পারে না। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নৃশংস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি।
প্রশাসনিকভাবে কোনো আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। তাই জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, গত ১৬ বছরে ক্যাম্পাসে অনেকেই ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার গুণ্ডা বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার অত্যাচারী শাসনামলে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের যাঁরা হাসিনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন, গণতন্ত্র, ন্যায় এবং সত্যের পক্ষে কথা বলেছেন তাঁরা অনেকেই নির্বিচারে মামলার শিকার হয়েছেন।
অতীতে যারা খুনি হাসিনার স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে লাঠিয়াল হিসেবে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন করেছেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত সেসব নির্যাতকদেরও বিচারের আওতায় আনা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে যারা নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছে, তাদেরও আইনগত প্রক্রিয়ায় বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তৃতীয়ত, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে যেসব শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া নির্যাতনকে সমর্থন করেছেন বা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, ক্লাসরুমে বসে যে শিক্ষক নৈতিকতার পাঠ দিয়েছেন, তিনিই আবার স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন এবং সব অন্যায়কে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছেন।
নতুন বাংলাদেশে আমরা এমন শিক্ষক চাই, যারা তাদের শিরদাঁড়া উঁচু করে কথা বলবেন এবং শিক্ষকের মহান মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। চতুর্থত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক দুটি ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
মবলিঞ্চিং কোন অবস্থাতেই কোন সমাধান হতে পারে না, তাতে সে যেই হোক না কেন। এটা একটা সুস্পষ্ট অপরাধ।
যে বা যারাই এর সাথে জড়িত, তাদেরকে আইডেন্টিফাই করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করে কেউ যেন পার পেয়ে যেতে না পারে। সব মিলিয়ে, আমরা কোনো হামলাকারী বা নির্যাতনকারীর পুনর্বাসন চাই না। ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস হবে জঞ্জালমুক্ত ও নিষ্কলুষ।
তিনি আরো লিখেন, সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনের কোনো পথ যেমন উন্মুক্ত নেই। তেমনি আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাকেও শাস্তি পেতে হবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ করছি।
পাশাপাশি স্বৈরাচারী হাসিনার ফাসিস্ট রেজিমকে পাকাপোক্ত করতে যেসব সুশীলরা কালচারালি কিংবা পলিটিকালি মদদ যুগিয়েছিল, নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আলাপে তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম লিখেছেন, মানসিক ভারসাম্যহীন হোক, চোর হোক অথবা দাগি আসামি, কাউকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার বা সাহস কোনো একজন ব্যক্তি কীভাবে পায়?
মব জাস্টিসের নামে নরপশুর ন্যায় নির্মমতা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির এক্সামপল সেট হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, কে কোথায় পড়ে, কী করে সেটা মুখ্য নয়। অন্যায় সবসময় অন্যায়। একটা জলজ্যান্ত মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে যাদের বুক একবারের জন্যও কাঁপে না তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকতে পারে না।
এই মানুষটার শরীরটা দেখে বুয়েটের আবরারের কথা বারবার মনে পড়েছে। সকল অন্যায়কারীর বিচার হোক। নির্দোষ কেউ শাস্তি না পাক। একবার যদি অন্যায়কারীরা কোনো সূত্র ধরে ছাড় পেয়ে যায়, তবে তা পরবর্তী অসংখ্য অন্যায়ের প্রশ্রয় হিসেবে দৃষ্টান্ত তৈরি করে। নতুন বাংলাদেশে সেই সুযোগ যেন কেউ না পায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের লিখেছেন, একজন মানুষকে চোর সন্দেহে আটক করেছে, সবকিছু নিবিরথিবির করে ভাত-টাত খাওয়ানোর পর দফায় দফায় পিটিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে।
সাংবাদিক মারফত শুনেছি, চারজন হাউস টিউটর শেষ সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তারপরে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড কেমনে সংঘটিত হয়? অপরাধী যে-ই হোক, শীঘ্রই সিসি টিভি ফুটেজে সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। একই সাথে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেনো হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহবান জানাচ্ছি।