• লিড

    আ’ লীগ সরকারের সময়ের বকেয়া ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের অনুরোধ আদানি গ্রুপের

      ভাটি বাংলা ডেস্ক: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১২:৪৭:০১ অনলাইন সংস্করণ

    আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে এরইমধ্যে দিল্লি দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।

    বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকালে ২৫ বছর মেয়াদি যে বিদ্যুৎ চুক্তি করেছে সেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে ভারত সরকার।

    কারণ এটি ছিল স্বাভাবিকের থেকে বেশি দামে কয়লা কিনে আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনা। যা ছিল বাংলাদেশের জন্য বড় লোকসানের। একই সঙ্গে নিম্নমানের কয়লার দাম অতিরিক্ত হওয়া নিয়ে ইতোমধ্যে অডিট আপত্তি উঠেছে।

    দীর্ঘদিনে এর সুরহা না হলেও আদানি তার কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে অর্থনৈতিক চুক্তি না বলে রাজনৈতিক চুক্তি বলে আসছিলেন। কিন্তু ভারতে পলায়নকারী শেখ হাসিনা নিজের স্বার্থেই এই চুক্তি করেছিলেন বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

    ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে জানা যায়, ভারত সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এমন সম্পর্ক বজায় রাখা যাতে করে অন্তত যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিলের খাতায় না যায়। এর মধ্যে আগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি। শুরু থেকেই আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে দেশের নানা পর্যায়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বিশেষ করে স্বাভাবিকের থেকে বেশি দামে কয়লা কিনে আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাংলাদেশের জন্য বড় লোকসান বলে দাবি করেছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন,

     



    এটাকে অর্থনৈতিক চুক্তি না বলে রাজনৈতিক চুক্তি বলা শ্রেয়। কোনো রকমের দরপত্র আহ্বান না করে এই চুক্তি করা হয়েছিল। এই চুক্তি অনুসারে ২৫ বছর ধরে প্রতি মাসে বাংলাদেশ ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিত আদানি পাওয়ার লিমিটেডের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৯ কোটি ডলারের বিদ্যুৎ কিনবে। ভারতের সঙ্গে অন্য যেকোনো চুক্তিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ছিল ৭ টাকার কম। কিন্তু আদানি গ্রুপে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১২ টাকার বেশি।



     

    ভরতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করে এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, চলমান চুক্তি নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে আগামী দিনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন হবে এটির ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু। নতুন চুক্তির থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিগুলো সচল রাখাই ভারতের বর্তমানে মুখ্য উদ্দেশ্য।

    কোনো চুক্তি বাংলাদেশের বিপক্ষে গেলে এখন সেটি থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ভূগোল বিভাগের প্রফেসরক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, এ ধরনের চুক্তি প্রকাশ না করার কারণে এর ফাঁকফোকর কিছুই জানা জায়নি। যদি চুক্তির ভেতরে এমন কোনো সুযোগ থেকে থাকে তাহলে বাংলাদেশ সেটি কাজে লাগাতে পারে।

    আর যদি চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার কোনো সুযোগ না থাকে তাহলে দুই দেশের সম্মতিতে মীমাংসার মাধ্যমে বের হয়ে আসা যায়। তবে বাংলাদেশ যদি মনে করে এই চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থহানি ঘটাচ্ছে তাহলে মামলা পর্যন্ত করতে পারে। তবে সেদিকে যাওয়া অনেকটাই ঝামেলাপূর্ণ বলে মনে করেন এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।

     

    এদিকে বাংলাদেশকে বকেয়া ৮০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ। সেই সঙ্গে বকেয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশকে গড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

     

    ভারতীয় মিডিয়া মানি কন্ট্রোলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রুপটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে।

     

    আদানি গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে, কারখানা নির্মাণের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণদাতারা তাদের চাপ দিচ্ছে। বিলম্বের কারণে অর্জিত সুদসহ শিগগিরই অর্থ পরিশোধ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে গ্রুপটি। এ বিষয়ে জানতে মানিকন্ট্রোল আদানি গ্রুপকে ই-মেইল পাঠিয়েও কোনো উত্তর পায়নি।

    ভারতের ঝাড়খণ্ডের ১৬০০ মেগাওয়াট গড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানি পাওয়ার।

    প্রতিমাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ আদানি গ্রুপকে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিতে হয় বাংলাদেশের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ২০১৭ সালের নভেম্বরে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করা হয়।

    আরও খবর

    Sponsered content