• জাতীয়

    ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জুলাই ফাউন্ডেশন সেক্রেটারি মুগ্ধর জমজ ভাই

    ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা দিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১২:৩২:৫৭ অনলাইন সংস্করণ

    তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বরেছেন,৮০০ জন শহীদের একটা তালিকা আছে, যেটা যাচাই করা হচ্ছে। তালিকা তৈরির কাজ যেহেতু চলছে, সেহেতু ১৪ সেপ্টেম্বর স্মরণসভা হচ্ছে না। জেলা প্রশাসকদেরও তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী রোববারের মধ্যে একটি চূড়ান্ত তালিকা হয়তো পাওয়া যাবে। বাসসের পরিচালনা বোর্ড, পিআইবি পরিচালনা বোর্ড, প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ড, মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার বিভিন্ন কমিটিগুলো বাতিল করা হয়েছে। আগামী ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

    গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে সংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তবর্তী সরকার গত এক মাসে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থায় যে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করেছে তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেছেন উপদেষ্টা।

     


    মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, শহীদদের স্মরণসভার বাজেট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কিছু কথা উঠেছে, এটা আসলে একটা বিভ্রান্তি হয়েছে।


     

    এই অনুষ্ঠানের জন্য পাঁচ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে এখানে পাঁচ কোটি টাকাই খরচ হবে। খরচটা আরও অনেক কমের মধ্যেই হবে। বেশির ভাগ খরচ মূলত ৬৪ জেলা থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে এসে এক রাত থাকার ব্যবস্থা করায় যাবে। এখানে কোনো ধরনের সাজসজ্জা বা অতিরিক্ত খরচের ব্যবস্থা নেই। আর এটা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি। উপদেষ্টা বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, সব শহীদ পরিবারকে এক জায়গায় করা এবং তাদের থেকে আরও তথ্য পাওয়ার আছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ও আছে। সেটা খুব দ্রæতই হবে। অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি ও শহীদ মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে সেক্রেটারি করে গঠন করা হবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নিয়ে তিনি বলেন, এই ফাউন্ডেশনের সাত সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটার নিবন্ধন করা হয়েছে।

     


    আর অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ফাউন্ডেশনের সভাপতি। আর সেক্রেটারি হচ্ছেন মীর মাহবুবুর রহমান, তিনি শহীদ মুগ্ধর যমজ ভাই। কাজী ওয়াকার আহমেদ হচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ। দক্ষতার জন্য তাকে এই কাজে রাখা হয়েছে। উপদেষ্টাদের মধ্যে আছেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, নূরজাহান বেগম ও শারমিন মুর্শিদ। এতে আরও ১৪ জন সাধারণ সদস্য যোগ হবেন।

     

    উপদেষ্টা জানান, মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার বিভিন্ন কমিটিগুলো বাতিল করা হয়েছে এবং বাতিল করা কমিটি বা পরিচালনা বোর্ড (বাসস পরিচালনা বোর্ড, পিআইবি পরিচালনা বোর্ড, প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ড, সিরিয়াল/ধারাবাহিক/চলচ্চিত্র/প্যাকেজ প্রিভিউ কমিটি, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র/স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র/দেশি/বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানি/রপ্তানি/চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি, চলচ্চিত্র জুরি বোর্ড, ফিল্ম সেন্সর আপিল কমিটি, চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ইত্যাদি) পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে দপ্তর/সংস্থায় নিয়োগ করা চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে দপ্তর/সংস্থায় (বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার ইত্যাদি) কর্মরত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অন্যত্র পদায়ন করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশে হতাহত সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

     

    শহীদ আবু সাঈদসহ সব শহীদ ও শহীদি মার্চ নিয়ে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান মাইক্রোফোন নামক অনুষ্ঠানে অন্তবর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা শীর্ষক অনুষ্ঠান বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হয়েছে।

     

    বাংলাদেশ টেলিভিশনে ছাত্র-ছাত্রীদের ট্রাফিক কন্ট্রোল, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, দেয়ালে গ্রাফিতি, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপসানালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থান, বাজার নিয়ন্ত্রণে ছাত্র-ছাত্রীদের ভুমিকা ইত্যাদি বিষয়ে প্রামাণ্য ও ফিলার প্রচার করা হয়েছে।

    অন্তবর্তী সরকারের শপথ গ্রহণ, প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের সরকারি অনুষ্ঠানসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান সরাসরি স¤প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারকে নিয়ে ২০টি ফিচার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং অন্তবর্তী সরকারের কার্যক্রমভিত্তিক ৪১৯টি তথ্য বিবরণী ও স্কুল প্রচারসহ ১২ হাজার ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ছবি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনায় নেয়া হয়েছে। সে গুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারকে দক্ষ ও জনবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ছাত্র জনতা এবং তাদের পরিবারবর্গকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণপূর্বক বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার করা হবে। স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স¤প্রচার আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত নির্দেশিকার প্রয়োজনীয় সংশোধনঅন্তে প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য দপ্তর/সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামোর আইনি সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আইন, বিধি ও নীতিমালার প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোর যৌক্তিক সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

    ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক এর ডিজিটালাইজেশনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

     


    অনলাইন নিউজ পোর্টালের লাইসেন্স প্রদান নীতিমালা যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।


     

    বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের ৪টি শূন্য পদ পূরণ করা হবে। চলমান প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে সম্পাদনে কিংবা প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এর আয়বর্ধক কর্মসূচির জন্য বিজনেস সল্যুশন প্রোগ্রামের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন আইন, ১৯৫৭-কে যুগোপযোগী করা হবে।

     


    বাংলাদেশ বেতার থেকে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পথে শীর্ষক, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ ছাত্র-জনতাকে নিয়ে এপিসোড প্রচার করা হবে। বাংলাদেশ বেতারের অনিয়মিত শিল্পীদের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।


     

    পতিত সরকারের ২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত সকল দুর্নীতি, অনাচার, দমন-পীড়ন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, সা¤প্রতিক হত্যাযজ্ঞ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করবে।

     



    ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সকল শহীদের উপর পরিচিতি ভিত্তিক ডকুমেন্টারি নির্মাণ এবং দেওয়ালে অংকিত গ্রাফিতির উপর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর কর্তৃক অ্যালবাম তৈরি করা হবে।



     

    বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং রাষ্ট্র সংস্কার ভিত্তিক ফিচার প্রকাশ করা হবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য অংশীজনের ভ‚মিকা ভিত্তিক সেমিনার জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজন করা হবে।

    বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড কর্তৃক সেন্সর্ড অবস্থায় থাকা চলচ্চিত্রসমূহ নীতিমালা ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আইন ২০১৮ এর কতিপয় ধারা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর কতিপয় ধারা সংশোধন করে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

    Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

    আরও খবর

    Sponsered content