• লিড

    একমাত্র উপার্জনক্ষম সেলিমকে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা মা

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন :

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১:১৪:১৮ অনলাইন সংস্করণ

    ছিলেন বাবা মায়ের একমাত্র আদরের পুত্র সন্তান। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি।

     



    বিয়ে করেছেন বছরখানে হয়। স্ত্রী তিন মাসের অন্তসত্তা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর শুনে ঘরে বসে থাকতে পারেনি ঝালকাঠির নলছিটির সন্তান সেলিম তালুকদার (৩০)।



     

    আন্দোলনে অংশ নিয়ে ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন তিনি।

    আহত অবস্থায় ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে দীর্ঘ ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১ আগস্ট সকালে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। সেই সাথে ম্লান হয়ে যায় বাবা মায়ের স্বপ্ন। তিন মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী আছেন আগত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায়।

    সেলিম তালুকদার বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) এর ১৮১ ব্যাচে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড মার্চেন্ডাউজিং বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেন। ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন মাস্টার্সে। পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কোম্পানিতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনার পদে চাকরি করতেন। তারা তিন বোন, এক ভাই। তিনি ছিলেন মেজো। ঢাকায় কুমিল্লা পাড়া বাড্ডা লিংক রোডে তাদের বাসা। গত ১৮ জুলাই সকালে বাসা থেকে বাবা মা ও স্ত্রীকে না জানিয়েই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেন।

     


    ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সামনে এলাকায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের গুলি ছুড়লে মাথায়, বুকে, পিঠে ও ফুসফুসে গুলি লাগে তার। আহত হওয়ার খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল।


     

    পুলিশ কেসের ভয়ে কোন হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করতে রাজি হচ্ছিল না। ১২ ঘণ্টা এভাবেই গাড়িতে ঘুরে অবশেষে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেও ভর্তি করতে চাচ্ছিল না। অনেক অনুনয় বিনয় করে ভর্তি করেছি। ১৪ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পরে ১ আগস্ট সকালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। লাশ বাড়িতে আনতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সেলিমের পরিবারের। ময়না তদন্ত হয়নি সেলিমের লাশের। কিভাবে মারা গেছে তা কাউকে বলা যাবে না বলে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে লাশ গ্রামের বাড়ি নলছিটিতে আনা হয়। পরে ২ আগস্ট জানাজা শেষে তাকে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

     

    বাবা মায়ের আদরের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বাবা মা। সন্তানের ছবি বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। কারো সঙ্গে তেমন কোন কথা বলেন না তিন মাসের অন্তসত্তা স্ত্রী সুমি আক্তার।


     

    এ হত্যাকাÐের সাথে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেন তারা। এলাকাবাসীর চোখেও সেলিম তালুকদার ছিলেন শান্ত, নিরিহ ও ভদ্র ছেলে। তার মৃত্যুতে পুরো নলছিটিজুড়ে শোক বইছে। পুলিশের গুলিতে সেলিম তালুকদারের মৃত্যুর পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নলছিটি শহরের বাসস্ট্যান্ডে বিজয় উল্লাস ৭১ চত্বরকে শহীদ সেলিম তালুকদার স্মৃতি চত্বর নাম দেন। নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও সেলিমকে শহীদি মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

     



    স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, আমার আর বলার কিছু নেই। আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হারিয়েছি। আমার গর্ভে তিন মাসের সন্তান। এই সন্তানের বভিষ্যত নিয়ে এখন আমি চিন্তিত। আমার সন্তান তাঁর বাবাকে দেখবে না। এর চেয়ে আমার আর কষ্টের কি আছে। আমি সেলিম হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।



    সেলিমের মা সেলিনা বেগম বলেন, আমার সন্তান যখন ঘর থেকে বের হয়, আমি বলেছিলাম নাস্তা করে যেতে। ও নাস্তা না খেয়েই চলে যায়। পরে দুপুরে শুনি ওকে গুলি করেছে পুলিশ। হাসপাতালে গিয়ে লাশ খুঁজে পাই না। পরে একটি হাসপাতালে তাকে খুঁজে পাই। সেখানে ওর চিকিৎসা হচ্ছিল না।

     


    পুলিশ কেসের ভয়ে কোন হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করতে রাজি হচ্ছিল না। ১২ ঘণ্টা এভাবেই গাড়িতে ঘুরে অবশেষে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাই।


     

    সেখানেও ভর্তি করতে চাচ্ছিল না। অনেক অনুনয়বিনয় করে ভর্তি করেছি। ১৪ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পরে ১ আগস্ট সকালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। লাশ বাড়িতে আনতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আমাদের।

     



    পুলিশ আমাদের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে দিয়েছে। তাঁরা (পুলিশ) বলেছে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন, এমনিতেই মারা গেছে। গুলিতে মারা গেছে বলবেন না।


     

    বাবা সুলতান তালুকদার বলেন, ছেলেকে হারিয়ে আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষত ব্যক্তি ছিল সে। আমি এখন বুড়ো হয়ে গেছি। কোন কাজ করতে পারি না। সংসার কে চালাবে, তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছি। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পরে ওর স্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে জানতে পানি সে অন্তসত্তা। তিন মাস হয়ে গেছে। সেলিমের আগত সন্তানের বভিষ্যত নিয়েও আমাদের চিন্তা হচ্ছে। কিভাবে এই ছেলেকে বাবা ছাড়া মানুষ করবো, তা ভাবছি।

    আরও খবর

    Sponsered content