ভাটি বাংলা ডেস্কঃ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:৪২:৩৪ অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মরহুম গোলাম আযমের মেজো ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, আমাকে দুইটা কারণে আটকে রাখা হয়েছে।
সেগুলো হলো, আমার পৈতৃক পরিচয় এবং আমি ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। আমি সব প্রতিবেশি বন্ধু চাই। যে বন্ধু আমার ক্ষতি করে, তাকে শত্রু ছাড়া আমি বন্ধু ভাবতে পারি না। ভারত যতদিন বন্ধুসুলভ আচরণ করবে ততদিন আমি বুকে জড়িয়ে ধরব, ভারত যদি শত্রুর মত আচরণ করে তাহলে আমি তাকে শত্রুই ভাবব এবং শত্রু বলে যাবো।
গুপ্ত বন্দিশালাতে থাকাকালীন আমাকে একজন বলেছে, আপনি বিদেশী শক্তির গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। এই কারণে আমাকে বার বার প্রশ্ন করা হয়েছে আপনি ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার কেন।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে তিনি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
দীর্ঘ আট বছর গুপ্ত বন্দিশালা আয়নাঘরে থাকাবস্থায় দাঁত, চোখসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। সেই সুবাধে রাধানীতির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই হাসপাতাল থেকেই যুক্ত হন সংবাদ সন্মেলনে।
যুক্ত হয়েই তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ, আহত ও ছাত্র-জমনতার আন্দোলনের যারা আহত, নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শোক, কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। সেইসাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদে প্রকৃত সংখ্যা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। দাবি তোলেন, জাতীয় সঙ্গীত ও সংবিধান পরিবর্তনের।
তিনি বলেন, আমি এই জাতীয় সঙ্গীত এই সরকারের ওপর ছেড়ে দিলাম। আমাদের এখন যে জাতীয় সঙ্গীত রয়েছে সেটি আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের পরিপন্থী। এটা দুই বাংলা এক করার জন্য বঙ্গভঙ্গ রদের সময়কে উপস্থাপন করে।
যে সঙ্গীত দুই বাংলা এক করার জন্য করা হয় সেটা কিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতে পারে? এই সঙ্গীত ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের ওপরে চাপিয়ে দিয়েছিল।
জাতীয় সঙ্গীত করার জন্য অনেক গান রয়েছে। এই সরকারের উচিত একটা নতুন কমিশন গঠন করে একটি নতুন জাতীয় সঙ্গীত তৈরি করা।
ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সদরদফতরে বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বদলা চেয়েছেন সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী।
আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, কোরআনে আছে খুনের বদলে খুন। আমি তদন্ত করে বিচারের আহ্বান জানাই। বিগত সরকারের আমলে যারা তদন্ত করেছে তারা যদি দায়সারা ভাবে করে…।
তিনি বলেন, দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নতুন সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আযমী বলেন, ‘যখন আমার বাসায় তারা এলো, তখন তাদের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনারা কারা, পরিচয় কী, পরিচয়পত্র দেখান। তারা আমার কথার জবাব দেননি। আমি বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি, তারা কোনো কথার জবাব দেননি। এক অফিসার আমাকে তুই করে সম্বোধন করে। আমার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে আমাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে নিয়ে চোখ বেঁধে দেয়।’
তিনি বলনে, ‘আমি ফিরে এসে জানতে পারলাম, আমার পরিবারের ওপর তারা কী পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে! আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে চেয়েছিল তারা! এক পর্যায়ে আমার স্ত্রীকে তুলে নিতে চাইলে স্ত্রী আমার মাকে সাথে নিতে বলে, তখন তারা তাকে নেয়নি। এ সময় আমার বাড়ির যুবতী কাজের মেয়ের ওপর হাত চালিয়েছে। বাসার ম্যানেজার ও দারোয়ানসহ সবার ওপর তারা হামলা চালায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় একটা জায়গায় নিয়ে গেল। তারা আমাকে পোশাক দিলো। রাতে আমাকে খাবার দেয়। কিন্তু খাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলাম না। টয়লেট যেতে চাইলে তারা আমার চোখ-হাত বেঁধে নিয়ে যেত। প্রায় ৫০ কদম হাঁটার পর টয়লেটে যেতাম।’
সাবেক ব্রিগেডিয়ার বলেন, ‘বার বার মনে হতো, তারা হয়ত আমাকে ক্রসফায়ার করে হত্যা করবে। আমি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে শুধু কান্না করতাম, আল্লাহ আমার লাশটা যেন কুকুরদের খাদ্যে পরিণত না হয়। আমার লাশটা যেন আমার পরিবারের কাছে যায়। সব সময় এ দোয়াটাই করতাম।’
উল্লেখ্য, আট বছর পর গত ৬ আগস্ট আয়নাঘর থেকে মুক্ত হন সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মরহুম গোলাম আযমের মেজো ছেলে।
২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিবাগত রাতে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে আটক করা হয়। ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে গোলাম আযমের প্রবাসী আরেক ছেলে এ অভিযোগ করেন। জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে আমান আযমীকে আটকের অভিযোগ করে বলা হয়, সে দিন রাত ১২টার দিকে ঢাকার বড় মগবাজারের বাসা থেকে তাকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আটক করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয়া হয়। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এরপর থেকে একাধিকবার দাবি করা হলেও সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়।